ব্যুরো নিউজ ১০ জুন : আধুনিক বিশ্বে ইন্টারনেট, যোগাযোগ, আবহাওয়ার পূর্বাভাস এবং সামরিক নজরদারির জন্য স্যাটেলাইট অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। স্টারলিঙ্ক-এর মতো ‘মেগা-কনস্টেলেশন’ (mega-constellation) প্রকল্পের মাধ্যমে হাজার হাজার স্যাটেলাইট কক্ষপথে স্থাপন করা হচ্ছে, যা একদিকে যেমন নতুন সুযোগ তৈরি করছে, তেমনই অন্যদিকে মহাকাশের পরিবেশ এবং পৃথিবীর সুরক্ষার জন্য নতুন উদ্বেগও সৃষ্টি করছে।

স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইট ভূপাতিত হওয়ার ঘটনা
ইলন মাস্কের স্পেসএক্স (SpaceX) কর্তৃক উৎক্ষেপিত স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইটগুলো সাম্প্রতিক সময়ে মহাকাশে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। জানা গেছে, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে মোট ৫২৩টি স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইট পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পুনরায় প্রবেশ করে ভূপাতিত হয়েছে। ২০২৪ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩১৬টি, যা এই ধরনের ঘটনাগুলির মধ্যে সর্বোচ্চ।

আমেরিকায় স্মার্টফোন রফতানিতে বৃদ্ধি ভারতের, পেট্রোল-হীরা ছাপিয়ে

ঘটনাবলির সংখ্যা ও কারণ

  • সংখ্যা: ২০২০-২০২৪ সালের মধ্যে মোট ৫২৩টি স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইট ভূপাতিত হয়েছে। এর মধ্যে শুধু ২০২৪ সালেই ৩১৬টি স্যাটেলাইট বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে ধ্বংস হয়ে গেছে।
  • প্রধান কারণ: এই স্যাটেলাইটগুলি ভূপাতিত হওয়ার প্রধান কারণ হলো সূর্যের তীব্র সৌর কার্যকলাপ বৃদ্ধি। বিশেষ করে, সূর্যের ১১ বছরের সৌরচক্রের একটি সক্রিয় পর্যায় (সোলার ম্যাক্সিমাম) বর্তমানে চলছে।
  • সৌর কার্যকলাপের প্রভাব: যখন সূর্য অধিক সক্রিয় থাকে, তখন এটি সৌর শিখা (solar flares) এবং করোনার ভর নির্গমন (coronal mass ejections – CMEs) ঘটায়, যা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত ও প্রসারিত করে। এই প্রসারণ নিম্ন পৃথিবীর কক্ষপথে (Low Earth Orbit – LEO) থাকা স্যাটেলাইটগুলির উপর বায়ুমণ্ডলীয় টান (atmospheric drag) বাড়িয়ে দেয়। বর্ধিত টানের কারণে স্যাটেলাইটগুলি তাদের কক্ষপথ থেকে দ্রুত বিচ্যুত হয় এবং পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পুনরায় প্রবেশ করে পুড়ে যায়।
  • ২০২২ সালের বিশেষ ঘটনা: ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি ক্ষুদ্র ভূ-চুম্বকীয় ঝড়ের কারণে উৎক্ষেপণের মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই প্রায় ৪০টি স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এবং তারা তাদের নির্ধারিত কক্ষপথে পৌঁছানোর আগেই ভূপাতিত হয়।

স্টারলিঙ্ক পরিষেবার উপর প্রভাব

  • সামান্য অবনতি: যদিও কিছু স্যাটেলাইট ভূপাতিত হয়েছে, স্টারলিঙ্ক তার “মেগা-কনস্টেলেশন” কৌশল ( হাজার হাজার স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ ) এবং ক্রমাগত নতুন স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে পরিষেবা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছে। তাই, কিছু ক্ষেত্রে পরিষেবার মান কিছুটা অবনত হওয়ার সতর্কবার্তা দেওয়া হলেও, এর ফলে স্টারলিঙ্ক পরিষেবা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়নি বা বড় ধরনের বিভ্রাট ঘটেনি।
  • ক্ষতিপূরণ: স্পেসএক্স নিয়মিতভাবে নতুন স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে হারানো স্যাটেলাইটের শূন্যতা পূরণ করে।

