ব্যুরো নিউজ,৮ সেপ্টেম্বর:সিবিআই আধিকারিকেরা আরজি কর হত্যাকাণ্ডের তদন্তভার পাওয়ার পর থেকেই মৃতা তরুণী চিকিৎসকের বাবা-মা কে বারবার জিজ্ঞেস করছেন যে তারা তাদের মেয়ের মৃত্যুর সম্পর্কে কাউকে সন্দেহ করছেন কিনা। মৃতা তরুণী চিকিৎসক চেস্ট মেডিসিনের পড়ুয়া ছিলেন। তাই ফুসফুসের সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের ওপর গবেষণা করছিলেন তিনি । সেই গবেষণা তার প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ “এথিক্স কমেটিতে” পাস হয়েছিল। ওই গবেষণা পত্রের একটি সংক্ষিপ্ত আকার স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছিল কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অনুমতির জন্য।বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাড়পত্র এসেছিল বলে সূত্রের খবর। আরজিকর মেডিকেল হাসপাতালের মৃতা তরুণী চিকিৎসকের ওই শেষ না হওয়া গবেষণা পত্র তদন্তের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে বলে সিবিআই সূত্রের দাবি।
আরজি কর হত্যাকান্ডের ভোরবেলা রক্তের দাগ ধুতে জুনিয়ার ডাক্তারের স্নান
মৃতা তরুণী চিকিৎসকের বাবা মা কি জানলেন?
এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। তদন্তভার পাওয়ার পর সিবিআই আধিকারিকেরা মৃতা তরুণী চিকিৎসকের বাবা মাকে বারবার জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং জানতে চান যে তার মেয়ের হত্যার পেছনে কাউকে তারা সন্দেহ করছেন কিনা। সূত্রের দাবি এর উত্তরে মৃতা তরুণী চিকিৎসকের বাবা-মা জানান তার মেয়ের শেষ না করতে পারা গবেষণাপত্রের কথা। তারা জানান যে জোর করে তার মেয়ের কাছ থেকে গবেষণাপত্র অন্য কাউকে দিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ করেন মৃতা তরুনী চিকিৎসকের বাবা-মা। মৃতার বাবা সিবিআই আধিকারিকদের জানান গবেষণাপত্রের বিষয়টা । সবসময় তাদের মেয়ের গবেষণাপত্রের বিষয়টা ভাবাচ্ছে।মৃতা তরুণী চিকিৎসক তার বাবা-মাকে জানিয়েছিলেন যে তার লেখা থিসিস পেপার অর্থাৎ গবেষণাপত্র অন্য একজনকে দিয়ে দিয়েছেন ভিপি অর্থাৎ ভিজিটিং প্রফেসর। তার বাবা-মা মেয়েকে ঝামেলায় জড়াতে বারণ করে বলেন আরেকটি থিসিস পেপার বানিয়ে নিতে। তারপর মৃতার বাবা বলেন “প্রথমে কিছু মনে হয়নি। আমার মেয়ে পড়াশোনায় যেমন ভাল ছিল ,তাতে নতুন পেপার করা ওর জন্য কোন ব্যাপার নয়। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে , কি উদ্দেশ্যে এটা করা হতে পারে? তবে কি কারো নিশানায় পড়ে গিয়েছিল মেয়ে?”
টানা সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা ধরে চললো দুই তৃণমূল নেতার লড়াই
মৃতা তরুণী চিকিৎসকের এক সহপাঠী জানান “কোন বিষয়ে গবেষণা করতে চাইছি সেই বিষয়ে ভেবে নিয়ে লিখিত আকারে জানাতে হয়। যে বিভাগের সঙ্গে যুক্ত রয়েছি, তারই কোন অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর বা প্রফেসর বিষয়টি শোনেন। ভিজিটিং প্রফেসর বা ভিপি হিসেবে এরপর তার অধীনে গবেষণা পত্র লিখতে হয়। তার আগে বিষয় লিখে হাসপাতালের এথিক্স কমিটির কাছে পাঠাতে হয় । কারণ রোগীর উপরে কোন ধরনের পরীক্ষা করতে হবে সেটাও জানাতে হয় এথিক্স কমিটিকে । বিষয়টি পাশ হয়ে গেলে গবেষণাপত্রের সারমর্ম সংক্ষিপ্ত আকারে লিখে স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে হয়।সেখান থেকে ছাড়পত্র চলে এলে শুরু হয় বিস্তারিত মূল কাজ”। মৃতা ওই তরুণী চিকিৎসক কিন্তু এই সমস্ত স্তরই পেরিয়ে গিয়েছিলেন বলে সূত্রের খবর। তারপর কি হয়েছিল সিবিআই জানতে চাইলে মৃতা তরুণী চিকিৎসকের সহপাঠী এবং এক বন্ধু জানান ‘দ্বিতীয় বর্ষের মাঝামাঝি সময় হয়ে গিয়েছে বলে কাজ অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিল ওর গবেষণাপত্রের।’ এরই মধ্যে হঠাৎ ভি পি ওকে ডেকে বলেন ‘তুই অন্য একটা বানিয়ে নিস। এই বিষয়টি ভালো। ওকে (মৃতা যে বর্ষের পড়ুয়া ছিলেন সেই বছরই আর একজনের নাম করে) দিয়ে দিচ্ছি ।’ স্বাভাবিকভাবেই ভেঙে পড়েছিলেন ওই মৃতা তরুণী চিকিৎসক।
এর পরিপ্রেক্ষিতে উঠে আসছে হাজারো প্রশ্ন।কার নির্দেশে এরকম করা হয়েছিল ?কেন এমন করা হয়েছিল? গবেষণা পত্র অন্য কাউকে দিয়ে দেওয়ার পর মৃতা তরুণী চিকিৎসক কি কোন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন? গবেষণা পত্রের কারণেই কি এই পরিণতি? উত্তরের অপেক্ষায় সিবিআই।মৃতা তরুণী চিকিৎসকের এক বিশেষ বন্ধু জানিয়েছেন “প্রভাবশালী একজনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ একটি ছেলে নানা কল কাঠি নেরেছে। নানা দিক দিয়ে প্রভাব খাটিয়ে চাপ তৈরির চেষ্টা করেছে। এর প্রতিবাদ করার খেসারত দিতে হলো কিনা সেটা তদন্ত করে বের করা হোক”।