ব্যুরো নিউজ ১৩ জুন: পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম যেন এখন দুই ‘দাদা’র আধিপত্য বিস্তারের রণক্ষেত্র। অজয় নদের বালি, জঙ্গলের মোড়াম সম্পদ ও স্থানীয় রাজনৈতিক ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু ঘিরে শুরু হয়েছে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর হাড়েহাড়ি লড়াই। প্রতিদিনই কোনো না কোনো এলাকায় বোমাবাজি, মারধর, পার্টি অফিস দখল সহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেই চলেছে। এর জেরে সাধারণ মানুষ চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
দুই ‘দাদা’র দখলদারির দৌড়:
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আগে বীরভূমের প্রাক্তন সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের তত্ত্বাবধানে দুই পক্ষ এক ছাতার নিচে থাকলেও, এখন তাঁদের রাস্তা আলাদা। দলের অভ্যন্তরীণ বিবাদ এতটাই তীব্র যে আউশগ্রামের গেঁড়াই গ্রামে সম্প্রতি একটি পার্টি অফিস দখলকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্য রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটে। মঙ্গলবার রাতে যুব নেতা শেখ সঞ্জুর অভিযোগ, লোকসভা ভোটে বিরোধীদের হয়ে কাজ করা গোষ্ঠীর লোকেরা অফিস দখল করতে চেয়েছিল। এ নিয়ে ব্লক সভাপতি আব্দুল লালনের অনুগামীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে।
আউশগ্রাম থানার পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু স্থানীয়দের প্রশ্ন—এতোদিন ধরে এই দাদাগিরি চললেও প্রশাসন ও দলীয় নেতৃত্ব কি কেবল ‘তথ্য সংগ্রহে’ ব্যস্ত?
ভুয়ো ভোটার কার্ড তৈরি করে দিতেন টিএমসির এই নেতা, তথ্য দিয়ে জানালেন বাংলাদেশী বৃদ্ধ
তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব একাধিকবার জানিয়ে দিয়েছে, “দলে থেকে অরাজকতা করলে রেয়াত নয়। শৃঙ্খলা না মানলে কড়া ব্যবস্থা হবে।” দেবু টুডু ও অন্যান্য নেতারা ইতিমধ্যেই দলীয় তদন্তের কথা জানিয়েছেন। তবে সাধারণ মানুষ নিশ্চিত হতে পারছেন না—এই তদন্ত আদৌ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থামাতে পারবে কি না।
এই অঞ্চলে অজয় নদের বালির ঘাট ও জঙ্গলের মোড়াম খনন থেকেই যে বিপুল অর্থ উপার্জন হয়, তা এলাকায় ওপেন সিক্রেট। এই সম্পদের দখল নিতেই রাজনৈতিক লড়াই এখন ভয়ানক রূপ নিচ্ছে। সূত্রের দাবি, বেআইনি বালির গাড়ি চলাচলে প্রতিটি গাড়ি থেকেই উপার্জন হয় হাজার হাজার টাকা। সেই কারণেই ক্ষমতার পালাবদল মানে শুধু রাজনৈতিক নয়, আর্থিক লাভেরও দরজা খুলে দেওয়া।
গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে বন্ধ শহরের উন্নয়ন! কৃষ্ণনগর পুরসভা কার্যত অচল
এই পরিস্থিতিতে শুধু আউশগ্রাম নয়, গোটা জঙ্গলমহল জুড়েই আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। স্থানীয়দের প্রশ্ন, রাজ্য সরকার কি এই সংঘর্ষ থামাতে পারবে, না কি ভোট-পরবর্তী গোষ্ঠীদ্বন্দ্বই হয়ে উঠবে নিয়মিত ঘটনা?
দলের একাংশ বলছে, এখনই ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। আর সাধারণ মানুষ চাইছেন একটাই—অরাজকতা বন্ধ হোক, ফিরে আসুক স্বাভাবিকতা ও নিরাপত্তা। কিন্তু দুই দাদার এই দখলযুদ্ধ থামবে কবে? উত্তর এখনও অধরা।