ব্যুরো নিউজ ২৭ অক্টোবর ২০২৫ : ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের জন্য তার দ্বিতীয় মেয়াদে প্রথমবার কড়া পদক্ষেপ নিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি রাশিয়ার দুই বৃহত্তম তেল সংস্থা রোসনেফট (Rosneft) এবং লুকোয়েল (Lukoil)-এর পাশাপাশি তাদের সহযোগী সংস্থাগুলির উপরেও নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে ভবিষ্যতে আরও পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বৃহস্পতিবার বলেছেন, সম্ভাব্য রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি চুক্তিতে ধীর গতির কারণে হতাশা থেকেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন।
বৈঠক বাতিল ও ট্রাম্পের হতাশা
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে প্রস্তাবিত বৈঠক বাতিল করেছেন ট্রাম্প। এই সিদ্ধান্তের কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “বৈঠকটি বাতিল করেছি। আমার কাছে সঠিক মনে হয়নি। মনে হয়নি যে আমরা যে লক্ষ্যে পৌঁছাতে চাই, সেখানে পৌঁছতে পারব। তাই আমি বাতিল করেছি, তবে ভবিষ্যতে আমরা তা করব।”
ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুট-এর সঙ্গে বৈঠকে ট্রাম্প বলেন, তিনি আশা করেন “এই যুদ্ধ মিটে যাবে।” তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “যতবারই ভ্লাদিমির-এর সঙ্গে কথা বলি, ভালো কথোপকথন হয়, কিন্তু তারপর আর কিছু এগোয় না। তারা শুধু কোথাও যায় না। সে যুদ্ধ করছে। সে একটা যুদ্ধে আছে।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, “এবার একটি চুক্তি করার সময় এসেছে।” ট্রাম্প উভয় নেতাকে যুদ্ধ “যেখানে আছে সেখানেই থামিয়ে দিতে” এবং “বিজয় দাবি করতে” পরামর্শ দিয়েছেন।
নিষেধাজ্ঞা নিয়ে রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া ও ইইউ-এর অবস্থান
- রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া: মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে “বন্ধুত্বহীন কাজ” হিসেবে অভিহিত করেছে মস্কো। প্রেসিডেন্ট পুতিন এই নিষেধাজ্ঞাগুলিকে মস্কোর ওপর চাপ সৃষ্টির প্রচেষ্টা বলে মন্তব্য করেছেন, তবে তিনি দাবি করেন যে এগুলি রাশিয়ার অর্থনীতিতে খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না। তিনি বলেন, “কোনো আত্মমর্যাদাশীল দেশ কখনই চাপের কাছে নতি স্বীকার করে কিছু করে না।”
- ইইউ-এর কঠোর মনোভাব: অন্যদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU) রাশিয়ার ছায়া বহর, ব্যাঙ্কিং এবং জ্বালানি খাতকে লক্ষ্য করে ১৯তম নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজ অনুমোদন করেছে। ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কস্তা বলেছেন, পুতিনের দিক থেকে “সদিচ্ছার সঙ্গে ট্রাম্পের উদ্যোগের কোনো মিল নেই” এবং রাশিয়া বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা বাড়াচ্ছে। তাই ইইউ ২০২৬ এবং ২০২৭ সালের জন্য ইউক্রেনের সামরিক সরঞ্জামের আর্থিক চাহিদা নিশ্চিত করতে প্রস্তুত। ইইউ এবং এর সদস্য রাষ্ট্রগুলি এ পর্যন্ত ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা সহ ১৭৭.৫ বিলিয়ন ইউরো সমর্থন দিয়েছে।
টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে পুতিনের হুঁশিয়ারি
মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এবং বৈঠক বাতিলের পরও পুতিন আলোচনার পথ খোলা রেখেছেন। যদিও তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে ইউক্রেন যদি মার্কিন টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলা চালায়, তবে রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া “খুব গুরুতর, যদি না অপ্রতিরোধ্য” হয়। পুতিন বলেন, অস্ত্র দিয়ে ইউক্রেনকে সমর্থন করা উত্তেজনা বাড়ানোর চেষ্টা।
হোয়াইট হাউস প্রেস সেক্রেটারি লেভিট আরও বলেন, ট্রাম্প এখন মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি চুক্তির সাফল্যের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে এই যুদ্ধ শেষ করতে বদ্ধপরিকর। তবে ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে বৈঠক একেবারে বাতিল না হলেও, ট্রাম্প নিশ্চিত করতে চান যে বৈঠকের একটি “স্পষ্ট ইতিবাচক ফল” যেন আসে।




















