ইটালিতে তরুণদের দেশত্যাগ

ব্যুরো নিউজ,১৬ ডিসেম্বর:ইউরোপের রেনেসাঁর কেন্দ্রবিন্দু ইটালি আজ কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে। দেশের হাজার হাজার মেধাবী তরুণ-তরুণী নিজেদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে ইটালি ছেড়ে পাড়ি দিচ্ছেন বিশ্বের নানা প্রান্তে।একদিকে জনশূন্য হয়ে পড়ছে এককালের গৌরবময় সাম্রাজ্য অন্যদিকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা এই পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন রোধে কূটনৈতিক পদক্ষেপের দাবি কংগ্রেসের

‘ব্রেন ড্রেন’-এর মারণ কামড়

সাম্প্রতিক সময়ে ইটালি তীব্র ‘ব্রেন ড্রেন’-এর সমস্যায় ভুগছে। আর্থিক সংকট এবং সীমিত কর্মক্ষেত্রই এর প্রধান কারণ। দেশটির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ বছরে দেশত্যাগ করেছেন ১০ লক্ষেরও বেশি ইটালীয়। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশের বয়স ২৫-৩৫ বছরের মধ্যে। তরুণদের দাবি, স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য দেশ ছেড়ে যাওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।দক্ষিণ ইটালির অবস্থা আরও করুণ। দারিদ্র্যের কারণে সেখানকার মানুষ দেশীয় উত্তরের শিল্পাঞ্চলে কাজের সন্ধানে চলে যাচ্ছেন। গত দুই দশকে দক্ষিণ থেকে উত্তরে স্নাতকদের যাওয়ার হার ১৮ শতাংশ থেকে ৫৮ শতাংশে পৌঁছেছে। তবু উত্তরের অর্থনীতিও ইউরোপের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় দুর্বল।ইটালিতে কর্মসংস্থান পরিস্থিতি হতাশাজনক। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে ইটালির বেকারত্বের হার অন্যতম সর্বোচ্চ। ২০২৩ সালের অক্টোবরে এই হার দাঁড়িয়েছে ১৭.৭ শতাংশ, যা ইউরোপীয় গড় বেকারত্বের (১৫.২%) চেয়েও বেশি।ইটালির ‘ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড লেবার’ (সিএনইএল)-এর মতে, সরকার মজুরি কাঠামো নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় সমস্যাটি আরও ঘনীভূত হচ্ছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলির তুলনায় ইটালির প্রকৃত মজুরি অনেক কম। উপরন্তু, ইটালিতে কোনও ন্যূনতম মজুরি কাঠামো নেই এবং উচ্চশিক্ষার ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গেও মজুরি বৃদ্ধির সমন্বয় করা হয়নি। এর ফলে তরুণরা ইউরোপের অন্যান্য দেশে গিয়ে সম্মানজনক মজুরির সুযোগ খুঁজছেন।

চিন্ময় কৃষ্ণদাসের আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ নিজের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হন না, বললেন ছেলে

২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী, ইটালি ছেড়ে যাওয়া নাগরিকদের গড় বয়স ছিল ৩০। যারা ফিরে আসছেন, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই পারিবারিক টানে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে প্রবাসীদের ফিরিয়ে আনতে আয়ের ওপর বিশাল করছাড় এবং সন্তান নিয়ে দেশে ফিরলে বিশেষ আর্থিক প্রণোদনার কথা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী মেলোনি।ইটালিতে জন্মহারও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাচ্ছে। ২০৫০ সালের মধ্যে দেশের কর্মরত নাগরিক ও বেকারের অনুপাত ১:১-এ দাঁড়াবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বয়স্ক নাগরিকদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ইটালির অর্থনীতিতে আরও চাপ তৈরি হচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে উৎসাহ দিতে নাগরিকদের সন্তান উৎপাদনের জন্য আর্থিক সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার।ইটালির তরুণ-তরুণীদের দেশত্যাগ অর্থনৈতিক সংকট এবং সামাজিক কাঠামোর দুর্বলতাকে প্রকট করছে। মেধার এই ক্ষয় শুধু দেশের অর্থনীতিকে নয়, সংস্কৃতিকেও দীর্ঘমেয়াদে বিপন্ন করবে। ব্রেন ড্রেনের এই প্রবণতা রোধে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর