baba ramdev youth secret

ব্যুরো নিউজ ০৫ জুলাই ২০২৫ : যোগগুরু বাবা রামদেব, যিনি তাঁর অসাধারণ স্বাস্থ্য এবং চিরতারুণ্যের জন্য সুপরিচিত, সম্প্রতি তাঁর দৈনন্দিন রুটিন এবং খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেছেন। তাঁর মতে, সঠিক সাত্ত্বিক আহার এবং নিয়মিত যোগাভ্যাস মানুষকে ১০০ বছর বয়সেও রোগমুক্ত এবং তরুণ রাখতে পারে। তাঁর ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য পরিসংখ্যান চমকপ্রদ—৬৫ কেজি ওজন, ১৭.৫ হিমোগ্লোবিন, ৭০/১১০ রক্তচাপ এবং ৭০-৭৫-এর মধ্যে রক্তে শর্করার মাত্রা, যা তাঁর জীবনযাত্রার কার্যকারিতা প্রমাণ করে।

সাত্ত্বিক আহারের জাদু: রোগমুক্ত জীবনের মূলমন্ত্র

এক সাক্ষাৎকারে বাবা রামদেব জানান যে তাঁর ৫০ বছরের জীবনে তিনি সর্দি, কাশি, পেট খারাপ বা খাদ্যে বিষক্রিয়ার মতো কোনো সাধারণ রোগে আক্রান্ত হননি। শৈশবে মশার কামড়ে একবার জ্বর হয়েছিল, সেটাই শেষ। এর কারণ হিসেবে তিনি তাঁর সাত্ত্বিক ( সম্পূর্ণ নিরামিষ) আহারকে উল্লেখ করেছেন, যেখানে তিনি দিনে মাত্র একবার খাবার গ্রহণ করেন এবং তাতে তিন ধরনের সবজি থাকা বাধ্যতামূলক।

প্রাণঘাতী হার্ট অ্যাটাক: হাতের-পায়ের এই ৫ নীরব লক্ষণ এড়িয়ে যাবেন না

রামদেবের দৈনন্দিন রুটিন: সুস্বাস্থ্যের ভিত্তি

যোগগুরু রামদেব তাঁর দৈনিক রুটিনের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। তিনি ভোর ৩টায় ঘুম থেকে ওঠেন এবং দিনের শুরু করেন হালকা গরম জল পান করে। এরপর স্নান, এক ঘণ্টা ধ্যান, দৌড়ানো এবং তারপর মানুষকে যোগ শেখানো তাঁর নিয়মিত অভ্যাস। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, কীভাবে দিনের শুরু হচ্ছে, কী খাওয়া হচ্ছে এবং কখন খাওয়া হচ্ছে, তা সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

খাওয়ার ব্যবধান: একবারই শ্রেষ্ঠ

দিনের কতবার খাওয়া উচিত, এই বিষয়ে রামদেবের মতামত অত্যন্ত স্পষ্ট। তাঁর মতে, দিনে একবার খাওয়া শরীরের জন্য সবচেয়ে উপকারী। যাঁরা বেশি শারীরিক পরিশ্রম করেন, তাঁরা দিনে দু’বার খেতে পারেন। কিন্তু তিনবার বা তার বেশি খাওয়া রোগের ঝুঁকি বাড়ায় বলে তিনি সতর্ক করেছেন।

আহারের ধরন: ফল, সবজি এবং শস্যমুক্ত জীবন

বাবা রামদেব দুপুর ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে তাঁর প্রধান খাবার গ্রহণ করেন এবং সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত শুধু ফল খান। তাঁর খাদ্যতালিকায় ৯৯% শস্য থাকে না। লাউ, জুকিনি এবং বিভিন্ন মিশ্র সবজি তাঁর পছন্দের তালিকায় শীর্ষে। তিনি ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আলু বা অন্যান্য শস্য গ্রহণ করেননি, যদিও ইদানীং মাঝে মাঝে বাজরা গ্রহণ করেন।

সঠিক আহার পদ্ধতি: পুষ্টির ক্রম

খাবার গ্রহণের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন। প্রথমে ফল এবং সালাদের মতো কাঁচা খাবার খাওয়া উচিত। এরপর সবুজ সবজি, শস্য এবং সবশেষে মিষ্টি কিছু খাওয়া যেতে পারে। তবে মিষ্টিতে চিনির পরিবর্তে প্রাকৃতিক মিষ্টি যেমন মিষ্টি ফল, শুকনো ফল বা গুড় থাকা উচিত। এই পদ্ধতি শরীরকে দীর্ঘক্ষণ সুস্থ ও রোগমুক্ত রাখে।

বিপজ্জনক খাবার এবং স্বাস্থ্যকর বিকল্প

রামদেব সাদা ভাত এবং গমকে স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক বলে উল্লেখ করেছেন, কারণ এগুলি অনেক রোগের কারণ হতে পারে। রাতের বেলা মিষ্টি, চা, কফি, দই, বাটারমিল্ক এবং চকোলেট খাওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। ঘুমের সমস্যার সমাধানে তিনি পেঁয়াজ খাওয়ার কথা বলেছেন, যা গভীর ঘুমে সহায়ক।
তিনি দুর্বলতা দূর করতে ডালিম, গাজর, বিট, গমের ঘাস এবং অ্যালোভেরা খাওয়ার সুপারিশ করেছেন। মূলাকে পেট ও যকৃতের জন্য উপকারী এবং স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিতে সহায়ক বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। শরীফা খেলে অ্যাসিডিটি হয় না এবং এটি ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ—এই তথ্যও তিনি দিয়েছেন।

বিমানযাত্রায় লাগেজ ক্ষতিগ্রস্ত হলে কী করবেন? জেনে নিন ক্ষতিপূরণ দাবির পদ্ধতি

যোগাসন: অভ্যন্তরীণ সুস্থতার চাবিকাঠি

যোগগুরু হিসেবে তিনি কপালভাতি এবং অনুলোম-বিলোম প্রাণায়ামের মতো যোগাসনগুলিকে অত্যন্ত শক্তিশালী বলে আখ্যায়িত করেছেন এবং প্রত্যেকেরই প্রতিদিন অন্তত দুটি যোগাসন করার উপর জোর দিয়েছেন। তাঁর মতে, এটি শরীরকে ভিতর থেকে সুস্থ ও তরুণ রাখে।

উপসংহার: বাবা রামদেবের জীবনযাপন প্রমাণ করে যে সুশৃঙ্খল খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত যোগাভ্যাস দীর্ঘায়ু, সুস্বাস্থ্য এবং তারুণ্য ধরে রাখার মূল চাবিকাঠি। তাঁর এই বার্তা আধুনিক সমাজের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর