ব্যুরো নিউজ,২৯ মার্চ : সিকিম—হিমালয়ের কোলে অবস্থিত এই ছোট্ট রাজ্যটি পর্যটকদের স্বর্গরাজ্য। গ্রীষ্ম হোক বা শীত, সিকিমের রূপ বদলায় ঋতুর সঙ্গে সঙ্গে। বিশেষ করে বঙ্গবাসীদের জন্য এটি অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য। শীতের সময় বরফাবৃত পাহাড়ের সৌন্দর্য যেমন মনোমুগ্ধকর, তেমনই গ্রীষ্মে সবুজ উপত্যকা ও রঙিন ফুলের সমারোহ এক ভিন্ন অনুভূতি এনে দেয়। সাধারণত অক্টোবর-নভেম্বর মাস সিকিম ভ্রমণের আদর্শ সময় বলে ধরা হলেও, এপ্রিল-মে মাসও এখানে যাওয়ার দারুণ সময়। এই সময় আবহাওয়া বেশ আরামদায়ক থাকে—না বেশি গরম, না বেশি ঠান্ডা। তাই এই সময়ে সিকিম ভ্রমণের পরিকল্পনা থাকলে কোন কোন জায়গাগুলি অবশ্যই তালিকায় রাখা উচিত?
গুরুদোংমার হ্রদ: স্বর্গীয় সৌন্দর্যের ঠিকানা
উত্তর সিকিমের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ গুরুদোংমার হ্রদ। ১৭,৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই হ্রদ বছরের বেশির ভাগ সময় বরফে ঢাকা থাকে। তবে মার্চের শেষ থেকে জুনের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এখানে যাওয়া বেশ সুবিধাজনক। প্রকৃতির মাঝে এই নীলাভ হ্রদ পর্যটকদের মুগ্ধ করে। গুরুদোংমার যাওয়ার পথে কালা পাত্থরও দেখে নেওয়া যায়। অনুমতি পেতে ভোটার কার্ড ও পাসপোর্ট সাইজ ছবি জমা দিতে হয়। কীভাবে যাবেন? গ্যাংটক থেকে প্রথমে লাচেন যেতে হয়। সেখানে এক রাত কাটিয়ে পরদিন ভোরে গুরুদোংমারের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া যায়। ব্যক্তিগত গাড়ি বা শেয়ার ট্যাক্সি বুক করেই যেতে হয়।থাকার ব্যবস্থা: লাচেনে বিভিন্ন মানের ও দামের হোটেল পাওয়া যায়। ফুলের স্বর্গরাজ্যউত্তর সিকিমের আরেকটি বিখ্যাত স্থান ইয়ুমথাং, যাকে ‘ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ারস’ বলা হয়। মে-জুন মাসে এখানে গেলে চোখজুড়ানো নানা রঙের ফুলের সমারোহ দেখা যায়। তুষারে ঢাকা উপত্যকা তখন সবুজে মোড়া থাকে।
সম্পত্তির ভাগাভাগি না হলে শেষকৃত্য হবে না! মৃতদেহ আগলে চার স্ত্রী ও নয় সন্তান, হতবাক গ্রামবাসীরা
ইয়ুমথাং থেকে খুব কাছেই জিরো পয়েন্ট, যেখানে বরফের উপরে দাঁড়িয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।কীভাবে যাবেন? গ্যাংটক থেকে লাচুং পৌঁছে সেখানে এক রাত কাটিয়ে ইয়ুমথাং ও জিরো পয়েন্টে ঘুরতে যেতে হয়। শেয়ার ট্যাক্সি ও ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবস্থা রয়েছে।থাকার ব্যবস্থা: লাচুংয়ে বিভিন্ন বাজেটের হোটেল ও হোমস্টে পাওয়া যায়।দক্ষিণ সিকিমের অনন্য রূপ, উত্তর সিকিমের পাশাপাশি দক্ষিণ সিকিমেরও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কম নয়। নামচির কাছের ছোট্ট গ্রাম তারেভির এক অনন্য পর্যটনস্থান। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০,০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই স্থানটি পাইন বন ও সবুজ পাহাড়ের জন্য বিখ্যাত। পাহাড়ের শীর্ষে উঠে দেখলে মেঘের সমুদ্র যেন চোখের সামনে ভেসে ওঠে।কীভাবে যাবেন? নিউ জলপাইগুড়ি থেকে নামচির দূরত্ব ৯২ কিমি, আর নামচি থেকে তারেভির ১৬ কিমি দূরে। নামচিতে রাত কাটিয়ে তারেভির যাওয়া যায়।থাকার ব্যবস্থা: কিছু হোমস্টে ও হোটেল পাওয়া যায়।
প্রকৃতিপ্রেমীদের স্বর্গ, সিকিমের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত ইয়কসম তুলনামূলক কম ভিড়যুক্ত একটি স্থান। এটি গোয়েচা-লা ট্রেকের প্রবেশদ্বার এবং কাঞ্চনজঙ্ঘা জাতীয় উদ্যানের একেবারে পাশে অবস্থিত। এই এলাকায় প্রচুর পাখি দেখা যায়, যা প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণী প্রেমীদের জন্য এক বড় আকর্ষণ। এপ্রিল-মে মাস ইয়কসম ভ্রমণের সেরা সময়।কীভাবে যাবেন? গ্যাংটক থেকে ইয়কসম ১৫০ কিমি দূরে, যা যেতে ৫-৬ ঘণ্টা সময় লাগে।থাকার ব্যবস্থা: কিছু সীমিতসংখ্যক হোমস্টে ও গেস্টহাউস রয়েছে।লেপচা সংস্কৃতির সাক্ষী, উত্তর সিকিমের অন্যতম সুন্দর ও নিরিবিলি স্থান হল জঙ্গু। এখানে লেপচা জনজাতির বাস এবং তাদের সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিকতা ঘিরে এই এলাকাটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। জঙ্গুর আশপাশে লিংজা জলপ্রপাত, লিংথেম বৌদ্ধমঠ ও টিংভং গ্রামের মতো দর্শনীয় স্থান রয়েছে।কীভাবে যাবেন? গ্যাংটক থেকে মঙ্গন হয়ে জঙ্গুতে যেতে হয়। অনুমতি পেতে স্থানীয় হোমস্টে মালিকদের সাহায্য নেওয়া যায়।থাকার ব্যবস্থা: কিছু হোমস্টে ও অতিথিশালা পাওয়া যায়।
Bangladesh: আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত বাংলাদেশে , আমেরিকার চালে বাজিমাত
সিকিম ভ্রমণ শুধু পাহাড় আর বরফ দেখার জন্য নয়, প্রকৃতির সৌন্দর্য ও সংস্কৃতির মিশেলে এক অনন্য অভিজ্ঞতা লাভের জন্য। এপ্রিল-মে মাসে এই জায়গাগুলিতে গেলে প্রকৃতির রঙ ও বৈচিত্র্য আরও ভালোভাবে উপভোগ করা যায়। তাই এবার সিকিম ভ্রমণের পরিকল্পনা করলে এই স্থানগুলিকে অবশ্যই তালিকায় রাখুন!