ব্যুরো নিউজ ১৮ জুলাই ২০২৫ : পুরুলিয়ার সিধু কানহো বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১শে জুলাইয়ের নির্ধারিত পরীক্ষার দিন বদল ঘিরে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউজি সেকেন্ড সেমিস্টারের এই পরীক্ষাটি ২১শে জুলাই অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও, গত ১৬ই জুলাই (বুধবার) হঠাৎ করেই বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয় যে, পরীক্ষাটি ২৫শে জুলাই নেওয়া হবে। এই আকস্মিক পরিবর্তনে বিরোধীরা সরাসরি শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ এনেছে, যার মূল কারণ ২১শে জুলাই রাজ্যে পালিত শহীদ দিবস।
২১শে জুলাই ও ধর্মতলার সমাবেশ
প্রতি বছর ২১শে জুলাই কলকাতার ধর্মতলায় রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস তাদের শহীদ দিবস পালন করে থাকে। এই দিনে দলের সুপ্রিমো এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মূল বক্তা হিসেবে বিশাল জনসমাবেশে ভাষণ দেন। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে, বিশেষ করে পুরুলিয়ার মতো দূরবর্তী জেলাগুলি থেকেও অসংখ্য তৃণমূল নেতা, কর্মী ও সমর্থক সেদিন কলকাতায় আসেন বাসে, ট্রেনে ও অন্যান্য যানবাহনে করে। ফলে, কলকাতার দিকে মুখ করে থাকা সমস্ত রাস্তায় সেদিন জনস্রোত ও যানবাহনের ভিড় দেখা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘যুক্তি’ বনাম বিরোধীদের অভিযোগ
পরীক্ষার দিন বদলের কারণ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, ২১শে জুলাই রাস্তায় যানজট এবং বাস না পাওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে, যার ফলে দূর-দূরান্ত থেকে আসা ছাত্র-ছাত্রীরা পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছাতে সমস্যায় পড়বেন। তাদের দাবি, ছাত্র-ছাত্রীদের অনুরোধের পরেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সিধু কানহো বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক সুবল চন্দ্র এ প্রসঙ্গে বলেছেন, “২১শে জুলাই দুটি পরীক্ষার দিন ছিল, একটা পোস্ট গ্র্যাজুয়েট, আরেকটা আন্ডার গ্র্যাজুয়েট। আমরা পোস্ট গ্র্যাজুয়েট পরীক্ষার দিন বদল করিনি। কারণ ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বেশিরভাগই হোস্টেলে থাকেন। কিন্তু, ইউজি পরীক্ষা সারা জেলার ১৩টি সেন্টারে হয়। বান্দোয়ানের ছেলেকে মানবাজার যেতে হয়, উল্টোটাও হতে পারে। ছাত্র-ছাত্রীরা বাসের ওপরে নির্ভর। তাই ২১শে জুলাই রাস্তায় বেরিয়ে সমস্যায় পড়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়ে অনেক ছাত্র-ছাত্রী আবেদন করেছিলেন। তাই কেউ ফাইনাল পরীক্ষা দিতে না পারলে দায় আমাদের সবার ঘাড়ে পড়বে। তাঁদের আবেদন, তাঁদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই পরীক্ষার দিন বদল হয়েছে। এখানে অন্য কিছু নেই।”
তবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ‘যুক্তি’র আড়ালে মূল কারণটি বেশ স্পষ্ট। বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, মূলত ২১শে জুলাইয়ের জনসমাবেশে ভিড় বাড়ানোর জন্যই এই দিনবদল করা হয়েছে, যাতে ছাত্র-ছাত্রীসহ তৃণমূল সমর্থকরা সেদিন নির্বিঘ্নে কলকাতা যেতে পারে। যদি যানজট বা গণপরিবহনের সমস্যাই মূল কারণ হতো, তাহলে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট পরীক্ষার দিন কেন বদলানো হলো না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। হোস্টেলে থাকা শিক্ষার্থীরা বাসের ওপর নির্ভর না করলেও, বাইরের শিক্ষার্থীরা কেন সেদিন বাসের সমস্যায় পড়বেন, সেই আশঙ্কা তুলে ধরা হলেও, এর সঙ্গে রাজনৈতিক সমাবেশের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক স্পষ্ট।
Lok Sabha : সংসদের বাদল অধিবেশন শুরু ২১ জুলাই, ভারত সরকারের এজেন্ডায় ৮টি নতুন বিল
বিতর্কের মূল কারণ
প্রকৃতপক্ষে, ২১শে জুলাইয়ের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সমাবেশের দিন, যখন রাজ্যের পরিবহণ ব্যবস্থা তৃণমূল কর্মীদের কলকাতা নিয়ে যাওয়ার জন্য আংশিকভাবে ব্যবহৃত হয় এবং রাস্তায় বিশেষ করে জেলার দিক থেকে আসা যানবাহনের চাপ বাড়ে, তখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই পরীক্ষা বাতিল করে শিক্ষার্থীদের সরাসরি সেই সমাবেশে যোগদানের পথ খুলে দিয়েছে বলে মনে করছে বিরোধীরা। পরীক্ষা বাতিলের এই সিদ্ধান্তকে শিক্ষাঙ্গনে রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর একটি উদাহরণ হিসেবেই দেখছে তারা। ২১শে জুলাইয়ের গুরুত্ব এবং সেদিন রাজনৈতিক সমাবেশে যোগদানের প্রবণতা বাদ দিয়ে কেবল ‘যানজট’কে কারণ হিসেবে দেখানোয় এই বিতর্কের জন্ম হয়েছে।