ব্যুরো নিউজ ৩১ অক্টোবর ২০২৫ : পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন (SIR) প্রক্রিয়া শুরুর আগেই বড় ধরনের ‘কারচুপি’র অভিযোগ তুলল রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। দলের অভিযোগ, তালিকা থেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বহু ভোটারের নাম সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় তারা সরাসরি প্রধান বিরোধী দল বিজেপি-কে কাঠগড়ায় তুলেছে।
তৃণমূলের বিস্ফোরক অভিযোগ: ‘বাদ পড়েছে প্রচুর নাম’
বৃহস্পতিবার তৃণমূল কংগ্রেস নেতা কুণাল ঘোষ এবং চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেন। সেখানেই তাঁরা দাবি করেন, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় যে নামগুলো ছিল, সম্প্রতি প্রকাশিত সংশোধিত তালিকা থেকে তার বহু নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের কাছে ২০০২ সালের ভোটার তালিকার ‘হার্ড কপি’ আছে বলেও তৃণমূল নেতারা দাবি করেন।
নেতা কুণাল ঘোষ পরিসংখ্যান দিয়ে অভিযোগটি তুলে ধরেন:
- কোচবিহার বিধানসভার নাটাবাড়ির ২ নম্বর বুথে ২০০২ সালের তালিকায় ৭১৭ জন ভোটারের নাম ছিল, যা এখনকার তালিকায় কমে ১৪০ জনে দাঁড়িয়েছে। কুণাল ঘোষের প্রশ্ন, “৭১৭ থেকে ১৪০ কী করে হলো? বাকিরা কোথায় গেলেন? এর জবাব কে দেবে?”
- মাথাভাঙা বিধানসভার ১৬০ নম্বর বুথে (মাথাভাঙা কলেজের কক্ষ ২) পূর্বে ৮৪১ জন ভোটার থাকলেও, বর্তমানে সেই সংখ্যাটি ৪৬১।
- উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগর এবং আলিপুরদুয়ারের মাঝেরডাবরি নিয়েও একই ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে। আলিপুরদুয়ারে এক বিএলও (BLO)-র বাবা-মা ও ভাইয়ের নামও তালিকা থেকে বাদ পড়েছে বলে দাবি তৃণমূলের।
WB SIR ECI : বিএলওদের রিপোর্ট না দেওয়ায় অসন্তুষ্ট কমিশন, কাজে যোগ না দিলে বরখাস্ত!
নিশানায় বিজেপি: ‘চক্রান্তের’ মাধ্যমে নাম বাদ
তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বিজেপি। তারা দাবি করছে, ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার এই চক্রান্তের পেছনে আছে বিজেপি। কুণাল ঘোষ বলেন, “বিজেপির পার্টি অফিসে বসে চক্রান্ত হচ্ছে। সেই চক্রান্তই ইলেকশন কমিশনের মাধ্যমে ওয়েবসাইটে উঠেছে। না হলে বিজেপি নেতারা কী করে বলতে পারেন এত লোকের নাম বাদ যাবে?”
উল্লেখ্য, সংবাদের তথ্যসূত্রেই একটি প্রশ্ন উঠে আসে যে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে নির্বাচন কমিশন না থাকা সত্ত্বেও কেন তৃণমূল কংগ্রেস কমিশনকে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করায় দোষারোপ করছে ? – প্রশ্ন রয়ে যায়
SIR-এ নথি জমা দেওয়ার নির্দেশিকা
এই সকল অভিযোগের মধ্যেই মঙ্গলবার থেকে নিবিড় সংশোধনের কাজ শুরু হয়ে গেছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, সকল ভোটারকে নথি জমা দিতে হবে না। এই SIR প্রক্রিয়ার জন্য ২০০২ সালের ভোটার তালিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- কাদের নথি লাগবে না: যাদের নাম ২০০২ সালের ভোটার লিস্টে রয়েছে অথবা যাদের বাবা-মায়ের নাম ২০০২ সালের তালিকায় ছিল, তাদের কোনো নথি দিতে হবে না। তাদের শুধু নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে ঢুকে ‘ম্যাচিং প্রক্রিয়াটি’ সেরে নিতে হবে।
- কাদের নথি লাগবে: ২০০২ সালের ভোটার লিস্টে যাদের নাম নেই বা যাদের বাবা ও মায়ের নাম নেই, তাদের ক্ষেত্রে প্রমাণস্বরূপ ১১টি নথির মধ্যে যেকোনো একটি জমা দিতে হবে। কমিশন জানিয়েছে, এই নথির তালিকায় আধার কার্ডও গ্রহণ করা হবে।
WB SIR ECI : ভোটারদের সহায়তা প্রদানে কমিশনের তৎপরতা, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নিষ্পত্তি আবশ্যক
প্রয়োজনীয় ১১টি নথির তালিকা (যে কোনো একটি):
১. কেন্দ্রীয়/রাজ্য সরকার বা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার কর্মী/পেনশন প্রাপকের পেনশন পেমেন্ট অর্ডার।
২. ০১.০৭.১৯৮৭ তারিখের আগে সরকার বা স্বীকৃত সংস্থা কর্তৃক প্রদত্ত যে কোনো পরিচয়পত্র বা শংসাপত্র।
৩. উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের দেওয়া জন্ম শংসাপত্র বা বার্থ সার্টিফিকেট।
৪. পাসপোর্ট।
৫. স্বীকৃতি পর্যদ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাগত যোগ্যতার শংসাপত্র।
৬. রাজ্য সরকার প্রদত্ত স্থায়ী বাসস্থানের শংসাপত্র।
৭. বনভূমি অধিকার শংসাপত্র।
৮. সরকার প্রদত্ত অনগ্রসর সম্প্রদায় বা অন্য কোনো জাতিগত শংসাপত্র।
৯. জাতীয় নাগরিক পঞ্জি বা এনআরসি (যাদের হয়েছে)।
১০. রাজ্য বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের দেওয়া পরিবারপঞ্জি বা ফ্যামিলি রেজিস্টার।
১১. জমি বা বাড়ির সরকারি শংসাপত্র বা দলিল।
 
				
 
								 
								 
								 
								
















