ব্যুরো নিউজ, ০৮ই ডিসেম্বর ২০২৫ : চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলার জন্য আমেরিকার প্রতিরক্ষা কৌশলের কেন্দ্রে ভারতকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দিয়েছে সদ্য প্রকাশিত মার্কিন প্রতিরক্ষা অনুমোদন বিল, ন্যাশনাল ডিফেন্স অথরাইজেশন অ্যাক্ট (NDAA), অর্থ বছর ২০২৬-এর খসড়া। রবিবার মার্কিন কংগ্রেসের নেতারা এই বিলের একটি সমন্বিত সংস্করণ প্রকাশ করেছেন, যেখানে বেসামরিক পারমাণবিক সহযোগিতা থেকে শুরু করে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদন এবং আঞ্চলিক সামুদ্রিক নিরাপত্তাসহ একাধিক কৌশলগত ক্ষেত্রে ভারতের অংশীদারিত্বকে মজবুত করার কথা বলা হয়েছে।
এই বিলে ভারত-মার্কিন বেসামরিক পারমাণবিক সহযোগিতা বহুদিনের পুরনো সমস্যাকে ফের সামনে এনেছে। NDAA-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, ২০০৮ সালের বেসামরিক পারমাণবিক চুক্তির বাস্তবায়ন মূল্যায়নের জন্য ভারত সরকারের সঙ্গে একটি “যৌথ পরামর্শক প্রক্রিয়া” প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
পারমাণবিক দায়বদ্ধতা: এই প্রক্রিয়ার মূল লক্ষ্য হবে ভারতকে “আন্তর্জাতিক নিয়মের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তাদের অভ্যন্তরীণ পারমাণবিক দায়বদ্ধতা বিধিগুলিকে পুনর্বিবেচনা করার” সুযোগ নিয়ে আলোচনা করা। কারণ ভারতের পারমাণবিক দায়বদ্ধতা আইন (CLNDA) বিদেশি সরবরাহকারীদের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান বাধা।
দশকের কৌশল: ‘ইন্টারন্যাশনাল নিউক্লিয়ার এনার্জি অ্যাক্ট অফ ২০২৫’-এ ভারতকে OECD সদস্য রাষ্ট্রগুলোর পাশে “সহযোগী বা অংশীদার জাতি” হিসেবে স্থান দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, এই আইনে পারমাণবিক রপ্তানি বাড়াতে একটি ১০ বছরের কৌশল গ্রহণের কথা বলা হয়েছে, যেখানে রাশিয়া এবং চিনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা বিশ্লেষণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
Russia Nuclear supply to India : পরমাণু থেকে প্রতিরক্ষা, সব ক্ষেত্রেই সম্পর্ক মজবুত: পুতিনের সফরকালে কুদানকুলামে জ্বালানি সরবরাহ পশ্চিমী অপপ্রচার খারিজ,
ইন্দো-প্যাসিফিকে নতুন প্রতিরক্ষা শিল্প-স্থাপত্য নির্মাণ
চীনকে চ্যালেঞ্জ জানাতে এবং সরবরাহ শৃঙ্খল সুরক্ষিত করতে ইন্দো-প্যাসিফিক ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেজিলিয়েন্স-এর জন্য একটি নতুন অংশীদারিত্বে ভারতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইন এবং নিউজিল্যান্ডের মতো হাতেগোনা কয়েকটি অংশীদারের মধ্যে রয়েছে ভারত।
সহ-উৎপাদন ও উদ্ভাবন: এই উদ্যোগের মাধ্যমে দেশগুলোর প্রতিরক্ষা শিল্প ভিত্তিগুলোর মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করা, যৌথ সক্ষমতা উন্নয়ন এবং প্রতিরক্ষা উদ্ভাবন বাড়ানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিরক্ষা সচিবকে সহ-উন্নয়ন এবং সহ-উৎপাদন লক্ষ্য অর্জনের জন্য চুক্তিতে প্রবেশ, ওয়ার্কিং গ্রুপ প্রতিষ্ঠা এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
