ব্যুরো নিউজ,১৫ নভেম্বর:কলকাতার সড়ক পরিবহণে বাসের রেষারেষি নতুন কিছু নয়, তবে এই ঘটনার পেছনে লুকিয়ে রয়েছে এক বিশেষ কারণ—কমিশন প্রথা। অনেক বাসে চালক এবং কন্ডাক্টরদের বেতন নেই। তাদের আয়ের মূল উৎস হচ্ছে যাত্রী তোলার কমিশন। যত বেশি যাত্রী তোলা, তত বেশি কমিশন পাওয়া। এই কমিশন নিয়েই বাসের মধ্যে রেষারেষি, ওভারটেকিং এবং বিপজ্জনক আচরণ দেখা যায়। এই কমিশনের টানেই চালক ও কন্ডাক্টররা যাত্রী তোলার জন্য ঝুঁকি নেন, এমনকি কখনো কখনো চলন্ত বাস থেকে যাত্রীদের নামতেও বাধ্য করা হয়।
দিল্লির বাতাস ‘ভয়াবহ’, স্কুল বন্ধ, দূষণ নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ
শোকের ছায়া
কমিশন প্রথা আসলে পুরোনো একটি বিষয়। প্রায় সব বাসেই চালক এবং কন্ডাক্টরের বেতন নির্ধারিত নয়, বরং তাদের আয়ের পরিমাণ যাত্রীসংখ্যার উপর নির্ভর করে। চালকরা কমিশন হিসেবে প্রায় ১২ শতাংশ পান, আর কন্ডাক্টররা তার অর্ধেক। এমন পরিস্থিতিতে, বাসের মধ্যে রেষারেষি এবং বিপদজনক গতিবিধি খুব সাধারণ হয়ে উঠেছে। অতীতে এই কমিশন প্রথা বন্ধ করার প্রচেষ্টা হয়েছিল, তবে তা সফল হয়নি। প্রথমে বাম সরকার এবং পরে তৃণমূল সরকারও একই চেষ্টা করেছিল, কিন্তু বাস মালিকদের বিরোধিতার কারণে তা সম্ভব হয়নি।সাম্প্রতিক একটি দুর্ঘটনা এই বিতর্ককে নতুন করে উস্কে দিয়েছে। সল্টলেকে গত মঙ্গলবার একটি দুর্ঘটনায় একটি স্কুলছাত্র মারা যায়। সেদিন সকালে ওই ছাত্র মায়ের সঙ্গে স্কুটিতে ফিরছিল। সল্টলেকের ২ নম্বর গেটের কাছে দুটি বাসের মধ্যে রেষারেষি চলছিল। সেই সময় সল্টলেক-হাওড়া রুটের একটি বাস ওই ছাত্রকে ধাক্কা দেয়, এবং তার ফলে সে মারা যায়। ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক এবং এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের ডিএ বাড়ল আর পশ্চিমবঙ্গের কর্মীদের অপেক্ষা বাড়ল
এই দুর্ঘটনার পরেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর পরিবহণ মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠক হয়, যেখানে কমিশন প্রথা তুলে দেওয়ার প্রস্তাব ওঠে। তবে বাস মালিকরা এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন, এবং তাদের দাবি, কলকাতা ও তার আশপাশের তিন জেলায় কমিশন প্রথা রয়েছে, কিন্তু কেন বাকি জায়গায় দুর্ঘটনা হয় না? তাদের মতে, সরকার আগে সঠিক গাইডলাইন এবং বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করুন, কারণ কমিশন প্রথা তুলে দিলে বহু শ্রমিকের জীবন ও আয়ের উপরে আঘাত আসবে।এখনও এই বিতর্কের কোনো সঠিক সমাধান পাওয়া যায়নি। তবে, দুর্ঘটনা ও কমিশন প্রথা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই থাকছে, এবং সরকারি পদক্ষেপের অপেক্ষায় রয়েছেন সাধারণ মানুষ ও পরিবহণ কর্মীরা।