ব্যুরো নিউজ ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : কলকাতায় পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সদর দফতরে ভাঙচুরের ঘটনায় পাঁচ দিন পলাতক থাকার পর অবশেষে গ্রেপ্তার হলেন বিজেপি নেতা রাকেশ সিং। মঙ্গলবার রাতে ট্যাংরা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এই ঘটনায় রাজনৈতিক মহলে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়েছে।
গ্রেপ্তার ও আইনি পদক্ষেপ
পুলিশ সূত্রে খবর, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে মঙ্গলবার রাতে ট্যাংরা এলাকার একটি ফ্ল্যাট থেকে রাকেশ সিংকে গ্রেপ্তার করা হয়। বুধবার তাকে শিয়ালদহ আদালতে তোলা হবে। কলকাতা পুলিশের দায়ের করা এফআইআর অনুযায়ী, রাকেশ সিং এবং আরও চারজনের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইন (Arms Act), জাতীয় সম্মানের অবমাননা প্রতিরোধ আইন (Prevention of Insults to National Honour Act) এবং ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (BNS)-এর বিভিন্ন ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।
ঘটনার বিবরণ
গত শুক্রবার সকালে একদল লোক, যাদের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ রাকেশ সিং, বিজেপি’র পতাকা হাতে কংগ্রেসের রাজ্য দফতরে ঢুকে পড়ে। তারা সেখানে ভাঙচুর চালায়, কংগ্রেস নেতাদের ছবিতে আগুন লাগিয়ে দেয় এবং দলীয় পতাকা পুড়িয়ে দেয়। ঘটনার সময় দফতরে কেউ উপস্থিত ছিলেন না। এন্টালি থানায় রাকেশ সিং এবং বিজেপি নেতা প্রতীক পান্ডের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়।
প্রতিশোধের কারণ
ধারণা করা হচ্ছে, এই ভাঙচুরের ঘটনাটি বিহারের দ্বারভাঙ্গায় গত ২৭শে আগস্ট ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার প্রতিশোধ। সেখানে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’ চলাকালীন কংগ্রেসের মঞ্চ থেকে এক ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তার প্রয়াত মায়ের বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্য করেছিলেন। এর প্রতিবাদে রাকেশ সিংয়ের নেতৃত্বে এই হামলা চালানো হয়।
পুলিশি অভিযান ও রাকেশ সিংয়ের প্রতিক্রিয়া
ঘটনার পর থেকেই রাকেশ সিংয়ের খোঁজে পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালায়, যার মধ্যে তার বাড়িও ছিল। পলাতক থাকা সত্ত্বেও রাকেশ সিং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় ছিলেন এবং তার ছেলেকে গ্রেপ্তার এবং পরিবারকে হয়রানি করার জন্য পুলিশের সমালোচনা করছিলেন। গ্রেপ্তারের সময় রাকেশ সিংকে “নরেন্দ্র মোদী জিন্দাবাদ” বলে স্লোগান দিতে শোনা যায়। তিনি বলেন, “কলকাতা পুলিশ হুঁশিয়ার, রাকেশ সিং কখনো ভয় পায়নি, আর কখনো ভয় পাবেও না!”। রাকেশ সিং দাবি করেছেন, তিনি আদালতে আইনি লড়াইয়ের জন্য পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন।
বিতর্ক এবং পুলিশের ভূমিকা
এই ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিজেপি নেতারা দাবি করছেন যে রাকেশ সিংয়ের প্রতিবাদ কোনো সরকারি সম্পত্তির ওপর ছিল না, বরং একটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ের ওপর ছিল। তাদের যুক্তি, বিহারে কংগ্রেসের জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অশ্রাব্য ভাষায় স্লোগান দেওয়া এবং তাঁর প্রয়াত মাতৃদেবীকে অপমানের কারণেই এই প্রতিবাদ সংঘটিত হয়েছে। তাই পুলিশের পদক্ষেপকে ‘পক্ষপাতিত্ব ‘ এবং ‘বাড়াবাড়ি’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।