ব্যুরো নিউজ,৩০ জানুয়ারি :যখন একটি কোম্পানি তার শেয়ারহোল্ডারদের লাভের অংশ হিসাবে ডিভিডেন্ড দেয়, তখন সেই আয়ের পুরোটা আপনার হাতে আসেনা। সরকারের একটি অংশ এই আয়ের উপর ট্যাক্স নেয়। ২০২০ সালের আগে, এই ট্যাক্সকে বলা হত ডিভিডেন্ড ডিস্ট্রিবিউশন ট্যাক্স (DDT), এবং এটি কোম্পানির পক্ষ থেকে পরিশোধ করা হতো, শেয়ারহোল্ডারের নয়।DDT সিস্টেমে, কোম্পানিগুলো ডিভিডেন্ডের পরিমাণের ওপর একটি ফ্ল্যাট ট্যাক্স রেট পরিশোধ করতো, তারপরে শেয়ারহোল্ডারদের বাকি টাকাটা দেয়া হতো। এই সিস্টেমের সুবিধা ছিল যে, শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ট্যাক্স কমপ্লায়েন্স সহজ ছিল, কিন্তু এতে অনেক সময় বেশী ট্যাক্সের বোঝা পড়ত, কারণ DDT সব শেয়ারহোল্ডারের জন্য একটি নির্দিষ্ট হার হিসেবে নির্ধারিত ছিল, যেটি আয় স্তরের ভিত্তিতে পরিবর্তিত হতো না।
FRBM আইনঃ সরকারের আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন
DDT সিস্টেমে কী পরিবর্তন এসেছে?
২০২০ সালে ভারত DDT সিস্টেমটি বাতিল করে, এবং ট্যাক্সের দায় শেয়ারহোল্ডারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এখন ডিভিডেন্ড শেয়ারহোল্ডারের আয়কর স্ল্যাব অনুসারে ট্যাক্স করা হয়। এর মানে হলো:
- উচ্চ আয়ের ব্যক্তিরা বেশি ট্যাক্স দেবেন: যদি আপনি উচ্চ আয়ের শ্রেণিতে পড়ে থাকেন, তাহলে আপনার ডিভিডেন্ড আয়ও আপনার সাধারণ আয়কর হারের সাথে ট্যাক্স হবে।
- ডিভিডেন্ডের ওপর TDS: কোম্পানিগুলো যদি এক বছর ধরে ₹৫,০০০ এর বেশি ডিভিডেন্ড দেয়, তাহলে ১০ শতাংশ TDS কেটে নেবে। যদি আপনার মোট ট্যাক্স দায় বেশি হয়ে থাকে, তাহলে আপনাকে ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন ফাইল করার সময় বাকি টাকা পরিশোধ করতে হবে।
- ডাবল ট্যাক্সেশন নেই: আগে, কোম্পানিগুলো DDT পরিশোধ করতো, এবং তারপর শেয়ারহোল্ডারদেরকে ডিভিডেন্ডের ওপর আবার ট্যাক্স দিতে হতো। নতুন সিস্টেমে এই ডাবল ট্যাক্সেশন আর নেই।
এর আপনার উপর কী প্রভাব পড়বে?
- উচ্চ আয়ের ব্যক্তিরা: যদি আপনি ৩০% ট্যাক্স ব্র্যাকেটে পড়েন, তাহলে এখন আপনার ডিভিডেন্ডে অনেক বেশি ট্যাক্স দিতে হবে, যা আপনার বিনিয়োগ থেকে কম পোস্ট-ট্যাক্স রিটার্ন দেবে।
- কম আয়ের ব্যক্তিরা: যদি আপনি কম আয় করেন, তাহলে এখন আপনার ডিভিডেন্ড আয়ের ওপর কম ট্যাক্স দিতে হবে, কারণ পূর্বে যে ফ্ল্যাট DDT হার ছিল, তা এখন কম ট্যাক্সের মাধ্যমে পরিশোধ করা হবে।
- বিনিয়োগের পরিকল্পনা করুন: ডিভিডেন্ড এখন সাধারণ আয়ের মতো ট্যাক্স হবে, ফলে কিছু বিনিয়োগকারী গ্রোথ-ফোকাসড মিউচ্যুয়াল ফান্ড বা স্টক পছন্দ করেন, যেগুলো লাভ পুনঃবিনিয়োগ করে ডিভিডেন্ড বিতরণ না করে।
কেন DDT সিস্টেমটি বাতিল করা হয়েছিল?
DDT সিস্টেমটি অনেক সমালোচিত হয়েছিল, কারণ এটি সবার জন্য এক রকম ট্যাক্স ধার্য করতো, আয় স্তরের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল না। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্যও এটি সমস্যা তৈরি করেছিল, কারণ তারা একাধিকবার ট্যাক্স দিতে বাধ্য হতো। শেয়ারহোল্ডারদের হাতে ট্যাক্সের দায়িত্ব দিয়ে সরকার একটি আরো ন্যায্য সিস্টেম তৈরি করেছে, যা বৈশ্বিক অভ্যাসের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
বাজেটে কী আশা করা যেতে পারে?
যেহেতু DDT এখন আর নেই, বাজেটে TDS রেট, ছাড় বা ডিভিডেন্ডের ট্যাক্স সম্পর্কিত কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, TDS এর থ্রেশহোল্ড বৃদ্ধি করা বা ডিভিডেন্ড আয়ের ওপর কম ট্যাক্স রেট চালু করা হতে পারে, যা আপনার বিনিয়োগ কৌশলকে প্রভাবিত করতে পারে।
ডিভিডেন্ড আয়ের মাধ্যমে লাভ করা একটি চমৎকার প্যাসিভ ইনকাম উৎস হতে পারে, কিন্তু ট্যাক্স তার অংশ কাটে। ডিভিডেন্ডের ট্যাক্স কীভাবে প্রযোজ্য হয় তা বুঝে এবং আপনার বিনিয়োগের কৌশল সঠিকভাবে পরিকল্পনা করে, আপনি নিশ্চিত করতে পারেন যে আপনার টাকা আপনার জন্য আরও কার্যকরীভাবে কাজ করছে।