ব্যুরো নিউজ ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি (BTA) নিয়ে আলোচনা চলছে, যা উভয় দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি এই আলোচনায় কিছু ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে কিছুটা স্থবিরতা এলেও, উভয় পক্ষই চুক্তিটি দ্রুত সম্পন্ন করার ব্যাপারে আশাবাদী। বিশেষ করে ভারতের কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল এবং মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট-এর সাম্প্রতিক মন্তব্য এই আশাকে আরও জোরদার করেছে।
পিযূষ গোয়েলের আশা এবং সময়সীমা
ভারতের কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল মুম্বাইয়ে এক বার্ষিক গ্লোবাল ইনভেস্টর কনফারেন্সে ভাষণ দেওয়ার সময় বলেন যে তিনি আশা করেন এই বছরের নভেম্বরের মধ্যে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত হবে। তিনি স্বীকার করেন যে সম্প্রতি ভূ-রাজনৈতিক কারণে বাণিজ্য আলোচনা কিছুটা বিঘ্নিত হয়েছে। গোয়েল বলেন, “আমি আশা করি পরিস্থিতি শিগগিরই স্বাভাবিক হবে এবং আমাদের দুই নেতার ফেব্রুয়ারিতে যেমন আলোচনা হয়েছিল, সে অনুযায়ী আমরা শরৎকালের মধ্যে, অর্থাৎ নভেম্বর নাগাদ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করব।” তিনি আরও জানান যে ভারত ইতিমধ্যেই অস্ট্রেলিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মরিশাস, ইংল্যান্ড এবং ইউরোপের ইএফটিএ সংঘের মতো দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) সম্পন্ন করেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি এবং ট্রাম্পের শুল্ক
মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন যে তিনি বিশ্বাস করেন ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবশেষে তাদের মতপার্থক্য সমাধান করতে সক্ষম হবে। তিনি ভারতের মূল্যবোধকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের চেয়েও রাশিয়ার নিকটবর্তী বলে মন্তব্য করেন। তবে, ট্রাম্প প্রশাসন কর্তৃক ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তটি এই আলোচনার পথে বড় বাধা সৃষ্টি করেছে। ভারত এই পদক্ষেপকে “অযৌক্তিক এবং অন্যায়” বলে অভিহিত করেছে। এই শুল্ক আরোপের প্রতিবাদে ভারত ষষ্ঠ দফার বাণিজ্য আলোচনা পিছিয়ে দিয়েছে।
ভূ-রাজনৈতিক ইস্যু এবং রাশিয়া থেকে তেল ক্রয়
ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান উত্তেজনার একটি প্রধান কারণ হলো রাশিয়া থেকে ভারতের অপরিশোধিত তেল ক্রয়। বেসেন্ট এ বিষয়ে বলেন, “রাশিয়া থেকে তেল কেনা এবং তা পুনরায় বিক্রি করে ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ প্রচেষ্টাকে অর্থায়ন করার ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকা ভালো ছিল না।” যদিও ভারত নিজেদের জাতীয় স্বার্থ এবং বাজারের অবস্থার ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্তকে সঠিক বলে মনে করে। সম্প্রতি সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (SCO) সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাতের পর এই উত্তেজনা আরও বেড়েছে।
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের লক্ষ্য
বর্তমানে ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য প্রায় ১৯১ বিলিয়ন ডলার, যা ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য রয়েছে। এই লক্ষ্য অর্জনে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। যদিও ট্রাম্প ভারতের উচ্চ শুল্ক নীতির সমালোচনা করেছেন এবং দাবি করেছেন যে ভারত এখন শুল্ক শূন্য করার প্রস্তাব দিয়েছে, তবে এই বিষয়ে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক নিশ্চিতকরণ আসেনি।