ব্যুরো নিউজ ১১ নভেম্বর ২০২৫ : আমরা যখনই গণেশজীর কথা ভাবি, তখনই এক প্রজ্ঞাবান, হস্তীমুখ দেবতা, যিনি সকল বাধা দূর করেন, সেই চিত্রটিই আমাদের মনে আসে। কিন্তু বিঘ্নহর্তা রূপে পরিচিত হওয়ার আগে, গণেশ ছিলেন এক ক্রীড়াপরায়ণ শিশু। পদ্মপুরাণের মতো শাস্ত্রে সংরক্ষিত তাঁর শৈশবের এই লীলাকথাগুলি কেবল মনমুগ্ধকরই নয়, বরং গভীর নৈতিক শিক্ষায় পূর্ণ। এরকমই একটি অপেক্ষাকৃত কম জানা গল্প হল শিশু গণেশ ও একটি বিড়ালের কাহিনী, যা সমস্ত প্রাণীর প্রতি করুণা, সম্মান এবং সংবেদনশীলতার মূল্যকে সুন্দরভাবে তুলে ধরে।
কৌতুকপ্রিয় বালক ও নিরীহ বিড়াল
ছোট্ট গণেশ খেলাধূলা করতে খুব ভালোবাসতেন। অন্য দুষ্টু শিশুদের মতোই, কখনও কখনও তিনি খেলায় মাত্রা ছাড়িয়ে যেতেন। একবার খেলাচ্ছলে গণেশ একটি বিড়ালকে দেখে তার লেজ ধরে টানতে শুরু করলেন এবং সেটিকে মাটিতে গড়াগড়ি দিতে লাগলেন। তিনি বুঝতে পারেননি যে এতে নিরীহ প্রাণীটি আহত হচ্ছে। ব্যথিত ও পীড়িত হয়ে বিড়ালটি পালিয়ে গেল, আর গণেশ নিজের খেলায় মগ্ন রইলেন, তিনি যে কতখানি কষ্ট দিলেন তা তিনি জানতেই পারলেন না।
সনাতন ধর্মের মহাজাগতিক সংহতি : বিষ্ণুর অবতার ও নবগ্রহ
বিস্ময়কর সত্য উদ্ঘাটন
কিছুক্ষণ পরে গণেশ যখন ঘরে ফিরলেন, তখন তিনি তাঁর মা দেবী পার্বতীকে দেখে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। তাঁর সারা দেহে আঁচড় ও আঘাতের চিহ্ন! উদ্বিগ্ন হয়ে গণেশ জিজ্ঞেস করলেন, কে তাঁকে আঘাত করেছে? পার্বতী স্নিগ্ধ কণ্ঠে জানালেন যে, গণেশ যে বিড়ালটিকে কষ্ট দিয়েছেন, সেটি আর কেউ নয়, তিনি নিজেই সেই বিড়ালের ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলেন। তিনি তাঁর ছোট্ট পুত্রকে এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেওয়ার জন্যই এই রূপ ধারণ করেছিলেন।
করুণার সেই মহান শিক্ষা
এই সত্য উদ্ঘাটন হওয়ার পর গণেশ গভীরভাবে ব্যথিত হলেন। তৎক্ষণাৎ তিনি কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনায় পরিপূর্ণ হয়ে মায়ের পায়ে লুটিয়ে পড়লেন। সেই দিন থেকে তিনি শিখলেন যে, প্রতিটি জীব, সে ক্ষুদ্র হোক বা বৃহৎ, ভালোবাসা এবং সম্মান পাওয়ার যোগ্য। এমনকি ক্ষুদ্রতম প্রাণীর কষ্টও ঈশ্বরের কাছে পৌঁছায়, কারণ সকল জীবন একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত।
Brahma ; সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার সীমিত উপাসনা: এক বিস্ময়কর রহস্য !
কেন এই গল্প আজকের দিনেও প্রাসঙ্গিক?
যে যুগে পশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা এখনও সাধারণ ঘটনা, সেখানে শিশু গণেশ ও বিড়ালের এই গল্পটির প্রাসঙ্গিকতা চিরন্তন। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে দয়া কেবল মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি প্রতিটি জীবন্ত প্রাণীর দিকে প্রসারিত হওয়া উচিত। প্রাণীদের সম্মান করা কেবল করুণা নয়, এটি এক প্রকার উপাসনা, কারণ ঈশ্বর সকল রূপে বিরাজমান।
শিশু গণেশ ও বিড়ালের কাহিনীটি আপাতদৃষ্টিতে একটি সাধারণ শৈশবের গল্প বলে মনে হতে পারে, কিন্তু এটি একটি সর্বজনীন বার্তা বহন করে: করুণা হল প্রজ্ঞার সর্বোচ্চ রূপ। এই ঘটনার মাধ্যমে গণেশ আমাদের দেখিয়েছেন যে, সত্যিকারের ভক্তি নিহিত রয়েছে সহানুভূতি, বিনয় এবং সকল জীবের প্রতি ভালোবাসার মধ্যে। এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই যে, তিনি বিঘ্নহর্তা রূপে পরিচিত হলেন, কারণ তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তি ছিল তাঁর করুণায় পরিপূর্ণ হৃদয়।



















