shanidev and hanumanji

ব্যুরো নিউজ ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : হিন্দু ঐতিহ্য, পুরাণ ও ধর্মগ্রন্থে এমন কিছু নাম আছে যা শুনলে ভয় ও শ্রদ্ধা উভয়ই জাগে। এই নামগুলোর মধ্যে অন্যতম হলেন শনিদেব, যিনি কর্মফল, শৃঙ্খলা এবং বিলম্বের প্রতীক। অন্যদিকে, হনুমান হলেন ভক্তি, সাহস এবং অবিচল বিশ্বাসের মূর্ত প্রতীক। যখন এই দুই মহাজাগতিক শক্তি একত্রিত হন, তখন এক অসাধারণ ঘটনা ঘটে। ন্যায় ও কর্মের কঠোরতা যেন ভক্তির উষ্ণতায় নমনীয় হয়ে ওঠে, কারণ বিশুদ্ধ ভক্তি যেখানে থাকে, সেখানে বিচার করার কিছু অবশিষ্ট থাকে না।

শনিদেব কে এবং কেন আমরা তাঁকে ভয় পাই?

শনিদেব, সূর্যদেবতার পুত্র, শনি গ্রহের অধিপতি। শনি গ্রহ মূলত শৃঙ্খলা, বিলম্ব, বৈরাগ্য এবং কর্মফলের সঙ্গে যুক্ত। ধর্মশাস্ত্র অনুসারে, শনিদেব নিশ্চিত করেন যে কোনো কর্মের ফল যেন অপ্রদত্ত না থাকে। তিনি ক্রোধের বশে কাউকে শাস্তি দেন না, বরং মহাজাগতিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার জন্য তাঁর বিচার পরিচালিত করেন। কিন্তু তাঁর উপস্থিতি অনেককে ভীত করে তোলে, কারণ রাজা বা ভিখারি, ধার্মিক বা পাপী – কেউই তাঁর দৃষ্টি থেকে রক্ষা পান না।

তবে এর একটি ব্যতিক্রম আছে। এমন একজন সত্ত্বা আছেন যাঁর পবিত্রতা এত উজ্জ্বল, যাঁর ভক্তি এত শক্তিশালী যে শনিদেবের অদম্য শক্তিও তাঁকে প্রভাবিত করতে পারেনি।


Durga Puja : দুর্গার রহস্যময় চৌষট্টি যোগিনী কেন আজও প্রাসঙ্গিক ?

সেই সাক্ষাৎ: শনির সাথে হনুমানের মিলন

বিভিন্ন পুরাণ যেমন ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ, স্কন্দ পুরাণ এবং হনুমান চালিসা অনুসারে, ভগবান রামের সাহায্যে লঙ্কায় যাওয়ার পথে হনুমান দেখেন, রাক্ষসরাজ রাবণ শনিদেবকে বন্দী করে রেখেছেন। রাবণের ক্রোধের ভয়ে কেউ শনিদেবকে মুক্ত করার সাহস পাচ্ছিল না। কিন্তু হনুমান নির্ভয়ে রাবণের প্রহরীদের পরাস্ত করে অনায়াসে শনিদেবকে তাঁর কষ্ট থেকে উদ্ধার করেন। হনুমানের নির্ভীক করুণা দেখে শনিদেব অত্যন্ত কৃতজ্ঞ হলেন এবং তাঁকে একটি বর দিতে চাইলেন।

হনুমান, তাঁর নিঃস্বার্থ স্বভাব অনুযায়ী, নিজের জন্য কিছুই চাইলেন না। তিনি কেবল এই বর চাইলেন যে, যারা আন্তরিকভাবে তাঁর নাম জপ করবে বা ভক্তির সাথে তাঁর পূজা করবে, শনিদেব যেন তাদের কখনো কষ্ট না দেন। শনিদেব সানন্দে এই বর দিলেন।

এই প্রতিশ্রুতির গভীর অর্থ

প্রথমত, এটি একটি ঐশ্বরিক চুক্তি: দুটি শক্তির মধ্যে একটি বোঝাপড়া। কিন্তু গভীর মনোযোগ দিলে এই প্রতিজ্ঞা এক গভীর আধ্যাত্মিক সত্য প্রকাশ করে। শনিদেব হলেন আমাদের নিজস্ব কর্মের প্রতিচ্ছবি, কর্মফলের মূর্ত প্রতীক। তাঁর প্রভাব থেকে কোনো কৌশল, আচার-অনুষ্ঠান বা ভয় দ্বারা “পালাতে” পারা যায় না। কিন্তু হনুমান কর্মের চেয়েও শক্তিশালী কিছুকে উপস্থাপন করেন: বিশুদ্ধ ভক্তি, অহংকারহীন ভক্তি, প্রত্যাশাহীন কর্ম, এবং ভয়হীন সাহস।