পৃথিবীতে উপগ্রহের ধ্বংসাবশেষ এবং স্টারশিপের সাম্প্রতিক ঘটনা মহাকাশ থেকে রকেট বা স্যাটেলাইটের অংশবিশেষ পৃথিবীতে ফিরে আসা একটি পরিচিত ঘটনা। যদিও এর বেশিরভাগই বায়ুমণ্ডলে পুড়ে ছাই হয়ে যায়, কিছু বড় অংশ অক্ষত অবস্থায়ও পৃথিবীতে পতিত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।

  • স্টারশিপের সাম্প্রতিক উৎক্ষেপণ ব্যর্থতা:
    • ঘটনা: মার্চ ৭, ২০২৫ তারিখে স্পেসএক্সের স্টারশিপ প্রোগ্রামের অষ্টম পরীক্ষামূলক উড়ানটি (Flight 8) উৎক্ষেপণের কয়েক মিনিট পরেই সমস্যার সম্মুখীন হয়। সুপার হেভি বুস্টারটি সফলভাবে ফিরে এলেও, স্টারশিপের উপরের অংশ (Ship) নির্ধারিত উচ্চতায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হয় এবং এটি অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে। এটি অ্যাসেন্ড বার্নের সময় একাধিক ইঞ্জিনের অপ্রত্যাশিত শাটডাউন এবং শেষ পর্যন্ত যানের ভেঙে যাওয়ার কারণে ঘটেছে।
    • পেলোড ও উদ্দেশ্য: এই পরীক্ষামূলক উড়ানে চারটি ডামি স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইট (বা সিমুলেটর) বহন করার কথা ছিল, যা মহাকাশে মোতায়েন করার পরিকল্পনা ছিল। তবে, যেহেতু যানটি তার সম্পূর্ণ উড়ান সম্পন্ন করতে পারেনি, তাই পেলোডগুলি মোতায়েন করা সম্ভব হয়নি এবং সেগুলো যানের ধ্বংসাবশেষের সাথেই বায়ুমণ্ডলে পুড়ে যায়।
    • স্পেসএক্সের প্রতিক্রিয়া: স্পেসএক্স তাদের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘X’ (সাবেক টুইটার)-এ এই ঘটনার বিষয়ে দ্রুত আপডেট জানিয়েছে। তারা স্বীকার করেছে যে স্টারশিপের “র‍্যাপিড আনশিডিউল্ড ডিসঅ্যাসেম্বলি” (Rapid Unscheduled Disassembly) হয়েছে এবং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। স্পেসএক্স জানিয়েছে যে তারা এই ব্যর্থতা থেকে শিখছে এবং ভবিষ্যতের উড়ানগুলির নির্ভরযোগ্যতা উন্নত করার জন্য ডেটা পর্যালোচনা করছে। এই ব্যর্থতা স্টারশিপের জন্য টানা দ্বিতীয় উচ্চ পর্যায় ব্যর্থতা ছিল।

      ‘মহাকাশ অভিযানের ৭,২০০টির বেশি পরীক্ষা সম্পন্ন’: ইসরো প্রধান

উপসংহার
মহাকাশে স্যাটেলাইটের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং সৌর কার্যকলাপের মতো প্রাকৃতিক ঘটনার কারণে এই ধরনের ঘটনা আরও বাড়তে পারে। স্টারলিঙ্ক-এর মতো প্রকল্পগুলি একদিকে যেমন বিশ্বব্যাপী সংযোগ সহজলভ্য করছে, তেমনি মহাকাশীয় ধ্বংসাবশেষ এবং এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে নতুন করে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। স্টারশিপের মতো নতুন প্রজন্মের রকেটগুলির পরীক্ষামূলক উড়ানগুলি মহাকাশ গবেষণার জন্য অপরিহার্য, তবে এর সাথে যুক্ত ঝুঁকি এবং পৃথিবীর উপর এর সম্ভাব্য প্রভাবগুলি সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করা জরুরি। ভবিষ্যতে মহাকাশ প্রযুক্তির স্থায়িত্ব এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার অত্যন্ত জরুরি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর