ব্যুরো নিউজ ১১ জুন : মায়ানমারের চলমান ভয়াবহ সংঘাত নিরসনে ভারত তার প্রভাব খাটিয়ে দেশটির সামরিক জান্তা, জাতীয় ঐক্য সরকার এবং বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীগুলোকে আলোচনায় বসাতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মায়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি ‘ভয়ঙ্কর’ এবং সেখানে ভূমিকম্পের ফলে বিদ্যমান রাজনৈতিক ও বিদ্রোহের সংকট আরও গুরুতর হয়েছে।
মায়ানমারের বহুমুখী সংঘাত এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহ
জাতিসংঘের ওই কর্মকর্তা মায়ানমারের সংঘাতকে ‘বহুমুখী’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এটি কেবল একটি পক্ষ এবং তার বিরোধীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সেখানে মায়ানমার সেনাবাহিনী (সামরিক জান্তা) ছাড়াও অসংখ্য জাতিগোষ্ঠীভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠন (Ethnic Armed Organizations), জনগণের প্রতিরক্ষা বাহিনী (People’s Defence Forces) এবং ক্ষমতাচ্যুত বেসামরিক সরকার ন্যাশনাল লিবারেল ডেমোক্রেসি পার্টির (NLD) মতো সুসংগঠিত বিরোধী শক্তিও জড়িত। এই প্রতিটি পক্ষই সামরিক সমাধানের ওপর বিশ্বাসী এবং তাদের মধ্যে ‘জিরো-সাম মানসিকতা’ (Zero-sum mentality) কাজ করছে, যেখানে তারা মনে করে যে সামরিক বিজয়ই সমস্যার একমাত্র সমাধান। তারা আরও বিশ্বাস করে যে, যত বেশি অঞ্চল দখল করা যাবে, আলোচনায় তাদের প্রভাব তত বাড়বে।
বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত: ছাড়াল জাপানকে
ভারতের ভূমিকা এবং জাতিসংঘের প্রত্যাশা
জাতিসংঘের ওই কর্মকর্তা আশা প্রকাশ করেছেন যে, “ভারত এমন প্রতিবেশী দেশগুলির মধ্যে থাকতে পারে যারা এই অর্থহীন সংঘাতে কিছুটা বোধবুদ্ধি নিয়ে আসবে।” তিনি উল্লেখ করেছেন যে, মায়ানমারে “ভারত একটি প্রভাবশালী দেশ”। এর আগে, ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও মায়ানমারে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছে। এই প্রেক্ষিতে, জাতিসংঘ চায় ভারত তার কূটনৈতিক ও কৌশলগত প্রভাব ব্যবহার করে সংঘাতপূর্ণ পক্ষগুলোকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসুক, যাতে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান সূত্র খুঁজে পাওয়া যায়। ভারতের মায়ানমারের জাতিগোষ্ঠীভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠনগুলির, বিশেষ করে আরাকান আর্মির (Arakan Army) সঙ্গে, পরোক্ষ এবং জটিল সম্পর্ক রয়েছে, যা উত্তর-পূর্ব ভারতের সীমান্ত সুরক্ষার সাথে জড়িত। এই সম্পর্কগুলি ভারতের পক্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে।
রোহিঙ্গা ইস্যু এবং ভারতের অবস্থান
যদিও মায়ানমার ইস্যুতে ভারতের প্রভাবের ওপর জাতিসংঘ আস্থা রাখছে, তবে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিষয়ে ভারতের কঠোর অবস্থান নিয়ে সংস্থাটি ‘হতাশ’ বলে ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন। মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের যারা অন্যত্র আশ্রয় চাইছেন, তাদের প্রতি ভারতের নীতি নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ রয়েছে। তা সত্ত্বেও, জাতিসংঘ আশা করছে যে তারা “মানবিক সহায়তা এবং রোহিঙ্গাদের প্রতি আচরণের বিষয়ে ভারতের সঙ্গে গঠনমূলক কিছু করার জন্য ঘনিষ্ঠভাবে কাজ চালিয়ে যাবে।” এটি ইঙ্গিত দেয় যে, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে মতপার্থক্য থাকলেও, জাতিসংঘ মায়ানমারের বৃহত্তর শান্তি প্রক্রিয়ায় ভারতের ভূমিকাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে।
বর্তমান পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ
ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মায়ানমারের এমনিতেই ভয়াবহ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, সশস্ত্র সংঘাত এবং মানবিক সংকট একযোগে দেশটিকে পঙ্গু করে দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে, জাতিসংঘের আহ্বান অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টার পাশাপাশি আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে ভারতের ভূমিকা মায়ানমারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ চাবিকাঠি হতে পারে।