ব্যুরো নিউজ ১২ আগস্ট ২০২৫ : আগামী ১৫ই আগস্ট আলাস্কায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকের আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ফোনে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন। এই ফোনালাপের পর ইউক্রেন কিছুটা নরম হয়ে ভূখণ্ড ছাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছে, যা এ যাবতকালের ইউক্রেনের অনমনীয় অবস্থানের সম্পূর্ণ বিপরীত। জেলেনস্কি ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন এবং ভারতের মধ্যস্থতা চেয়েছেন।
জেলেনস্কি-মোদী ফোনালাপ
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তার এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে জানান যে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ভারত শান্তি প্রচেষ্টাকে সমর্থন করছে এবং ইউক্রেন সম্পর্কিত সব সিদ্ধান্ত ইউক্রেনের অংশগ্রহণেই হওয়া উচিত, এই অবস্থানে ভারত বিশ্বাসী। জেলেনস্কি আরও জানান যে, রাশিয়ার ওপর প্রভাব রয়েছে এমন প্রতিটি দেশের নেতাকে মস্কোর কাছে প্রয়োজনীয় বার্তা পাঠানো উচিত। তিনি সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে মোদীর সঙ্গে ব্যক্তিগত বৈঠকের পরিকল্পনা এবং পারস্পরিক সফর বিনিময়ের বিষয়েও সম্মত হয়েছেন।
অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও এক্স-এ পোস্ট করে বলেন যে তিনি প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে কথা বলে আনন্দিত এবং ইউক্রেন সংকটের দ্রুত ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য ভারতের ধারাবাহিক অবস্থানের কথা তাকে জানিয়েছেন। মোদী জানান, ভারত এই বিষয়ে সম্ভাব্য সবরকম অবদান রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
Donald Trump : ইউক্রেন যুদ্ধ সমাপ্তির চেষ্টায় ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকে জেলেনস্কির অনমনীয় অবস্থান ।
ইউক্রেনের ভূখণ্ড ছাড়ার ইঙ্গিত
আলাস্কায় ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের আগে জেলেনস্কির এই অবস্থান পরিবর্তন আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে নতুন মোড় নিয়েছে। যদিও জেলেনস্কি সরাসরি ভূখণ্ড ছাড়ার কথা বলেননি, তবে ইউরোপীয় নেতাদের কাছে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, যুদ্ধবিরতি ও শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে রাশিয়া যে ভূখণ্ডগুলো দখল করেছে, সেগুলো তারা ধরে রাখতে পারে। এর মধ্যে ক্রিমিয়া, লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, জাপোরিঝিয়া এবং খেরসনের মতো অঞ্চলগুলো রয়েছে। এই পদক্ষেপের কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ট্রাম্প ও পুতিন ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে কোনো চুক্তি করতে পারেন, এমন উদ্বেগ ইউক্রেন ও ইউরোপের মধ্যে বাড়ছে। এইটি হিসাব করলে আনুমানিক ৩৫ শতাংশ উক্রেনের অঞ্চল এবং প্রায় গোটা পূর্ব এবং দক্ষিণ উক্রেনের বেশ কিছু অংশ । এই অংশগুলি রাশিয়া লাগোয়া এবং বিপুল পরিমানে তৈল ভাণ্ডার , কৃষি এবং খনিজ সম্পদের উর্বর জমি ।
ইউক্রেন এখন শান্তি চুক্তির জন্য নিরাপত্তা গ্যারান্টি, অর্থাৎ অস্ত্রের সরবরাহ এবং ন্যাটোর সদস্যপদের নিশ্চয়তা চাইছে। ইউরোপীয় নেতারাও জেলেনস্কির এই অবস্থানকে সমর্থন করছেন এবং জোর দিয়ে বলেছেন যে, ইউক্রেনের সম্মতি ছাড়া কোনো চুক্তি গ্রহণযোগ্য হবে না। পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্কের মতো নেতারা স্পষ্ট করে বলেছেন, “সীমান্ত জোর করে পরিবর্তন করা যায় না” এবং “রাশিয়ার যুদ্ধ থেকে কোনো লাভ হওয়া উচিত নয়।”
Pakistan : ইউক্রেন যুদ্ধে রুশদের পক্ষে লড়ছেন পাকিস্তানি ও চীনা ভাড়াটে সেনা, দাবি জেলেনস্কির
ট্রাম্পের অবস্থান এবং আন্তর্জাতিক চাপ
ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাবের মূল ভিত্তি হলো “ভূখণ্ড বিনিময়”। যদিও তিনি বলেছেন যে তিনি কিছু ভূখণ্ড ইউক্রেনকে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন, তবে জেলেনস্কি এই প্রস্তাবের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। ট্রাম্পের মতে, পুতিনের সঙ্গে তার বৈঠকটি “অনুভূতিমূলক” হবে এবং তিনি দুই মিনিটের মধ্যেই বুঝতে পারবেন যে কোনো চুক্তি সম্ভব কি না।
অন্যদিকে, ইউরোপের নেতারা ট্রাম্পের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন যেন ইউক্রেনের স্বার্থকে উপেক্ষা করে কোনো চুক্তি না হয়। জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ মের্জ, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং অন্যান্য ইউরোপীয় নেতারা ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন এবং বলেছেন যে কোনো শান্তি আলোচনায় ইউক্রেনকে অন্তর্ভুক্ত করা অপরিহার্য। ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটও এই বিষয়ে একই মতামত প্রকাশ করেছেন।