ব্যুরো নিউজ ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : ‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’ ছবিটি পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রীর ‘ফাইলস’ ট্রিলজির তৃতীয় কিস্তি, যা ১৯৪০-এর দশকের বাস্তব ঘটনা দ্বারা অনুপ্রাণিত। ছবিটিতে ১৯৪৬ সালের ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে’র গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংস এবং নোয়াখালীর দাঙ্গার মতো বাংলার ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক সহিংসতার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ছবিটি একটি সমসাময়িক গল্পের মাধ্যমে অতীতকে তুলে ধরে, যেখানে একজন সিবিআই অফিসার একজন সাংবাদিকের অন্তর্ধানের তদন্ত করতে গিয়ে ইতিহাসের সেই অন্ধকার অধ্যায়ের মুখোমুখি হন।
ছবির মূল বিষয়বস্তু ও বিশ্লেষণ
ছবিটি প্রধানত ১৯৪৭ সালের ভারত বিভাজনের সময় বাংলার ইতিহাসের এক উপেক্ষিত অধ্যায়কে কেন্দ্র করে নির্মিত। এটি একটি ‘হিন্দুমুসলিম’ ইস্যু নয়, বরং একচেটিয়া ধর্মীয় উগ্রবাদের ভয়াবহতার ধারাবাহিকতার ওপর আলোকপাত করে। টেক্সট অনুযায়ী, ‘কাশ্মীর ফাইলস’-এর প্রধান চরিত্র কৃষ্ণ পণ্ডিতকে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে, যা একটি ধারাবাহিকতার অনুভূতি তৈরি করে। এর মাধ্যমে বোঝানো হয় যে, ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজন, এরপর কাশ্মীর, এবং এখন বাংলা – এই সব ঘটনাই একই ধরনের উগ্রবাদী চিন্তাধারার ফল। ছবির চরিত্র ‘ভারতী ব্যানার্জি’ (পল্লবী যোশী অভিনীত), যিনি অতীতের স্মৃতি বহন করেন, তাকে ‘ভারত মাতা’র প্রতীক হিসেবে দেখানো হয়েছে, যা এক গভীর ট্র্যাজেডির ইঙ্গিত দেয়।
ছবিতে ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব যেমন গোপাল পাঠা এবং হিন্দু মহাসভার স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে, যা প্রচলিত ইতিহাসে প্রায়শই উপেক্ষিত। টেক্সট অনুসারে, ছবিটিতে মহাত্মা গান্ধীর অহিংসা নীতিকে সেই সময়ের নৃশংসতার মুখে অপ্রয়োজনীয় দেখানো হয়েছে, যা একটি বিতর্কিত দৃষ্টিভঙ্গি। ছবির নৃশংস দৃশ্যগুলো দর্শকদের অস্বস্তিতে ফেলে, যেমন একজন শিখ সৈনিককে দুটি মোটরসাইকেল দিয়ে ছিঁড়ে ফেলার দৃশ্য। ছবিটি ‘গঙ্গা-যমুনি তেহজিব’ এবং ভণ্ড ধর্মনিরপেক্ষতার শান্তির মুখোশ সরিয়ে দেয় এবং হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের বাস্তবতাকে সরাসরি তুলে ধরে।
অভিনয় ও কারিগরি দিক
ছবিতে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে। পল্লবী যোশীর অভিনয়কে ‘অসাধারণ’ বলা হয়েছে, যা তাকে একাধিক পুরস্কার এনে দিতে পারে। দারশান কুমারের অভিনয়ও প্রশংসিত, যিনি একজন নৈতিক দন্দ্বের মধ্যে থাকা সিবিআই অফিসার চরিত্রে বিশ্বাসযোগ্য। মিঠুন চক্রবর্তী, অনুপম খের, রাজেশ খেরা এবং শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের মতো অভিজ্ঞ অভিনেতারা তাঁদের চরিত্রে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন। সিমরত কৌর তরুণ ভারতী মুখার্জির চরিত্রে ভালো অভিনয় করেছেন। তবে, টেক্সট অনুসারে, তার চরিত্রে আরও গভীরতা আশা করা হয়েছিল।
ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক এবং সুপরিচিত বাংলা গানগুলির ব্যবহার আবেগপ্রবণ করে তোলে। ছবির সিনেমাটোগ্রাফি সেই সময়ের পরিবেশ এবং মেজাজ ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। বিশাল সেট তৈরি করে পরিচালক সেই ঐতিহাসিক সময়কে বাস্তবসম্মতভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।
বক্স অফিস ও জনমত
‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’ ছবিটি ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে মুক্তি পায়। বক্স অফিসে ‘বাঘী ৪’ এবং ‘দ্য কনজ্যুরিং: লাস্ট রাইটস’-এর মতো বড় ছবির সঙ্গে প্রতিযোগিতা থাকা সত্ত্বেও, এটি একটি বিনয়ী শুরু করেছে। প্রথম চার দিনে এর মোট সংগ্রহ ৭.৮৫ কোটি রুপি। প্রথম তিন দিনে ছবির আয় ক্রমশ বেড়েছে, কিন্তু চতুর্থ দিনে (সোমবার) তা কমে যায়।
- দিন ১ (শুক্রবার): ১.৭৫ কোটি রুপি
- দিন ২ (শনিবার): ২.২৫ কোটি রুপি
- দিন ৩ (রবিবার): ২.৭৫ কোটি রুপি
- দিন ৪ (সোমবার): ১.১০ কোটি রুপি (প্রাথমিক অনুমান)
টেক্সট অনুযায়ী, ছবির বক্স অফিস শুরু ‘কাশ্মীর ফাইলস’-এর মতোই মন্থর, কিন্তু সময়ের সাথে এটি একটি ‘কাল্ট হিট’ হওয়ার সম্ভাবনা রাখে, যা বিতর্কিত ইতিহাসকে উন্মোচন করতে আগ্রহী দর্শকদের আকর্ষণ করবে।