ব্যুরো নিউজ, ৭ ফেব্রুয়ারি: জোরা প্যাঁচে চাপ বাড়ছে শাহজাহানের! গত এক যুগ তিনি নিজেকে ভেবেছিলেন, সম্রাট শাহজাহান। চারপাশটা সাজিয়েছিলেনও সেভাবেই। মাথায় ঝাড়বাতি, একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি, চার পকেট বোঝাই টাকা, গায়ে সোনার গয়না। সবসময় চারপাশে লেঠেল বাহিনী। আর সর্বোপরি মাথার ওপর বাংলার দুই ক্ষনিকের রানী ও যুবরাজের হাত। অতএব তাকে দেখে কে?
এখনও কমেনি সন্দেশখালির উত্তাপ | ফের পথে বিক্ষোভ
ইডি কর্তাদের মাথা ফাটানোর পরও টানা ৫৩ দিন সাহস দেখিয়েছিলেন। বুকে বল ছিল, ‘দিদি আছে তো’। দিদিও বিধানসভায় দাঁড়িরি সাফাই গেয়েছিলেন শাহজাহানের হয়ে। কিন্তু ৫৩ দিন পরে সেই রাজ্য পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে শাহজাহান বুঝতে পেরেছিলেন তিনি সম্রাট শাহজাহান নন। পাড়ার চড়- থাপ্পড় খাওয়া মস্তান বটে!
শাহজাহানের গ্রেফতারের পর তাকে ভুরিভোজ খাইয়ে রাখা হয়েছিল ভবানী ভবনে। সরকারের শীর্ষ নেতা ও দলের একনম্বর সাংসদের পেয়ারের শাহজাহানকে ভালো খাইয়ে আরামে রাখার দায় বর্তেছিল রাজ্য পুলিশের কর্তাদের ওপর। এমনকি সিবিআই-এর হাতেও দিতেও তাদের অসুবিধা।
ইডি ও সিবিআই সুপ্রিম কোর্টের অর্ডারে বুধবার ৪ টে ১৫ -এর মধ্যে হাতে নেবে শাহজাহানকে। এমন নির্দেশের পরেও শাহজাহানকে বাঁচাতে মরণ-পণ চেষ্টা করছে রাজ্য পুলিশ। মেডিক্যাল টেস্টের নামে নিয়ে গিয়ে বুকে ব্যথার কারনে ‘কাকু’র মত হাসপাতালে রাখার ছক। কিন্তু, সুপ্রিম কোর্ট তাকে থাকতে দিল না নির্বিঘ্নে ভবানিভবনে। লম্বা গাড়ির কনভয় নিয়ে পুলিশ, ইডি ভবানিভবন থেকে যে ভাবে বেরোল তাতে মনে হল যেনও হল্লা চললেন যুদ্ধে। তবে যুদ্ধে নয়, কারাবাসের ঠিকানা নিয়েই এখন শাহজাহান চললেন অনিশ্চয়তার দেশে।
গতকাল জোকা ইএসআই হাসপাতাল থেকে সোজা ঠাই হয় নিজাম প্যালেসে। অবশ্য এর আগে ওই দলের আরও ‘মহারথীদেরও’ ঠিকানা ছিল সেটাই। যেখানে দলের তাবর তাবর নেতা- মন্ত্রীদের চরণ ধুলি পড়েছে সেই স্থান তো শাহজাহানের কাছে ‘স্বর্গ’ সমান… কিন্তু ‘স্বর্গের’ প্রথম রাতটা খুব একটা আরামদায়ক ছিলনা শাহজাহানের কাছে। তবুও কি আর করা যায়?
ভেবেছিলেন পুলিশের ‘মাথা মুড়িয়ে’ বাকি জীবনটা তিনি ‘আলিশান’ হাজতেই কাটাবেন। তবে সেই প্ল্যানে জল ঢেলে দিল শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে শেষমেষ ঠাই হয় তার সিবিআই- এর অধীনে নিজাম প্যালেসেই। ‘আলিশান হাজত’ নয় বটে তবে প্যালেস তো ধার্য করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও সন্দেশখালির ‘বাদশা’র মুখ ‘বাংলার পাঁচ’।
রাত্রিবেলাই ঘণ্টা দু’য়েক জেরা করা হয় তাকে। তারপর রাতের মেনুতে ছিল ভাত,ডাল,সবজিও। ‘মাংসাশী প্রাণীর’ মুখেসেই খাবার হয়তো খুব একটা রোচেনি। ঘুমানোর ব্যবস্থা থাকলেও সেই রাতে নাকি দু’চোখের পাতা এক করতে পারেননি। রাতেও সিআরপিএফ প্রহরা ছিল শাহজানের জন্য।
সিবিআই-ইডির জোরা ‘প্যাঁচে’ শাহজাহান
নিদ্রাহীন রাত কাটানোর পর সকালে চা-বিস্কুট। তবে জল খাবারে ভাতের আবদার করলেও চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে রুটি,সবজিই দেওয়া হয়েছে। কথায় আছে পেটে খেলে তবেই তো পিঠে সয়, আর সেই মতো সকালে এক প্রস্থ খাওন- দাওনের পরই ফের জেরা পর্ব। কিন্তু এর মধ্যেই আসে কাহানি মে ট্যুয়িস্ট! হঠাৎই নিজাম প্যালেসে হাজির হন ইডি কর্তারা। একে সিবিআই, আবার তার সঙ্গে জুটল ইডি। জানা যায়, এদিন শাহজাহানের বয়ান রেকর্ড করতে চান তারা। এবার জোরা চাপের মুখে কি কি পোল খোলেন শাহজাহান সেই দিকেই মুখীয়ে রয়েছে রাজ্যবাসী।