ব্যুরো নিউজ ৩০ অক্টোবর ২০২৫ : দীর্ঘ ৩৩ বছরের আত্ম-সংযম শেষে অবশেষে বোমা ফাটালেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বুধবার তিনি ঘোষণা করলেন, “অন্যান্য দেশের পরীক্ষা কর্মসূচির কারণে” তিনি ‘ডিপার্টমেন্ট অফ ওয়ার’-কে (সম্ভবত প্রতিরক্ষা বিভাগকেই বুঝিয়েছেন) তাৎক্ষণিকভাবে দেশের পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন। যে প্রক্রিয়ায় বোমা বানানোর কাজ করে ‘ডিপার্টমেন্ট অফ এনার্জি’ আর ফাটানোর দায়িত্ব দেওয়া হলো যুদ্ধের বিভাগকে—এ যেন চূড়ান্ত পর্যায়ের একটি বিভাগীয় কৌতুক!
এক্স (পূর্বতন টুইটার) এবং ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেছেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্র অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি। আমার প্রথম মেয়াদে সম্পূর্ণ আপডেট ও সংস্কারের মাধ্যমে এটি অর্জন করা হয়েছে। এর বিপুল ধ্বংসাত্মক ক্ষমতার জন্য এটি করতে আমার ঘৃণা হচ্ছিল, কিন্তু কোনো উপায় ছিল না।”
চিনের পাল্লায়, পুতিনের উপর ‘রাগ’
ট্রাম্প জানিয়েছেন, রাশিয়া ও চিনের মোকাবিলায় এবার আমেরিকাও “সমান ভিত্তিতে” অস্ত্র পরীক্ষা করবে। যদিও শেষ পারমাণবিক পরীক্ষা রাশিয়া (সোভিয়েত ইউনিয়ন) ১৯৯০ সালে ও চিন ১৯৯৬ সালে করেছিল; আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শেষ করেছিল ১৯৯২ সালে। সম্প্রতি শুধু উত্তর কোরিয়াই (২০১৭ সালে) একবার পরীক্ষা করেছে।
তবে ট্রাম্পের এই ঘোষণার পিছনে কাজ করেছে সম্ভবত রাশিয়ার সাম্প্রতিক পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন অস্ত্র পরীক্ষার ঘোষণা। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দাবি করেছেন, তাঁরা ৯এম৭৩০ বুরেভেস্টনিক ক্রুজ মিসাইল এবং পোসাইডন আন্ডারওয়াটার ড্রোন-এর সফল পরীক্ষা করেছেন। এই বিষয়ে ট্রাম্পের মন্তব্য, পুতিনের এমন ‘বড়াই’ করা “অনুপযুক্ত” এবং ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার দিকে তাঁর মনোযোগ দেওয়া উচিত। ট্রাম্পের কথায়, “যে যুদ্ধ এক সপ্তাহে শেষ হওয়ার কথা, তা এখন চতুর্থ বছরে চলছে।” (কেউ একজন নিশ্চিতভাবে তাঁর ক্যালেন্ডারটি ঠিকমতো দেখছেন না!)
শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের আগে উত্তাপ
ট্রাম্পের এই ‘পারমাণবিক বার্তা’টি এসেছে দক্ষিণ কোরিয়ায় চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে তাঁর বৈঠকের ঠিক কিছু মুহূর্ত আগে। বিশ্ব যখন বাণিজ্যযুদ্ধের ঝাঁকুনিতে কাঁপছে, ঠিক তখনই এই ‘পারমাণবিক পরীক্ষা’র ফোঁড়ন পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুললো। ট্রাম্পের পক্ষ থেকে চিনা পণ্যের ওপর ১০০% শুল্ক চাপানোর হুমকির মধ্যেই এই দুই নেতা এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (APEC) শীর্ষ সম্মেলনে মিলিত হতে চলেছেন।
মানবজাতির জন্য বার্তা
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। একদিকে রাশিয়া যেখানে বেশ কিছু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি থেকে সরে এসেছে, অন্যদিকে চিনও দ্রুত তাদের পারমাণবিক শক্তি বাড়াচ্ছে। নিউ স্টার্ট (New START) নামক যে চুক্তিটি রাশিয়া ও আমেরিকাকে ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা সীমাবদ্ধ রাখতে সাহায্য করত, তা আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি শেষ হতে চলেছে।
কেউ কেউ বলছেন, ট্রাম্প হয়তো স্রেফ ‘ডেলিভারি সিস্টেম’কে ‘অস্ত্র’ বলে ভুল করেছেন। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, মানবজাতি তার ভুল থেকে শিক্ষা নেয়নি। বিশ্ব নেতারা যখন পারমাণবিক অস্ত্রের বোতাম থেকে দূরে থাকার কথা, তখন ট্রাম্পের এই ‘তাৎক্ষণিক পরীক্ষা’র নির্দেশ যেন এটাই নিশ্চিত করে—আণবিক যুগের এই নাটকটি আসলে একটি অন্তহীন পুনঃসম্প্রচার (endless rerun)!



















