ব্যুরো নিউজ,১৫মার্চ: অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরা শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত এক আশ্চর্যজনক হ্রদ, যার নাম জর্জ লেক। এই হ্রদকে ঘিরে রয়েছে রহস্যের আবরণ, যা যুগ যুগ ধরে বিস্ময়ের জন্ম দিয়ে আসছে। কারণ? এটি কখনো জলপূর্ণ থাকে, আবার হঠাৎ করেই অদৃশ্য হয়ে যায়! স্থানীয়দের কাছে এটি আর নতুন কিছু নয়, তবে বহিরাগতরা এ কাহিনি শুনলে অবাক না হয়ে পারেন না। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন, কোনও রহস্যময় জাদুবলে এই হ্রদ মাঝে মাঝে হারিয়ে যায়। কিন্তু বিজ্ঞানের কাছে কি এর কোনও ব্যাখ্যা আছে?
এক নদী থেকে লবণাক্ত হ্রদে রূপান্তর
চৈত্রের শুরুতেই তাপপ্রবাহের খেল শুরু সতর্কতা আবহাওয়া দপ্তরের
বিশেষজ্ঞদের মতে, জর্জ লেক বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন জলাশয়গুলির একটি। হাজার হাজার বছর আগে এই অঞ্চলে প্রবাহিত হতো ইয়াস নদী। তবে একাধিক ভূতাত্ত্বিক পরিবর্তনের ফলে নদীটি ক্রমশ মিলিয়ে গিয়ে তৈরি হয় একটি লবণাক্ত হ্রদ, যা পরিচিতি পায় জর্জ লেক নামে।
প্রাচীনকালে এই অঞ্চলটি মূলত বিস্তৃত তৃণভূমি ছিল, যেখানে বিভিন্ন প্রাণী চরে বেড়াত। স্থানীয় উপজাতিরা সেই সময় এই স্থানকে ব্যবহার করত শিকার ও কৃষিকাজের জন্য। কিন্তু ধীরে ধীরে জলাশয়টির চরিত্র বদলাতে থাকে, আর এক সময় এটি রহস্যময়ভাবে বারবার উধাও হতে শুরু করে!
মহাকাশ থেকে অবশেষে সুনিতারা ফিরছেন। তাদের আনতে উড়ে গেল ফ্যালকন- ৯
বারবার অদৃশ্য হওয়ার ঘটনা
জর্জ লেকের প্রথম ‘অদৃশ্য’ হয়ে যাওয়ার ঘটনা নথিভুক্ত হয় ১৯ শতকের শুরুর দিকে। ১৮৪০ সালের কাছাকাছি সময়ে হ্রদটি হঠাৎ শুকিয়ে যায়, আর তার জায়গায় জন্ম নেয় সবুজ মাঠ। স্থানীয় উপজাতিরা তখন হ্রদের মাঝখানে হেঁটে যেতে পারত। কিন্তু কয়েক দশক পরে, আশ্চর্যজনকভাবে লেকটি আবারও জলে পূর্ণ হয়ে ওঠে!
এই অদ্ভুত পরিবর্তন বারবার ঘটেছে। ১৯৭১ সালে ভূতত্ত্ববিদ প্যাট্রিক ডে ডেকার এই রহস্য উদঘাটনের জন্য গবেষণা শুরু করেন। তিনি লক্ষ্য করেন যে, ১৯৮৬ সালে হ্রদটি আবার জলশূন্য হয়ে যায়, কিন্তু ১৯৯৬ সালে ফের তা জলে ভরে ওঠে। এরপর ২০০২ এবং ২০১৬ সালেও একই ঘটনা ঘটে।
রাতে মোবাইল দেখছেন আর কম ঘুমাচ্ছেন জানেন কি আপনার শরীরে কোন কোন মারণ রোগ বাসা বাঁধছে?কি বলছে বিশেষজ্ঞরা!
এই হ্রদের আচরণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অনেকেই বিভিন্ন কাহিনি বুনেছেন। কেউ বলেন, যখন জর্জ লেক শুকিয়ে যায়, তখন নিউজিল্যান্ডের কোনও এক হ্রদ জলে পূর্ণ হয়ে ওঠে। যদিও এই দাবির পক্ষে কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।
তবে গবেষক প্যাট্রিক ডে ডেকারের মতে, জর্জ লেকের তলদেশে সবসময়ই জল মজুত থাকে। এটি আসলে একটি অবনত ভূমি (depression basin), যেখানে পানির স্তর নির্ভর করে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও পরিবেশগত পরিবর্তনের ওপর। দীর্ঘ সময় ধরে অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে, তলদেশ থেকে জল উপরে উঠে আসে এবং হ্রদ পূর্ণ হয়ে যায়। অন্যদিকে, শুষ্ক মৌসুমে বাষ্পীভবন এবং কম বৃষ্টির ফলে হ্রদটি আবার অদৃশ্য হয়ে যায়।
এই রহস্যময়তার জন্য জর্জ লেক পর্যটকদের কাছে বিশেষভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রকৃতির এই আশ্চর্য পরিবর্তন দেখতে প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক সেখানে ভিড় জমান। একদিকে হ্রদের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য, অন্যদিকে এর অদ্ভুত রহস্য—সব মিলিয়ে এটি এক অনন্য ভ্রমণ গন্তব্য।
তবে বিজ্ঞানীরা এখনও হ্রদের আচরণের আরও বিস্তারিত গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এটি প্রকৃতির এক অপূর্ব লীলাখেলা, যা মানুষের কৌতূহলকে উস্কে দেয়। জর্জ লেক সত্যিই এক বিস্ময়কর জলাশয়, যার রহস্য আজও পুরোপুরি উন্মোচিত হয়নি!