প্রবীর বন্দ্যোপাধ্যায়, ৯ জানুয়ারি: কে ছিলেন বিবেকানন্দ?
তিনি আসলে নরেন্দ্র নাথ দত্ত। তবে সারা বাংলার সঙ্গে বিশ্ববাসী তাঁকে চেনে বিবেকানন্দ হিসাবে। স্বয়ং ঠাকুর রামকৃষ্ণ দেব ওরফে এক সময়কার গদাধর চট্টোপাধ্যায় তাঁকে আশীর্বাদ করে বলেছিলেন, ‘বিশ্বকে বিবেক দিয়ে তুই হবি বিবেকানন্দ’। এহেন নরেন্দ্র নাথ জন্মে ছিলেন উত্তর কলকাতার এক কায়স্থ দত্ত পরিবারে। পিতা বিশ্বনাথ দত্ত ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের অ্যাটোরনি। মা ভুবনেশ্বরী ছিলেন গৃহিণী শিমলার নন্দলাল বসুর কন্যা। ছোটবেলা থেকেই তিনি ভক্তিমতি নারী হিসাবে পরিচিত ছিল। তাঁর প্রথম কয়েকটি সন্তানের মৃত্যু হয়। তার পড়ে জন্ম হয় কন্যা সন্তানের। কিন্তু, একটি পুত্রের আশায় তিনি এক কাশিবাসী আত্মীয়াকে নিয়মিত পুজো দেওয়ার ব্যবস্থা করে সেখানকার বিশ্বনাথ মন্দিরে। এরপর জন্ম হয় নরেনের।
সঙ্গীত জগতে নক্ষত্র পতন | প্রয়াত উস্তাদ রাশিদ খান
ছোটবেলা থেকেই নরেনের ছিল অপূর্ব রুপ ও গায়ের রঙ। কিন্তু ছোটবেলা থেকে নরেনের কাণ্ডকলাপে ত্রাহি ত্রাহি রব উঠতো ভুবনেশ্বরী দেবীর। তাঁর বিশ্বাস ছিল শিবের অসীম ক্রিপায় তাঁর পুত্র লাভ। কিন্তু ডানপিটে নরেনের দিকে তাকিয়ে এক সময় তাঁর মা আক্ষেপ করে সেই শিবের মূর্তির দিকে চেয়ে বলেছিলেন, ‘ ঠাকুর চাইলাম একটা শিবের মতো ছেলে। আর তুমি কি না পাঠালে একটা ভূত’। কিন্তু মা, যিনি নাকি আগাম সব জানতে পারেন, তিনিও বুঝতে পারেননি যে সেই ভূতি একদিন হয়ে উঠবেন স্বামী বিবেকানন্দ। এমনকি রামকৃষ্ণ দেব তাঁর পার্শ্বচরদের থেকে নরেনের সমালোচনা একদমি পছন্দ করতেন না। ঠাকুর বলেছিলেন, নরেন হলো, ‘সপ্ত ঋষির এক ঋষি’। ফলে বিবেকানন্দ মানবতাবাদকে বুঝেছিলেন নিরপেক্ষ ও যুক্তিবাদী মন দিয়ে। সেখানে না ছিল কুসংস্কার, না ছিল সাম্প্রদায়িকতা। ছিল শুধু জনকল্যাণের বার্তা। আর কর্মযোগ, ভক্তিযোগের বানী। পিতার ব্যক্তিত্ব, উদারতা ও ধর্মপ্রাণ মায়ের ভাবন ব্যক্তিত্ব গথনে সাহায্য করেছিল বিবেকানন্দকে। এহেনও নরেনের আরও একটা। ডাক নাম ছিল বীরেশ্বর। আর ঠাকুর রামকৃষ্ণদেব তাঁকে ডাকতেন বিলে নামে। ব্রিটিশ সাহেবের দেওয়া ঠিকানা জেনে এক শব্দের অর্থ খুঁজতে তৎকালীন জেনারেল অ্যাশেম্বলীজ ইন্সটিটিউশন তথা বর্তমান স্কটিশচার্জ কলেজের বন্ধুদের নিয়ে চলে গিয়েছিলেন দক্ষিণেশ্বরে। কিন্তু, ঠাকুরের চেয়েও মা সারদামণিকে দেখে আকৃষ্ট হয়েছিলেন বেশি। সেখানেই দেখতে পেয়েছিলেন দেবীর রুপ। ত্যাগের চিহ্ন। সকলকে আপন করে নেওয়ার ছবি। কলেজ পাশ করে চাকরীর কম চেষ্টা করেননি। কিন্তু তা মেলেনি। মেলেনি? নাকি নরেন কেরানি হোক এটা ঈশ্বর চাননি? হলে বিশ্ববাসী স্বামীজীকে পেতেন না। যুব সমাজে পথ প্রদর্শককে হারাতো বিশ্ববাসী। আর সেজন্যই মৃত্যু আজও ছিনিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি বিলেকে। ঠাকুর রামকৃষ্ণ আজও আছেন। আজও তাঁর আদরের বিলে আছেন বাঙ্গালীর হৃদয়ে ও বিশ্বজুড়ে। ইভিএম নিউজ