Durga Puja 2025

ব্যুরো নিউজ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : দুর্গাপূজা ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি উৎসব, যা বিশ্বাস, সংস্কৃতি, আচার এবং ঐতিহ্যের এক অনবদ্য মিশ্রণ। এই বছর দুর্গাপূজা শুরু হচ্ছে ২৮শে সেপ্টেম্বর এবং শেষ হবে ২রা অক্টোবর। এই দিনগুলো জুড়ে চলে প্রার্থনা, সঙ্গীত, আলো আর নানা পবিত্র আচার-অনুষ্ঠান। এই উৎসবের মহিমাকে আরও উজ্জ্বল করে তোলে এর প্রধান প্রধান রীতিনীতিগুলো।

 

পূজার সূচনা: বিল্ব নিমন্ত্রণ থেকে বোধন

দুর্গাপূজার প্রথম প্রধান আচারটি হল বিল্ব নিমন্ত্রণ। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেবী দুর্গাকে বেল গাছে আহ্বান জানানো হয়, যা দেবীর মর্ত্যলোকে আগমনের প্রতীক। বেল পাতা হিন্দু ঐতিহ্যে গভীর তাৎপর্য বহন করে, তাই দেবীকে সম্মান জানাতে বেল পাতা অর্পণ করা হয়। কালিকাপুরাণ অনুযায়ী, একদা ব্রহ্মা বেল পাতার রূপ ধারণ করে ভগবান রামকে রাবণের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সাহায্য করার জন্য দেবীকে আহ্বান করেছিলেন। এই পবিত্র আচারটি সাধারণত মহা ষষ্ঠী-তে অনুষ্ঠিত হয়।

ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় বোধন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। পৌরাণিক বিশ্বাস অনুযায়ী, রাবণের সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর আগে ঐশ্বরিক শক্তি লাভের জন্য ভগবান রাম এই শরৎকালীন পূজার সূচনা করেছিলেন। বোধনের মাধ্যমে দেবীকে আনুষ্ঠানিকভাবে আহ্বান করা হয়, যা পূজার সমস্ত আচার-অনুষ্ঠান সঠিক প্রথায় সম্পন্ন হওয়ার নিশ্চয়তা দেয়।

Durga Puja : অকাল বোধন: কেন শরৎকালে পালিত হয় দুর্গা পূজা?

নবপত্রিকা স্থাপন ও পুষ্পাঞ্জলি

সপ্তমী-র সকালে নবপত্রিকা (নয়টি গাছ) নদীর জলে, বিশেষ করে কলকাতার গঙ্গায়, স্নান করানো হয়। কলা গাছের সঙ্গে এই নয়টি গাছ একসাথে বেঁধে শাক্তমতে দেবীর নয়টি রূপকে প্রতীকী রূপ দেওয়া হয়। এই আনুষ্ঠানিক স্নানের পর নবপত্রিকাকে একটি শাড়ি পরিয়ে ভগবান গণেশের পাশে স্থাপন করা হয়। কলা গাছের প্রাধান্যের কারণে এই আচারটি কলা বউ স্নান নামেও পরিচিত। এটি বাঙালি সমাজের কৃষিভিত্তিক ঐতিহ্যের এক প্রতিফলন, যেখানে প্রকৃতি ও ফসলের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ পায়।

সপ্তমী, অষ্টমী এবং নবমী-তে ভক্তরা পুষ্পাঞ্জলি বা ফুল অর্পণের ভক্তিপূর্ণ কাজ করে। নতুন পোশাকে সজ্জিত ভক্তরা উপবাস থেকে, মন্ত্র উচ্চারণের সাথে সাথে পুরোহিতের নির্দেশে অঞ্জলি ভরে ফুল ও বেল পাতা দেবীকে অর্পণ করেন।

 

অষ্টমী ও সন্ধিপূজার মাহাত্ম্য

অষ্টমী-তে কুমারী মেয়েদের কুমারী পূজা-র মাধ্যমে জীবন্ত দেবী রূপে আরাধনা করা হয়। পবিত্রতা এবং দেবত্বের প্রতীক এই কুমারীদের নতুন পোশাকে ও ফুলে সজ্জিত করে পূজার সময় দেবীর পাশে বসানো হয়।

অষ্টমী ও নবমী-র সন্ধিক্ষণে সন্ধিপূজা অনুষ্ঠিত হয়, যা পূজার অন্যতম শক্তিশালী আচার হিসেবে বিবেচিত। এটি সেই মুহূর্তের স্মারক, যখন দেবী তাঁর ভয়ঙ্কর চামুণ্ডা রূপ ধারণ করে চণ্ড এবং মুণ্ড অসুরকে বধ করেছিলেন। এই সময়ে ১০৮টি প্রদীপ জ্বালানো হয়, পুরোহিতরা মন্ত্র উচ্চারণ করেন এবং ঢাকিরা তীব্র বাদ্য বাজায়, যা ভক্তি ও শক্তিতে এক চমকপ্রদ পরিবেশ তৈরি করে।

Durga Puja : দুর্গার রহস্যময় চৌষট্টি যোগিনী কেন আজও প্রাসঙ্গিক ?

বিজয়ার পথে: ধুনুচি নাচ থেকে সিঁদুর খেলা

নবমী-র সন্ধ্যাগুলো ধুনুচি নাচ-এর প্রাণবন্ত আয়োজনে মুখরিত হয়ে ওঠে। ভক্তরা ধূপ ভর্তি মাটির পাত্র হাতে নিয়ে ঢাকের তালে তালে নাচেন। কেউ কেউ ধুনুচি মাথায় বা দাঁতে ধরে ভারসাম্যের এক অসাধারণ কৌশল প্রদর্শন করে, যা বিশ্বাস এবং আনন্দের এক বিশেষ দৃশ্য তৈরি করে।
দশমী-তে দেবীকে বিদায় জানানোর প্রস্তুতি চলে, আর বিবাহিত মহিলারা সিঁদুর খেলা-য় মেতে ওঠেন। প্রথমে তাঁরা দেবীকে সিঁদুর ও মিষ্টি অর্পণ করেন এবং এরপর একে অপরের মুখে সিঁদুর লাগিয়ে দেন, যা দাম্পত্য সুখ ও সমৃদ্ধির প্রতীক।
দেবীর বিদায়কে চিহ্নিত করে বিসর্জন, যেখানে প্রতিমাকে এক জাঁকজমকপূর্ণ শোভাযাত্রার মাধ্যমে নদী বা জলাশয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, যা দেবীর কৈলাস পর্বতে ফিরে যাওয়ার প্রতীক।

সবশেষে, উৎসবের সমাপ্তি ঘটে বিজয়া দশমী-র মাধ্যমে, যা ভালোবাসা এবং মিষ্টি বিনিময়ের সময়। পরিবারের সদস্যরা একে অপরের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন, ছোটরা বড়দের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে আশীর্বাদ নেয় এবং বন্ধুরা কোলাকুলি করে। নাড়ুর মতো ঐতিহ্যবাহী মিষ্টির বিশেষ স্থান থাকে; বিজয়ার মূল তাৎপর্য হল একতা, ক্ষমা এবং নতুন সূচনার অঙ্গীকার।

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর