Made in india semiconductor chip Vikram

ব্যুরো নিউজ ০৪ঠা সেপ্টেম্বর ২০২৫ : প্রযুক্তি ও অর্থনীতির ইতিহাসে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করল ভারত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মঙ্গলবার নতুন দিল্লিতে ‘সেমিকন ইন্ডিয়া ২০২৫’ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন, যেখানে ইলেকট্রনিক্স ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন ভারতের তৈরি প্রথম সেমিকন্ডাক্টর চিপ। ISRO-র সেমিকন্ডাক্টর ল্যাবরেটরি (SCL) দ্বারা তৈরি এই চিপটির নাম ‘বিক্রম ৩২-বিট প্রসেসর’। এটি দেশের প্রথম সম্পূর্ণ দেশীয়ভাবে নির্মিত মাইক্রোপ্রসেসর, যা মহাকাশযান এবং রকেটের মতো প্রতিকূল পরিবেশের জন্য উপযুক্ত।

প্রধানমন্ত্রী এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে বলেন, “সারা বিশ্ব ভারতকে বিশ্বাস করে, ভারতের ওপর ভরসা রাখে, এবং বিশ্বের দেশগুলি ভারতে সেমিকন্ডাক্টরের ভবিষ্যৎ গড়তে প্রস্তুত।”

 

‘কালো হীরা’র যুগ শেষ, এখন ‘ডিজিটাল হীরা’র যুগ: প্রধানমন্ত্রী

সম্মেলনে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেমিকন্ডাক্টরকে ‘ডিজিটাল হীরা’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, “তেল হয়তো ‘কালো হীরা’ ছিল, কিন্তু চিপস হলো ‘ডিজিটাল হীরা’। গত শতাব্দী তেল দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল, কিন্তু একবিংশ শতাব্দীর শক্তি একটি ক্ষুদ্র চিপের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এই ছোট চিপের ক্ষমতা আছে সারা বিশ্বের অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করার।”

তিনি আরও জানান যে, যখন অন্যান্য দেশ অর্থনৈতিক সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে, ভারত তখন ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে ৭.৮% জিডিপি বৃদ্ধি অর্জন করেছে, যা সব প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন, “ভারত দ্রুত গতিতে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হতে চলেছে।”

GST : জিএসটি সংস্কারকে স্বাগত জানালেন প্রধানমন্ত্রী , অর্থমন্ত্রীর প্রয়াসকে সাধুবাদ জানাল শিল্পমহল , বাজার চাঙ্গা

সেমিকন্ডাক্টর মিশনে ভারতের অগ্রগতি: একটি দশকের প্রস্তুতি

এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারত বিশ্ব ইলেকট্রনিক্স ও সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে। ২০১৪ সালে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের মাধ্যমে শুরু হওয়া এই যাত্রা ধাপে ধাপে এগিয়েছে।

  • ইলেকট্রনিক্স ম্যানুফ্যাকচারিং ক্লাস্টার (EMC) প্রকল্প: ইলেকট্রনিক্স উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো নির্মাণে সহায়তা।
  • প্রোডাকশন-লিঙ্কড ইনসেন্টিভ (PLI) প্রকল্প: সেমিকন্ডাক্টর ও ইলেকট্রনিক্স উৎপাদনে সহায়তা করার জন্য ৭৬,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ।
  • ইন্ডিয়া সেমিকন্ডাক্টর মিশন (ISM): ২০২১ সালে চালু হওয়া এই মিশন ভারতের চিপ যাত্রাকে পরিকল্পনা থেকে বাস্তবে পরিণত করার কাজ করছে।

অশ্বিনী বৈষ্ণব জানান, মাত্র সাড়ে তিন বছরেই বিশ্ব ভারতকে আস্থার চোখে দেখছে। বর্তমানে পাঁচটি সেমিকন্ডাক্টর ইউনিটের নির্মাণ দ্রুত গতিতে চলছে। তিনি আরও জানান যে, ৭৬,০০০ কোটি টাকার পিএলআই প্রকল্পের অধীনে ইতিমধ্যেই ৬৫,০০০ কোটি টাকা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে। গুজরাটের সানন্দে OSAT (Outsourced Semiconductor Assembly and Test) প্ল্যান্ট চালু হয়েছে, যা শীঘ্রই প্রথম ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ চিপ সরবরাহ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

GST : স্বাস্থ্য ও জীবন বিমায় কোনো কর নয় , নেশাদ্রব্যে বর্ধিত কর ; কেন্দ্রের নতুন জিএসটি নীতি !

চ্যালেঞ্জ এবং আগামী দিনের পরিকল্পনা

সেমিকন্ডাক্টরের ক্ষেত্রে ভারত অনেক দ্রুতগতিতে এগিয়ে চললেও কিছু চ্যালেঞ্জ এখনও বিদ্যমান। ইডিএ (Electronic Design Automation) সফটওয়্যারের ওপর থেকে চীনের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা শিথিল হওয়ায় ভারত এখন বিশ্ব বাজারে কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে পারে।
তবে এর মোকাবিলায় ভারত গবেষণা ও উন্নয়নে (R&D) বিনিয়োগ, দেশীয় ইডিএ সক্ষমতা বৃদ্ধি, এবং নতুন স্টার্টআপদের সমর্থন দেওয়ার ওপর জোর দিচ্ছে। সরকার ‘ক্রিটিক্যাল মিনারেলস মিশন’-এর মতো উদ্যোগও শুরু করেছে, যা সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় বিরল খনিজের চাহিদা মেটাতে সাহায্য করবে।

প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, “সরকার এখন ইন্ডিয়া সেমিকন্ডাক্টর মিশন এবং ডিজাইন-লিঙ্কড ইনসেনটিভ (DLI) প্রকল্পের পরবর্তী পর্যায়ের ওপর কাজ করছে। অদূর ভবিষ্যতে ভারতের তৈরি ক্ষুদ্রতম চিপটিই বিশ্বে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর