ব্যুরো নিউজ,৩১ মার্চ: বয়স শুধুই একটি সংখ্যা, তা বহুবার প্রমাণিত হয়েছে। কেউ ষাট বছর পেরিয়ে পর্বত আরোহণ করছেন, কেউ আবার নতুন করে শুরু করছেন লেখাপড়া। তবে জার্মানির ৬৬ বছর বয়সি ইতিহাসবিদ এবং মিউজিয়াম পরিচালক আলেকজান্দ্রা হিলডেব্র্যান্ডট এমন এক ঘটনা ঘটিয়েছেন, যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের সমস্ত প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। এই বয়সে তিনি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে জন্ম দিয়েছেন তাঁর দশম সন্তানের! চিকিৎসকেরা বিস্মিত, কারণ সাধারণত ৪৫ বছর বয়সের পর নারীদের প্রাকৃতিকভাবে গর্ভধারণের সম্ভাবনা মাত্র ৫% থাকে। কিন্তু কোনও প্রকার ফার্টিলিটি ট্রিটমেন্ট ছাড়াই তিনি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন।
৬৬ বছর বয়সে দশম সন্তানের জন্ম, গত ১৯ মার্চ, জার্মানির বার্লিনের শ্যারিট হাসপাতালে হিলডেব্র্যান্ডট সফলভাবে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। শিশুটির নাম রাখা হয়েছে ফিলিপ, এবং তার ওজন ছিল প্রায় সাড়ে তিন কেজি। জন্মের পর তাকে কিছুক্ষণ ইনকিউবেটরে রাখা হলেও চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, সে সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছে এবং স্বাভাবিকভাবে মায়ের বুকের দুধ খাচ্ছে। আলেকজান্দ্রা প্রথম মা হয়েছিলেন ১৯৭৭ সালে, মাত্র ১৮ বছর বয়সে। এরপর একে একে আরও নয়টি সন্তানের জন্ম দেন তিনি। ৬২ এবং ৬৪ বছর বয়সেও তিনি মা হয়েছিলেন, যা তখনও সবাইকে বিস্মিত করেছিল। তবে ৬৬ বছর বয়সে আবারও মা হওয়ার ঘটনা সত্যিই বিরল।
ভূমিকম্প না কি যুদ্ধের ছক? মায়ানমারের ঘটনার পেছনে গোপন সত্য উন্মোচন করুন!
তার পরিবারের সবচেয়ে বড় সন্তান ৪৫ বছর বয়সি স্বেতলানা, এরপর ৩৬ বছর বয়সি আরতিওম। এরপর একে একে রয়েছে যমজ এলিজাবেথ ও ম্যাক্সিমিলিয়ান (১২ বছর), আলেকজান্দ্রা (১০), লিওপোল্ড (৮), আনা (৭), মারিয়া (৪) এবং ক্যাথরিনা (২)। এবার তাদের পরিবারের নতুন সদস্য হল ছোট্ট ফিলিপ।
চিকিৎসকরা বিস্মিত, কিন্তু কীভাবে সম্ভব হলো?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন ঘটনা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে বিরল। কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞ ডাঃ অ্যালেক্স রবেলস জানিয়েছেন, ৪৫ বছরের পর প্রাকৃতিকভাবে গর্ভধারণের সম্ভাবনা মাত্র ৫%, আর ৬৬ বছর বয়সে সেটি কার্যত অসম্ভব। তবু হিলডেব্র্যান্ডট কীভাবে এটি করলেন?
তাঁর মতে, সুস্থ জীবনযাপনই তাঁকে এতদিন ধরে ফার্টিলিটি ধরে রাখতে সাহায্য করেছে।তিনি বলেন, “আমি প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর খাবার খাই, রোজ এক ঘণ্টা সাঁতার কাটি, দুই ঘণ্টা দৌড়াই, ধূমপান বা মদ্যপান করি না। আর কখনও গর্ভনিরোধক ব্যবহার করিনি।” এছাড়া তিনি মনে করেন, আধুনিক সমাজে শিশুদের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো উচিত। তাঁর ভাষায়,
“এখন মানুষের মধ্যে শিশুদের নিয়ে একধরনের বিরূপ মনোভাব তৈরি হয়েছে। কিন্তু শিশুদের সঙ্গে সময় কাটালে তা বদলে যেত। আমাদের আরও বেশি সন্তানের জন্ম দেওয়া উচিত।”
অ্যাম্বুলেন্সে জন্ম নিল ১৭তম সন্তান! কিন্তু তারপর যা ঘটল, তা অবিশ্বাস্য…
বয়স কি সত্যিই শুধুই সংখ্যা? চিকিৎসকেরা বলছেন, এত বেশি বয়সে গর্ভধারণ মা এবং শিশুর উভয়ের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তবু আলেকজান্দ্রা হিলডেব্র্যান্ডট নিজের শারীরিক সক্ষমতা এবং আত্মবিশ্বাসের জোরে সব বাধা অতিক্রম করেছেন।সমালোচকরা প্রশ্ন তুললেও, এই ঘটনা মাতৃত্ব এবং জীবনের সীমাবদ্ধতাকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে। চিকিৎসাবিজ্ঞান বিস্মিত, কিন্তু কে জানে—হয়তো ভবিষ্যতে ফিলিপের আরও ভাই-বোনও হতে পারে!