bagbazaar

মিঠুন নিউজ ১৩ জুন: কলকাতার উত্তর প্রান্তে অবস্থিত বাগবাজার কেবল একটি পাড়া নয়—                                                                এ যেন ইতিহাস, ঐতিহ্য ও আত্মার মিলনস্থল। বাংলা তথা ভারতের বহু মনীষীর স্মৃতিবিজড়িত এই অঞ্চল আজও অতীত গৌরবের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

যেখানে অতীতের গৌরব ও বর্তমানের চেতনা একসূত্রে বাঁধা

রামকৃষ্ণ, সারদা মা, বিবেকানন্দ, গিরিশচন্দ্র ঘোষ, নিবেদিতা, বলরাম বসু—এমন কত মহাপুরুষ এই অঞ্চলে জন্মেছেন, থেকেছেন বা আত্মিক আশ্রয় খুঁজে পেয়েছেন! এখানেই ছিল “মায়ের বাড়ি”, যা আজও রামকৃষ্ণ মিশনের অন্যতম পবিত্র তীর্থ।

ঊনবিংশ শতাব্দীতে শ্রীরামকৃষ্ণ যখন বাগবাজারে আসেন, তখন তাঁর সাক্ষাৎ হয় ভবিষ্যতের তুরীয়ানন্দ, অখণ্ডানন্দ ও গিরিশচন্দ্র ঘোষের সঙ্গে। কেবল ধর্ম বা আধ্যাত্মিকতা নয়, নাট্যচর্চা, সাহিত্য, সঙ্গীত, চিত্রশিল্প—সব ক্ষেত্রেই বাগবাজার রেখেছে অবদান। নগেন্দ্রনাথ বসুর রচিত “বিশ্বকোষ” এখানেই রচিত হয়, যার নামে বিশ্বে একমাত্র রাস্তার নামকরণ হয়েছে—বিশ্বকোষ লেন।

ক্ষুধার্ত প্রজন্ম

বাগবাজারে গড়ে উঠেছে কলকাতার অন্যতম প্রাচীন লাইব্রেরি—বাগবাজার রিডিং লাইব্রেরি, যার বয়স ১২৫ বছরেরও বেশি। প্রতি বছর বাগবাজার স্ট্রিটে আয়োজিত হয় এক ঐতিহাসিক সার্বজনীন দুর্গাপূজা, যা শহরের অন্যতম প্রাচীন ও জনপ্রিয় পূজা হিসেবে বিবেচিত। এখানকার কুমারটুলি শিল্প, পোটারি, ঘাট, শ্মশান, মন্দির—সবকিছুই মিশে আছে এক সাংস্কৃতিক সমুদ্রস্রোতে।

‘বাগবাজার’ শব্দটির উৎপত্তি নিয়ে দুইটি মত রয়েছে—একদিকে কেউ বলেন এটি বিশাল “বাগ” বা উদ্যানের নাম থেকে এসেছে, অন্যদিকে ভাষাতাত্ত্বিক সুকুমার সেনের মতে, হুগলি নদীর বাঁক থেকে ‘বাঁকবাজার’-এর অপভ্রংশ হয়ে এটি ‘বাগবাজার’ হয়েছে।

আরজি কর কাণ্ডে সিবিআইয়ের চতুর্থ স্টেটাস রিপোর্ট: তদন্তে ক্ষুব্ধ নির্যাতিতার পরিবার

ঐতিহাসিক দিক থেকেও বাগবাজার গুরুত্বপূর্ণ। নবাব সিরাজদ্দৌলার কলকাতা আক্রমণের সময় লালদিঘির যুদ্ধ বাগবাজারের কাছেই সংঘটিত হয়। কর্নেল স্কটের বারুদ কারখানা, পেরিনস গার্ডেনের প্রমোদ উদ্যান, এবং রঘু মিত্র নির্মিত ঘাট আজও এই অঞ্চলের প্রাচীনতার স্মারক।

বর্তমানেও বাগবাজার শুধুমাত্র ইতিহাসে আবদ্ধ নয়, বরং উত্তর কলকাতার প্রাণস্পন্দন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। হেরিটেজ ঘাট, ট্রামলাইন, রাস্তাঘাট সব কিছু মিলিয়ে বাগবাজার এক জীবন্ত জাদুঘর—যেখানে প্রতিটি গলি, প্রতিটি বাড়ি, প্রতিটি ঘাট ইতিহাসের অক্ষরে লেখা এক মহাকাব্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর