চক্রবাকাসন

ব্যুরো নিউজ, ৯ জানুয়ারি:আমরা অনেকেই জানি যে একটানা চেয়ারে বসে কাজ করতে গিয়ে কোমর, পিঠ এবং ঘাড়ে ব্যথা হওয়া একটি সাধারণ সমস্যা। বেশিরভাগ সময়, এই ধরনের ব্যথা দিনযাপন বা কাজের চাপের কারণে বাড়তে থাকে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এমন ব্যথা থাকলে তা অস্থিসন্ধি বা পেশির নমনীয়তা নষ্ট করে দিতে পারে, এবং কখনও কখনও এটি কোমর থেকে ঘাড় পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে। এই সমস্যায় একাধিক মানুষ বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসার শরণ নেন, যেমন গরম সেঁক, মলম অথবা ওষুধের ব্যবহার। তবে এগুলোর উপকারিতা সাধারণত সাময়িক হয় এবং বেশিরভাগ সময় পরবর্তীতে আবার ব্যথা ফিরে আসে।

হাঁটুর ব্যথায় ভুগছেন? একটা আসন রোজ করলেই দৌড়বেন আপনি 

কোন আসন?

তবে যোগব্যায়াম বিশেষজ্ঞরা এক বিশেষ আসনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন, যেটি নিয়মিত অনুশীলন করলে এমন সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। সেটি হল চক্রবাকাসন।চক্রবাকাসন আসনটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ ‘চক্রবাক’ থেকে, যা ইংরেজিতে ‘রাডি গুজ় পোজ়’ নামেও পরিচিত। এই আসনের নাম থেকেই বুঝে নেওয়া যায়, এর ভঙ্গিটি কেমন হতে পারে। আসনটি করতে গেলে আপনার শরীরের ভঙ্গি অনেকটা রাজহাঁস বা ‘রাডি গুজ়’-এর মতো দেখতে হবে।

শরীর ফিট রাখার জন্য করুন এই আসন, জানুন পদ্ধতি এবং তার উপকারিতা

কীভাবে করবেন চক্রবাকাসন?

১) প্রথমে টেবিল টপ পোজ নামে পরিচিত ভঙ্গিতে ম্যাটের উপর বসুন। অর্থাৎ হামাগুড়ি দেওয়ার মতো অবস্থান নিন। আপনার শরীরের ভার হবে হাতের তালু এবং হাঁটুর উপর।

২) পা এবং হাঁটুর অবস্থান দেখতে পাবেন যে, এগুলি উল্টো ইংরেজি ‘এল’ অক্ষরের মতো থাকবে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখুন এবং চোখ মাটির দিকে রাখুন।

৩) এরপর, দু’টি হাত সোজা রেখে হাঁটু ভাঁজ করুন এবং গোড়ালির উপর বসুন। আপনার গ্রীবা টান টান থাকবে এবং মাথা মাটিতে ঠেকে থাকবে। দুই হাঁটু বুকের কাছে চলে আসবে।

ঋতুস্রাব এর যে কোন সমস্যা দূর করতে আজই শুরু করুন এই আসন

৪) এই অবস্থানে ১০ থেকে ১৫ সেকেন্ড অবস্থান করুন এবং তারপর প্রথম অবস্থানে ফিরে আসুন। একবার ওঠার পর পুনরায় বসলে একটি রাউন্ড সম্পূর্ণ হবে।

৫) এই আসন অন্তত পাঁচবার করুন।

৬) আসনটি করার সময় বিশেষভাবে নজর দিন আপনার শ্বাস-প্রশ্বাসের উপর। শ্বাস নিতে নিতে হামাগুড়ি, অর্থাৎ ‘টেবিল টপ’ পোজ থেকে পিঠ, কোমর, নিতম্ব টেনে পায়ের উপর বসুন। শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে আবার টেবিল টপ পোজ-এ ফিরে যান।

বদ্ধকোণাসনঃ শরীর চাঙ্গা ও রোগ প্রতিরোধে এক কার্যকরী যোগব্যায়াম

চক্রবাকাসন কেন করবেন?

১) মন শান্ত করে – এই আসনটি মনকে শান্ত করতে সাহায্য করে, ফলে আপনি কাজের চাপ কিংবা অন্যান্য অস্থিরতা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

২) রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয় – এই আসন রক্ত সঞ্চালনের প্রক্রিয়া উন্নত করতে সাহায্য করে, যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের সঠিক কার্যক্রমে সহায়ক।

৩) মেরুদণ্ড সচল থাকে – পিঠের হালকা ব্যথা কমানোর পাশাপাশি, এটি মেরুদণ্ডকে সচল রাখে।

৪) পেশির নমনীয়তা বৃদ্ধি পায় – বিশেষভাবে ঘাড়, কাঁধ, পিঠ ও কোমরের পেশির নমনীয়তা বৃদ্ধি পায়। ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা কমে আসে।

দিল্লি মেট্রোতে যোগব্যায়াম: ভাইরাল ভিডিও নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক

৫) শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে অঙ্গ সঞ্চালনের সংযোগ তৈরি হয় – এই আসনে শ্বাস-প্রশ্বাসের উপর নজর রাখা হয়, যা দেহের অঙ্গ সঞ্চালনের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে সাহায্য করে।

সতর্কতা:

১) যদি আপনার ঘাড়, পিঠ বা শিরদাঁড়ায় কোনও আঘাত থাকে, তবে এই আসনটি করা উচিত নয়।

২) যদি হাঁটুতে ব্যথা থাকে, তবে আপনি বেশি ক্ষণ ‘টেবিল টপ’ ভঙ্গিতে থাকতে পারবেন না।

৩) ভার্টিগো, স্পন্ডিলোসিস বা স্পন্ডিলাইটিস রোগ থাকলে, এই আসনটি করতে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করুন।

চক্রবাকাসন একটি কার্যকর যোগব্যায়াম যা দৈনন্দিন জীবনে বসে কাজ করা, পিঠ বা কোমরের ব্যথা কমানোর জন্য অত্যন্ত সহায়ক হতে পারে। তবে, আসনটি করার সময় সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করা এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতা মেনে চলা জরুরি।

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর