ইভিএম নিউজ, ৯ মার্চঃ সন্তান জন্ম দেওয়ার পরই জরায়ুতে টিউমার। বিরল এমন ঘটনার সাক্ষী থাকল বছর সাতাশের তরুণী। মাস দুয়েক আগে সন্তান প্রসব করেন তিনি। সাধারণ সি-সেকশন করেই হয়েছিল তাঁর সন্তান। কোনও রকম ত্রুটি ছিল না সেই অপারেশনে। তারপরেও কিকরে টিউমার হল? চিকিৎসকরাও এমন ঘটনায় হতবাক। এমতাবস্থায় জরায়ু বাদ না দিয়ে এমনকি পেট না কেটেই আধুনিক পদ্ধতির মাধ্যমে বছর সাতাশের তরুণীর সমস্যার সমাধান করলেন চিকিৎসকরা।

সিএমআরআই  হাসপাতালের ইন্টারভেশন ও এন্ডো-ভাস্কুলার রেডিওলজিস্ট ডা. অভীক ভট্টাচার্য চিকিৎসা করেন ওই তরুণীর। তিনি বলেন, তরুণীকে প্রথমে ভর্তি করা হয়েছিল যেখানে, সেইখানে হিসটেরেকটমির নিদান দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। এই পদ্ধতির মাধ্যমে জরায়ুকে শরীর থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। এটির অনেক প্রক্রিয়া রয়েছে। কোনও কোনও সময় রোগীর পরিস্থিতি বুঝে একটি বা দুটি ওভারিই বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। আবার ফ্যালোপিয়ান টিউব বাদ দিতেও হয়। এক্ষেত্রে রোগীর জরায়ু বাদ দেওয়াটা উচিত মনে হয়নি সিএমআরআই চিকিৎসকদের। তিনি আরও বলেন, তরুণীর সন্তানের বয়স ৬০ দিন। পুরোপুরি ব্রেস্ট মিল্কের ওপরেই নির্ভরশীল এছাড়া রোগীর বয়সও কম। তাই হিসটেরেকটমি না করে ইউরেটাইন আর্টারি এম্বোলাইজেশন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

কি এই এম্বোলাইজেশন? সাধারনত ২১ থেকে ৫০ বছর বয়সি মহিলাদের মধ্যে জরায়ুতে এই ধরনের টিউমার লক্ষ্য করা যায়। একে  ফাইব্রয়েডস বলে। মূলত তিনটি জায়গায় ফাইব্রয়েডস হতে পারে। প্রথমত, জরায়ুর দেওয়ালের বাইরের দিকে, যাকে সাসেরাস বলে। দ্বিতীয়ত, জরায়ুর দেওয়ালের মধ্যে, একে ইন্ট্রামিউরাল বলে। তৃতীয়ত, জরায়ুর যে অংশ থেকে ঋতুস্রাব হয় সেখানে টিউমার হলে তাকে সাব-মিউকাস বলে। কিন্তু এদের মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক ফাইব্রয়েড টিউমার।

এই ফাইব্রয়েড টিউমারে অস্ত্রপাচার করে জরায়ু বাদ দিতে হয়। এছাড়া রোগীর শারীরিক পরিস্থিতি বুঝে ইউটেরাইন আর্টারি এম্বোলাইজেশন করা যেতে পারে। এতে রোগীর যন্ত্রণা কম হয়, জরায়ু বাদ দিতে হয় না এমনকি একদিনেই রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এই অপারেশন করতে প্রায় এক ঘন্টা সমইয় লাগে। এক্ষেত্রে ছুরি-কাঁচি দিয়ে অস্ত্রপাচার করতে হয় না এমনকি পেট কাটারও দরকার নেই। শুধুমাত্র পায়ের পাতার অংশের ত্বকে একটি ছোট ছিদ্র করে সেখান দিয়ে ক্যাথিটার একটি টিউব আর্টারি বা ধমনিতে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। কারণ, ধমনী যদি জরায়ুতে রক্ত সঞ্চালন না করতে পারে তবে জরায়ুর টিউমার আর রক্ত খেয়ে পুষ্ট হবে না। আকারেও বারতে পারবে না। সেটি আসতে আসতে চুপসে গিয়ে নষ্ট হয়ে যাবে। তার কোষগুলোও মরে যাবে। আর তাই চিকিৎসকরা এই পদ্ধতিই অবলম্বন করেন। চিকিৎসকরা ওই ছিদ্রপথে ক্যাথিটার টিউব ঢুকিয়ে তার মধ্যে ছোট জেলাটিন বা প্লাস্টিকের কণা ঢুকিয়ে ধমনীর মুখটা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর ফলে ধমনী আর জরায়ুতে রক্ত পৌঁছে দিতে পারে না। তখন ফাইব্রয়েড টিউমার চুপসে যেতে থাকে।

এই পদ্ধতিতে এন্ডোভাস্কুলার ও ইন্টারভেনশনাল রেডিওলজি ব্যবহার করেন চিকিৎসকরা। আর তাই অপারেশনের কিছুক্ষণের মধ্যেই রোগী সুস্থ হতে শুরু করে। যন্ত্রণা কম থাকার জন্য রোগী স্বাভাবিক জীবনেও ফিরতে পারে। তবে বছর সাতাশের তরুণী বলেন, চিকিৎসকেরা তাঁকে নতুন জীবন দান করেছে।

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর