ব্যুরো নিউজ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : একটি সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগানোর মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জে কে এল এফ (JKLF) প্রধান ইয়াসিন মালিক সম্প্রতি দিল্লি হাইকোর্টে একটি হলফনামায় চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন। মালিকের অভিযোগ, ২০০৬ সালে পাকিস্তানের জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈবা (LeT) প্রধান হাফিজ সাঈদের সঙ্গে তার বৈঠকটি তিনি নিজের ইচ্ছায় করেননি, বরং ভারত সরকারের ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (IB)-র নির্দেশে করেছিলেন। মালিকের দাবি, এই বৈঠকটি একটি ‘ব্যাকচ্যানেল’ শান্তি প্রক্রিয়ার অংশ ছিল, কিন্তু পরে এটিকে তার সঙ্গে জঙ্গিগোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠতার প্রমাণ হিসেবে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়।
আইবি-র কথিত ভূমিকা
মালিকের হলফনামা অনুযায়ী, ২০০৫ সালের কাশ্মীর ভূমিকম্পের পর তার পাকিস্তান সফরের আগে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর তৎকালীন বিশেষ অধিকর্তা ভি কে যোশী দিল্লিতে তার সঙ্গে দেখা করেন। যোশী তাকে শুধুমাত্র পাকিস্তানি রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে নয়, বরং হাফিজ সাঈদের মতো জঙ্গি নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করে শান্তি প্রক্রিয়াকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য বলেন। মালিকের দাবি, এরপর হাফিজ সাঈদ বিভিন্ন জিহাদি গোষ্ঠীর একটি সমাবেশ আয়োজন করেন, যেখানে মালিক জঙ্গিদের শান্তি ও সমঝোতার পথে আসার আহ্বান জানিয়ে ভাষণ দেন।
মনমোহন সিং-এর প্রতিক্রিয়া
মালিকের হলফনামার সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর অংশটি হলো তার এই দাবি যে, পাকিস্তান থেকে ফিরে আসার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং এনএসএ (National Security Advisor) এম কে নারায়ণের উপস্থিতিতে তাকে একটি ব্রিফিং দিতে বলা হয়েছিল। মালিকের স্বীকারোক্তি , মনমোহন সিং নিজে তাকে কট্টরপন্থী নেতাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য ধন্যবাদ জানান এবং তাকে “কাশ্মীরে অহিংস আন্দোলনের জনক” বলেও অভিহিত করেন। মালিকের দাবি, এই ঘটনা প্রমাণ করে যে তার কার্যক্রম সরকারের অনুমোদিত ছিল, এবং তিনি স্বাধীনভাবে জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।
রাজনৈতিক প্রভাব ও আইনি চ্যালেঞ্জ
মালিক তার হলফনামায় আরও জানান যে, ভিপি সিং থেকে অটল বিহারী বাজপেয়ী পর্যন্ত বিভিন্ন সরকার কাশ্মীর বিষয়ক আলোচনা এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে তাকে যুক্ত করেছিল। তার এই দাবি সত্যি হলে, ২০০৬ সালে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে ভারতের গোপন শান্তি কৌশল নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠতে পারে।
তবে, মালিকের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অভিযোগের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে—যার মধ্যে ১৯৯০ সালে চারজন ভারতীয় বিমান বাহিনীর কর্মকর্তাকে হত্যা এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মুফতি মোহাম্মদ সাঈদের কন্যাকে অপহরণের ঘটনাও রয়েছে। কাশ্মীরি পণ্ডিতদের কাছে মালিক এখনও ঐতিহাসিক বিশ্বাসঘাতকতা ও হিংসার প্রতীক হয়ে আছেন। ফলে তার এই নতুন দাবিগুলো সংবেদনশীল এবং বিস্ফোরক।
এনআইএ-র মৃত্যুদণ্ডের আবেদন
মালিকের এই হলফনামা এমন এক সময়ে সামনে এলো যখন দিল্লি হাইকোর্টে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (NIA) তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডকে মৃত্যুদণ্ডে উন্নীত করার জন্য আবেদন করেছে। আদালত এই বিষয়ে মালিককে ১০ নভেম্বরের মধ্যে জবাব দিতে নির্দেশ দিয়েছে। ২০১৭ সালের একটি সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগানোর মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে ২০২২ সালে মালিক যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পান। সেই সময় বিচার আদালত রায় দেয় যে তার মামলাটি মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার জন্য ‘বিরলতমের বিরল’ (rarest of rare) বিভাগের মানদণ্ড পূরণ করে না। (এমন মনোভাব সম্প্রতি ধর্ষণ ও খুনের অভিযুক্তের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে)।
জে কে এল এফ-এর উপর নিষেধাজ্ঞা বহাল
এনআইএ-র অভিযোগ অনুযায়ী, মালিক হাফিজ সাঈদ, সৈয়দ সালাহউদ্দিন এবং শাব্বির শাহ-এর মতো ব্যক্তিদের সঙ্গে পাকিস্তানের জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে কাশ্মীরে অস্থিরতা ছড়ানোর চেষ্টা করেছেন। এদিকে, একটি ইউএপিএ (UAPA) ট্রাইব্যুনাল জে কে এল এফ-এর উপর পাঁচ বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞা বাড়িয়েছে। ট্রাইব্যুনাল জোর দিয়ে বলেছে যে, বিচ্ছিন্নতাবাদ বা বিচ্ছিন্নতাবাদী আদর্শকে প্রচার করে এমন কোনো সংস্থাকে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না।



















