ব্যুরো নিউজ ০৪ জুলাই : ভুয়া ভোটার রুখতে নির্বাচন কমিশনের নতুন নির্দেশিকা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তীব্র চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। বিহারে আসন্ন ভোটের আগে ভোটার তালিকা যাচাইয়ের যে কাজ শুরু হয়েছে, তাতে আধার, ভোটার কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স বা এমনকি এমজিএনরেগার ( মনরেগা MGNREGA ) জব কার্ডও গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না। এর বদলে সুনির্দিষ্ট ১১টি নথি চাওয়া হচ্ছে, যা দেখাতে পারলেই তবেই ভোটার হিসেবে নাম গৃহীত হবে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশঙ্কা: মূল নিশানা পশ্চিমবঙ্গ
এই নির্দেশিকা নিয়ে আগেই তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, বিহারে এটি করা হলেও এর মূল নিশানা আসলে পশ্চিমবঙ্গ। গত মাসেই দিঘা থেকে তিনি বলেছিলেন, “এই নির্দেশিকার আসল টার্গেট বিহার নয়, বাংলা।” ওয়াকিবহাল মহলের মতে, পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দাদেরও বিহারের এই প্রক্রিয়ার দিকে নজর রাখা জরুরি।
Bihar : বিহারের ঐতিহাসিক ই-ভোটিং উদ্যোগ: গণতন্ত্রে নতুন দিগন্ত?
বিহারে BLO-রা যে যে নথি চাইছেন
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী, বিহারে ভোটার তালিকা যাচাইয়ের জন্য নিম্নলিখিত নথিগুলি গ্রহণযোগ্য বলে ধরা হচ্ছে:
- সরকারি কর্মী বা পেনশনপ্রাপকের আইডি কার্ড
- পাসপোর্ট
- ১ জুলাই ১৯৮৭-এর আগে ব্যাঙ্ক/পোস্ট অফিস/এলআইসি-র দেওয়া সার্টিফিকেট
- সরকারি কর্তৃপক্ষের দেওয়া বার্থ সার্টিফিকেট
- স্কুল বা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট
- স্থায়ী ঠিকানার প্রমাণ
- বন অধিকার সার্টিফিকেট (Van Adhikar Certificate)
- কাস্ট সার্টিফিকেট
- NRC-র নথি
- সরকার-প্রদত্ত জমি বা ঘরের পাট্টা পত্র
- সরকার বা স্থানীয় সংস্থার ফ্যামিলি রেজিস্টার
আধার বা ভোটার কার্ডে আপত্তি কেন?
নির্বাচন কমিশনের মতে, এবার ভারতীয় নাগরিকত্ব ও স্থায়ী ঠিকানার প্রমাণেই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এর উদ্দেশ্য একটাই—অবৈধ বিদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া। কমিশনের নতুন ‘ডিক্লারেশন ফর্ম’-এও বলা হয়েছে, ভোটার তালিকা নতুন করে যাচাই করতে হবে এবং তার জন্য নির্দিষ্ট শর্তাবলী মানতেই হবে। নির্বাচন কমিশনের সিইসি জ্ঞানেশ কুমার জানিয়েছেন, প্রায় ২২ বছর পর বিহারে এভাবে আপাদমস্তক যাচাই করে ভোটার তালিকা পুনর্মূল্যায়ন করা হচ্ছে, যার একমাত্র উদ্দেশ্য প্রকৃত ভারতীয় নাগরিকদের তালিকাভুক্ত করা। আধার কার্ড স্পষ্ট উল্লেখ করে যে ‘ আধার নাগরিকতার পরিচয় নয় ‘ ।
Election Commission ; নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকা সংশোধনের বিরোধিতায় সরব ইন্দিজোট !
এর পরে পশ্চিমবঙ্গের পালা?
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর আগেই বলেছিলেন যে, বিহারের পর বাংলাতেও এই নিয়ম চালু হবে। আদতে সেটাই কমিশনের লক্ষ্য বলে তিনি দাবি করেছেন। বিহার থেকে এই নয়া নিয়ম চালু হলেও এরপর পশ্চিমবঙ্গ, অসম, কেরল, তামিলনাড়ু ও পুদুচেরিতেও এই নিয়মেই ভোটার তালিকা সংশোধন হবে।
২ কোটির বেশি মানুষ বাদ পড়ার আশঙ্কা
নয়া নিয়মে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বিরোধীরা। তাঁদের অভিযোগ, এই নয়া নিয়মে বিহারের প্রায় ২ কোটি নাগরিক ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারেন। অনেকের কাছেই শুধুমাত্র আধার, ভোটার আইডি বা ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে এবং অন্য কোনো বিকল্প নথি নেই। ফলে নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন বলে দাবি বিরোধীদের।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত মাসে দিঘায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সরাসরি তোপ দাগেন। তাঁর বক্তব্য, “এই নির্দেশিকার আসল টার্গেট বিহার নয়, বাংলা। পরিযায়ী শ্রমিক ও সাধারণ মানুষকেই নিশানা করা হচ্ছে। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা না বলেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো কেন?”
এই নয়া নিয়ম ভোটের আগে রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য তুঙ্গে। বিরোধীদের আশঙ্কা, এর ফলে সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার খর্ব হতে পারে। পশ্চিমবঙ্গ-সহ ছয় রাজ্যে এই নিয়ম লাগু হলে যে বড়সড় রাজনৈতিক ঝড় উঠবে, তা বলাই বাহুল্য।