ব্যুরো নিউজ, ১০ অক্টোবর: প্রাক্তন চেয়ারম্যানকে ম্যারাথন জেরা সিবিআইয়ের
রবিবারের পর সোমবারও রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভাগুলিতে সিবিআই অভিযান অব্যাহত। সোমবার সকালে ডায়মন্ডহারবার পুরসভাতে হানা দেয় সিবিআইয়ের প্রতিনিধি দল। বর্তমান চেয়ারম্যান প্রণব দাসকে বেশ কিছুক্ষণ ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই আধিকারিকরা। পাশাপাশি প্রাক্তন চেয়ারম্যান মিরা হালদারের বাড়িতে গিয়ে তল্লাশি অভিযান চালায় সিবিআই আধিকারিকরা।
এর আগে নিয়োগ সংক্রান্ত নথি চেয়ে ডায়মন্ডহারবার পুরসভাকে নোটিশ দেয় ইডি। কেন্দ্রের তদন্তকারী সংস্থার নোটিশ অনুযায়ী সমস্ত তথ্য পাঠিয়েও দেয় পুরসভা। সেই সময় পুরসভার বর্তমান চেয়ারম্যান প্রণব দাস বলেন, ‘নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে, সেটা বলতে পারব না, সেটা আদালতের বিষয়।’ এরপর সোমবার সিবিআইয়ের ২টি দল ডায়মন্ডহারবার পুরসভা ও প্রাক্তন চেয়ারম্যানের বাড়িতে একসঙ্গে হানা দেয়।
সিবিআই তদন্তে কুনালের বিস্ফোরক মন্তব্য
জানা গিয়েছে, ২০১৬ সালে ডায়মন্ডহারবার পুরসভায় ১৬ জনকে নিয়োগ করা হয়েছিল। পরীক্ষা পরিচালনার দায়িত্বে ছিল অয়ন শীলের সংস্থা। যদিও সেই বিষয়ে প্রাক্তন চেয়ারম্যান মীরা হালদার জানিয়েছিলেন, ২০১৬ সালের শেষ থেকে ১৭ সালের অগাস্টের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া হয়েছিল। তবে সেখানে দুর্নীতি হয়েছে বলে তিনি মনে করেননা।
তাঁর দাবি, বোর্ড অফ কাউন্সিলর আলোচনা করে যে ভাবে নিয়ম মাফিক কাজ করা হয় সেই ভাবেই এজেন্সি মারফৎ পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। সেক্ষেত্রে পুরসভা সঠিকভাবেই এগিয়েছিল পাশাপাশি অ্যাপোয়েন্টমেন্ট দিয়েছিল বলে দাবি করেন তিনি।
একইসঙ্গে অয়ন শীল বলে কেও আছেন, সেটাও তাঁদের পক্ষে জানা সম্ভব ছিলনা বলেই দাবি করেন মীরা দেবী। পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মিরা হালদারের বাড়িতে সিবিআইয়ের ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল যান এবং দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তল্লাশি চালায়। পুরসভার নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সিবিআইয়ের আধিকারিকেরা মিরা হালদারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদের পর সিবিআই-এর আধিকারিকেরা বাড়ি থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি নিয়ে যায়।
ডায়মন্ডহারবার পুরসভাতে সিবিআইয়ের হানার ঘটনায় অভিষেক গড়ে চড়েছে রাজনৈতিক পারদ। সিবিআইয়ের এই ভূমিকায় কার্যত খুশি বিরোধীরা। এ বিষয়ে সিপিএম নেতা দেবাশীষ ঘোষ বলেন, এই নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আমরা আন্দোলন করছি। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর মহামান্য আদালতের নির্দেশে দুর্নীতির মামলার তদন্ত ভার নেয় সিবিআই। সিবিআই-এর তদন্ত অবিলম্বে শেষ করে দোষীদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আবেদন জানাচ্ছি আমরা।
অপরদিকে দুর্নীতি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে রাজ্যের শাসক দলকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে রাজ্যের বিরোধী দলের নেতারা। বিজেপির নেতা সুফল ঘাটু জনান, ডায়মন্ড হারবার পুরসভায় যে কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় চলেছিল সেই কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া অস্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ হয়েছে। এই কর্মী নিয়োগের পিছনে আর্থিক লেনদেন রয়েছে। তদন্তকারী সংস্থা (সিবিআই) যেভাবে তদন্তের অগ্রগতি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তাতে আমার মনে হয় এই নিয়োগ দুর্নীতি কান্ডের শিকড় কতদূর বিস্তৃত তা উন্মোচন হবে। যদিও স্বাভাবিক ভাবেই বিরোধীদের অভিযোগ কার্যত হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান প্রণব দাস।
প্রণব দাস জানান, নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলার তদন্ত করতে সিবিআই এর আধিকারিকেরা ডায়মন্ডহারবার পুরসভাতে এসেছে। তাদেরকে আমরা বিভিন্ন নথি দিয়ে পূর্ণ সহযোগিতা করছি। এই নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে পুরসভা কোনভাবেই যুক্ত নেই। তদন্তের স্বার্থে সিবিআই আধিকারিকদের সাহায্য করতে পেরে আমরা অত্যন্ত গর্বিত। দীর্ঘ ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদের পর প্রাক্তন চেয়ারম্যান মিরা হালদার জানান নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আমাকে সিবিআইয়ের আধিকারিকেরা বেশ কিছুক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করে।
জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি আধিকারিকেরা আমার কাছ থেকে নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বেশ কিছু নথি নিয়ে যায়। নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির মামলায় আমি কোনোভাবে যুক্ত নই। স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ হয়েছে। বেশ কিছুক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদের পর বেশকিছু নথি নিয়ে সিবিআই আধিকারিকেরা চলে যায়। মিরা দেবীর বাড়িতে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদের পর সিবিআইয়ের আধিকারিকেরা পুনরায় ডায়মন্ডহারবার পুরসভাতে আসেন। সেখানে ২০১৬ সালে নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি তারা খতিয়ে দেখে। ইভিএম নিউজ