যেখানে এমন ভক্তি আছে, সেখানে কর্মফল যেন দ্রবীভূত হয়ে যায়। কেন? কারণ হনুমানের ভক্তরা স্বার্থপর কামনা থেকে কাজ করেন না। তাদের হৃদয় ধর্মের সাথে সংযুক্ত। আর যখন আপনি ধর্মের পথে চলেন, তখন শনিদেবের কাজ এমনিতেই সম্পন্ন হয়ে যায়। তখন শনিদেবের সংশোধনের জন্য আর কিছুই বাকি থাকে না। শনিদেব হনুমানের ভক্তদের অব্যাহতি দেননি কারণ তিনি পরাভূত হয়েছিলেন, বরং তিনি এমনটা করেছেন কারণ প্রকৃত ভক্তি শনিদেবের হস্তক্ষেপ করার আগেই কর্মকে বিশুদ্ধ করে তোলে।


Durga Puja : সিংহবাহিনী দুর্গা: জীবনের কঠিন পথে আমাদের পথপ্রদর্শক

ভয় বনাম আত্মসমর্পণ

অনেকেই শনিদেবের পূজা করেন ভয়ে। তাঁরা শনিবারে উপবাস করেন, মন্দিরে যান বা কালো পোশাক পরেন, এই আশায় যে “দুঃখ এড়ানো যাবে।” কিন্তু দুঃখ কোনো শাস্তি নয়, এটি আমাদের নিজস্ব কর্মফল। এবং এটিকে অতিক্রম করার একমাত্র উপায় হলো এড়িয়ে যাওয়া নয়, বরং নিজের জীবনকে ধর্মের সাথে সংযুক্ত করা।

হনুমান আমাদের শেখান যে, সর্বোচ্চ সুরক্ষা হলো প্রতিকুলতা থেকে পলায়ন নয়, বরং ঈশ্বরের প্রতি আত্মসমর্পণ। ভয় নয়, বিশ্বাস। শনিদেবের দেওয়া প্রতিশ্রুতি কেবল সুরক্ষা নয়, এটি একটি আয়না। এটি আমাদের দেখায় যে যখন আমরা হনুমানের মতো বিনয়ী, ভক্ত, নিঃস্বার্থ এবং শক্তিশালী হয়ে উঠি, তখন সবচেয়ে কঠিন গ্রহও তার কঠোর দৃষ্টি নরম করে তোলে।

ভক্তদের জন্য এই গল্পের শিক্ষা

  • হনুমানের নাম জপ করা এক ধরনের সুরের মতো, যা আপনার হৃদয়কে এমন এক কম্পাঙ্কে স্থাপন করে যেখানে কর্মফল জনিত ভয় অদৃশ্য হয়ে যায়।
  • শনিদেবের পূজা করা উচিত ব্যথা এড়ানোর জন্য নয়, বরং তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার ইচ্ছায়। এমনকি হনুমানও শনিদেবের শক্তিকে বিলুপ্ত করতে বলেননি, কেবল আন্তরিক ভক্তদের প্রতি অনুগ্রহ দেখাতে বলেছিলেন।
  • প্রকৃত ভক্তি হলো সর্বশ্রেষ্ঠ কর্মযোগ। যখন আপনার জীবন সেবায় উৎসর্গীকৃত, তখন কিসের ভয়?
  • শনিদেব হনুমানের ভক্তদের কষ্ট না দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কারণ তাঁরা ভাগ্যবান ছিলেন না, বরং তাঁরা প্রস্তুত ছিলেন। জীবনকে অবিচল ভক্তি নিয়ে মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত। বিশ্বাসের অগ্নিতে কর্মকে পুড়িয়ে ফেলার জন্য প্রস্তুত। আর হয়তো এটাই আমাদের একমাত্র সত্যিকারের সুরক্ষা। “যেখানে হনুমান আছেন, সেখানে শনি প্রবেশ করতে পারেন না।” আরও গভীরভাবে বলতে গেলে, যেখানে ভক্তি আছে, সেখানে ভয়ের কোনো স্থান নেই। এই গল্পটি কেবল পড়ার জন্য নয়, এটি একটি পথ যা আমরা অনুসরণ করতে পারি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর