ব্যুরো নিউজ, ৩ অক্টোবর: কী সেই রায় জমিদার বাড়ির পুজোর ঐতিহ্য?
এখনও পুরনো রীতি মেনেই পুজো হয়ে আসছে রায় জমিদার বাড়ির, জমিদারি চলে গেলেও পুজোতে কোন খামতি নেই। মালদা শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে ভারত বাংলাদেশ সিমান্তে তিলাসনে রয়েছে জমিদার বাড়ি। শূন্যে ৫ রাউন্ড বন্দুকের গুলি চালিয়ে রায় জমিদার বাড়ির দূর্গাপুজোর সূচনা করা হয়।
১৫৮ তম বর্ষে জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো
২২৩ বছর ধরে চলে আসা এই রেওয়াজ আজও অব্যহত মালদা জেলার পূর্বপ্রান্তে হবিবপুর থানার সিংগাবাদ তিলাসন এলাকার জমিদার বাড়িতে। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাজনের ফলে এই জমিদারী স্টেটের সিংহভাগ অংশ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান বর্তমান বাংলাদেশে অংশে পড়লেও আজও ভারতীয় ভূখণ্ডে সীমান্তের কাঁটাতার থেকে ৫০ মিটার দূরত্বে অবস্থিত বিশাল রায় জমিদার বাড়ি। সময়ের সাথে জমিদারি চলে গিয়েছে। সুবিশাল জমিদার বাড়ির বিভিন্ন অংশ জুড়ে ধরেছে ফাটল। কিন্তু এখনও অক্ষুন্ন রয়েছে ঐতিহ্য।
সুদুর উত্তরপ্রদেশ থেকে ডাল ব্যবসা করতে বাংলায় এসেছিলেন অবোধ নারায়ণ রায়। মালদা জেলার হবিবপুর থানার সিঙ্গাবাদ স্টেশনে ট্রেনে করে এই ডাল নিয়ে আসসেন তিনি। এরপর নৌকাপথে সেই ডাল ঢাকা রাজশাহী-সহ কলকাতার খিদিরপুর বন্দরে বিক্রীর উদ্দেশ্যে যেত। ব্যবসার সুবিধার জন্য এই এলাকায় ব্রিটিশ সরকারের কাজ থেকে তৎকালীন প্রায় ৩ হাজার টাকায় জমিদারীত্ব ক্রয় করেন তিনি। এরপর এই এলাকায় শুরু করেন বসবাস।
পরবর্তীতে তিনজন সাধুর পরামর্শে দেবী দূর্গার আরাধনা শুরু করেন। ২২৩ বছর ধরে এই জমিদার বাড়িতে দেবীর পূজা হয়ে আসছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জমিদারির বেশির ভাগ অংশ চলে যায় সীমান্তের কাঁটাতারের ওপারে অর্থাৎ বাংলাদেশে। বাকি অংশ রয়ে যায় ভারতবর্ষে। সেই ব্রিটিশ শাসকের আমল থেকে এই রায় জমদার বাড়ির পূজো বেশ জনপ্রিয়। হাজার হাজার মানুষ এই পুজোতে অংশগ্রহণ করেন। এমনকি দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও সীমান্তের ওপর থেকে বেঢ়া জাল ডিঙিয়ে মানুষ আসতেন এই পুজো দেখতে।
কিন্তু বর্তমানে এখন সেই রকম পরিস্থিতি নেই। তবে রয়ে গিয়েছে ঐতিহ্য, রয়েছে ইতিহাস। প্রাচীন এই জমিদার বাড়ির দেওয়ালে ফাটল ধরলেও এখনও দেওয়ালে রয়েছে বিশাল কুমিরের ছাল। যা তারই পূর্বপুরুষরা শিকার করেছিলেন। এখনও এই পুজো উপলক্ষে চারদিন থাকে পাত পেড়ে খাওয়ার ব্যবস্থা। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই সীমান্তবর্তী গ্রামে এই পুজোতে অংশগ্রহণ করতে আসেন মানুষ।
এই জমিদার স্টেটের বংশধর রাকেশ কুমার রায় জানান, এই বছরও চিরাচরিত প্রথা মেনে সপ্তমীর দিন পুনর্ভবা নদী থেকে পুজোর জন্য জল নিয়ে আসা হবে। সেই সময় শূন্যে পাঁচ রাউন্ড গুলি চালিয়ে এই পুজোর সূচনা হয় এই বছরও তাই হবে। এই পুজোতে ভোগ রান্না থেকে শুরু করে সমস্ত কিছু করেন উত্তরপ্রদেশের মৈথিল ব্রাহ্মণরা। দশমীর দিন এই তিলাসন গ্রামের পাশে পূর্ণভবা নদীতেই প্রতিমা বিসর্জন করা হয়। রায় জমিদার পরিবারের বংশধর রাকেশ কুমার রায় বলেন, তাঁর পূর্বপুরুষের ইতিহাসের অন্যতম সাক্ষী এই পুজো আজও সমাদরে পালিত হয়ে আসছে। ইভিএম নিউজ