ব্যুরো নিউজ ২ নভেম্বর : বেলপাহাড়ির নাম শুনলেই প্রথমে মাওবাদীদের ভয়ে গা ছমছম করে, কিন্তু সেই দিনগুলো এখন অতীত। আজ এই স্থান পর্যটকদের কোলাহলে মুখরিত। প্রকৃতির অনন্য সৌন্দর্যে মোড়া বেলপাহাড়ি এখন ছুটির ঠিকানা। শীতকাল এলেই খ্যাঁদারানি হ্রদের পাড়ে কিংবা ঘাঘরা জলপ্রপাতের ধারে চড়ুইভাতির আয়োজন হয়। বিশেষত, কলকাতা থেকে অসংখ্য মানুষ ছুটে আসেন এই সবুজের মধ্যে শহরের কোলাহল থেকে বাঁচতে শান্তির খোঁজে। শালের ঘন জঙ্গল, পাহাড়ি পথ, অজানা গুহা, জলাধার এবং ঝর্ণার ধারায় পরিপূর্ণ বেলপাহাড়ি। প্রকৃতিপ্রেমী ও অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য এক আদর্শ গন্চতে।চলুন জেনে নেওয়া নেওয়া যাক কি কি বেলপাহাড়ির দর্শনীয় স্থানগুলির সম্পর্কে।
অমিত শাহের বঙ্গ সফরে নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা হল নাঃ বিজেপির নেতাদের কি ব্যাখ্যা?
বেলপাহাড়ির দর্শনীয় স্থানসমূহ
- গাড়রাসিনী পাহাড়: শালের জঙ্গলের ভেতর দিয়ে পাথুরে রাস্তা ধরে গাড়রাসিনী পাহাড়ে ওঠা যায়। পাহাড় চূড়ায় ওঠার পথে বাসুদেব মন্দির রয়েছে, যেখানে পর্যটকরা কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম নিতে পারেন। মন্দিরের পাশ দিয়ে উপরে উঠে গেলে চূড়ায় আরেকটি মন্দির রয়েছে। পাহাড়ের শীর্ষ থেকে চারপাশে বিস্তৃত সবুজের সৌন্দর্য মনে অন্যরকম প্রশান্তি এনে দেয়।
- ঢাঙ্গিকুসুম ঝর্ণা: বর্ষাকালে ঢাঙ্গিকুসুমে গেলে প্রকৃতির সৌন্দর্য যেন চোখে লেগে থাকে। পাথরের গা বেয়ে কুলকুল শব্দে ঝর্নার জল বয়ে চলে। বর্ষা বাদে অন্য সময় এখানে যাওয়া তেমন আকর্ষণীয় মনে নাও হতে পারে।
- ঘাঘরা জলপ্রপাত: বেলপাহাড়ি থেকে মাত্র ৭ কিমি দূরে অবস্থিত এই জলপ্রপাত। ঘাঘরার মূল সৌন্দর্য উপভোগ করতে বর্ষাকালে যাওয়াই শ্রেয়। পাথুরে ভূ-প্রকৃতি ও গিরিখাতগুলো প্রকৃতির অপূর্ব সৃষ্টির মতোই, আর ঝর্ণার জলে পাথরের গা বেয়ে তৈরি গর্তগুলো দেখতে দারুণ লাগে।
- তারাফেনি জলাধার: ঘাঘরার কাছেই তারাফেনি জলাধার। সবুজ ঘেরা পাহাড়ের মাঝে শান্ত জলাধারের প্রতিফলিত সৌন্দর্য মন ভরিয়ে দেয়। বিশেষ করে সকালে বা বিকেলের দিকে এখানকার পরিবেশ অপূর্ব।
- খ্যাঁদারানি হ্রদ: শালের গভীর জঙ্গলের মাঝে এই হ্রদটি অবস্থিত। পড়ন্ত বিকেলে খ্যাঁদারানি হ্রদের সৌন্দর্য যেন আরও বেড়ে যায়। হ্রদের পাশে একটি কংক্রিটের সেতু আছে, সেখান থেকে সূর্যাস্তের দৃশ্য অসাধারণ লাগে। এখানে জনবসতি কম, যার জন্য জায়গাটি নিস্তব্ধতায় ভরা।
- চাতন পাহাড় ও আদিম গুহা: বেলপাহাড়ির চাতন পাহাড় থেকে পুরো এলাকার চমৎকার দৃশ্য দেখা যায়। এখানে বেশ কিছু প্রাচীন গুহা রয়েছে, যেগুলি প্রাগৈতিহাসিক আমলের বলে মনে করা হয়। বিশেষ করে কাঁকড়াঝোরের পাহাড়ি পথে প্রায় ২০০ মিটার উঠে গেলে তিনটি গুহার দেখা মেলে, যা জনশ্রুতি মতে আদিম যুগের।
- বর্তমানে শিশুদের শ্রবণশক্তি এবং বধিরতার সমস্যা বাঁচাতে বাবা-মায়েদের করণীয়
বেলপাহাড়ির আশেপাশের অন্যান্য স্পট
বেলপাহাড়ি ঘুরতে এসে আরও অনেক দর্শনীয় স্থান দেখা যেতে পারে। তালবেড়িয়া জলাধার এবং মকুটমণিপুরও কাছেই, যা দুই দিনের ভ্রমণ পরিকল্পনায় সহজেই অন্তর্ভুক্ত করা যায়। পর্যাপ্ত সময় নিয়ে তিন দিনের একটি সফর করলে কাঁকড়াঝোর এবং আশপাশের স্থানগুলোতেও ঘুরে দেখা সম্ভব।
কীভাবে পৌঁছাবেন
কলকাতা থেকে প্রায় ২০০ কিমি দূরে বেলপাহাড়ি। সড়কপথে ঝাড়গ্রাম হয়ে বিভিন্ন স্পট ঘুরে বেলপাহাড়িতে পৌঁছানো যায়। ঝাড়গ্রাম রেলস্টেশন থেকে গাড়ি ভাড়া করে বেলপাহাড়ি যাওয়া যায়। এছাড়া কলকাতা থেকেও সরাসরি বাসে পৌঁছানোর সুবিধা রয়েছে। বেলপাহাড়িতে থাকার জন্য বেশ কয়েকটি হোটেল এবং হোম স্টে রয়েছে, যেখানে স্থানীয় পরিবেশের ছোঁয়া পাওয়া ্মপরক
বেলপাহাড়ির প্রকৃতি, সবুজ মাঠঘাট, ঘন জঙ্গল আর অনবদ্য দৃশ্য পর্যটকদের মন ভুলিয়ে রাখে। অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীরা যারা পাহাড়ি পরিবেশ ও অফবিট জায়গায় ঘোরাঘুরি করতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য বেলপাহাড়ি একদমই আদর্শ গন্তব্য।