আঞ্চলিক কৌশল: বিলটিতে সামরিক মহড়া, প্রতিরক্ষা বাণিজ্য এবং সামুদ্রিক নিরাপত্তায় বৃহত্তর সহযোগিতা নিশ্চিত করার জন্য কোয়াড (Quad) কাঠামোর মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিস্তৃত কৌশলগত নির্দেশিকা তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য একজন নতুন অ্যাম্বাসাডর-অ্যাট-লার্জ (Ambassador-at-Large) নিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যার অন্যতম দায়িত্ব হবে চীনকে মোকাবিলা করা।
Putin India visit : বন্ধুত্বের বার্তা: পুতিনকে রুশ ভাষায় ভগবৎ গীতা উপহার দিলেন মোদি, আজ মূল শীর্ষ বৈঠক
সন্ত্রাস দমন ও প্রযুক্তি সহযোগিতা: মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারির ভারত সফর
এই কৌশলগত পদক্ষেপগুলির মধ্যেই আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করতে মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি অফ স্টেট ফর পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্স অ্যালিসন হুকার ভারতে এসেছেন। পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিসরির সঙ্গে তাঁর ফরেন অফিস কনসালটেশন করার কথা রয়েছে।
আলোচনার মূল বিষয়: তিনি ভারত-মার্কিন কৌশলগত অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর করা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মহাকাশ অনুসন্ধানের মতো উদীয়মান প্রযুক্তিগুলিতে সহযোগিতা বাড়ানোয় জোর দেবেন।
প্রতিরোধমূলক আলোচনা: গত সপ্তাহে, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদের অর্থায়ন, প্রযুক্তিগত অপব্যবহার এবং সীমান্ত সন্ত্রাসবাদের মতো বিষয়গুলো নিয়ে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপে আলোচনা করেছে। উভয় পক্ষই সন্ত্রাসবাদকে কঠোরভাবে নিন্দা করেছে এবং জাতিসংঘের ১২৬৭ নিষেধাজ্ঞা ব্যবস্থার অধীনে লস্কর-ই-তৈবা (LeT) এবং জইশ-ই-মোহাম্মদ (JeM)-এর মতো গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞা জারির আহ্বান জানিয়েছে।
ট্রাম্পের পাকিস্তান-ঘনিষ্ঠতা নিয়ে পেন্টাগন কর্মকর্তার বিস্ফোরক মন্তব্য
অন্যদিকে, প্রাক্তন পেন্টাগন কর্মকর্তা মাইকেল রুবিন এক সাক্ষাৎকারে ভারতের প্রতি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, পাকিস্তানের ‘ঘুষ’ (Bribery) এবং ‘তোষামোদ’ (Flattery)-এর কারণেই ট্রাম্পের ভারত-মার্কিন সম্পর্ক পিছিয়ে গেছে।
রুবিনের অভিযোগ: তিনি বলেন, “ডোনাল্ড ট্রাম্প কীভাবে ভারত-মার্কিন সম্পর্ককে উল্টে দিয়েছেন, তা দেখে আমরা অনেকেই হতবাক। সম্ভবত এটি পাকিস্তানিদের তোষামোদ বা তাদের পৃষ্ঠপোষক তুরস্ক ও কাতারের পক্ষ থেকে ট্রাম্পকে দেওয়া ঘুষের ফল।” তিনি এটিকে “কৌশলগত ঘাটতির” দিকে ঠেলে দেওয়া একটি মারাত্মক ঘুষ বলেও মন্তব্য করেন।
রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য: রুবিন ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচনা করে বলেন, ভারত যখন রাশিয়ার তেল কিনছে, তখন নিষেধাজ্ঞা জারি করে ওয়াশিংটন ভণ্ডামি করছে। তাঁর মতে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাম্প্রতিক ভারত সফর ট্রাম্পের “মারাত্মক অযোগ্যতার” ফল।
এই বিল এবং সফর ভারত-মার্কিন সম্পর্ককে বহুমাত্রিক পথে নিয়ে যাচ্ছে, যেখানে একদিকে কৌশলগত সহযোগিতা বাড়ছে, অন্যদিকে রাজনৈতিক পর্যায়ে অসঙ্গতি এবং বিতর্কও বিদ্যমান। আপনি কি এই পারমাণবিক দায়বদ্ধতা আইনের খুঁটিনাটি সম্পর্কে আরও জানতে চান?

















