ব্যুরো নিউজ ৫ জুন : মেঘালয়ের পূর্ব খাসি পাহাড় জেলায় হানিমুনে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া ইন্দোরের দম্পতি রাজা রঘুবংশী (২৯) এবং সোনম রঘুবংশীর (২৭) ঘটনায় চাঞ্চল্য আরও বাড়লো। নিখোঁজ হওয়ার প্রায় দশ দিন পর রাজার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে একটি গিরিখাত থেকে, যা হত্যাকাণ্ডের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করছে। সোনমের এখনও কোনো খোঁজ মেলেনি, এবং এই ঘটনাটি উত্তর-পূর্ব ভারতের সীমান্ত রাজ্যগুলিতে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উত্থাপন করেছে।
শনাক্তকরণ ও হত্যাকাণ্ডের নিশ্চিতকরণ
গত ৩রা জুন, সোহরার কাছে একটি গভীর গিরিখাত থেকে রাজা রঘুবংশীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তার ভাই তার ডান হাতে ‘রাজা’ ট্যাটু দেখে মৃতদেহটি শনাক্ত করেন। মৃতদেহের কাছাকাছি একটি ধারালো অস্ত্র, যা স্থানীয়ভাবে ‘দাও’ নামে পরিচিত, সেটিও পাওয়া গেছে। ইস্ট খাসি হিলসের পুলিশ সুপার বিবেক সিয়েম নিশ্চিত করেছেন যে, এটি একটি ‘সুস্পষ্ট হত্যাকাণ্ড’ এবং রাজার মৃত্যু কোনো দুর্ঘটনা নয়। উদ্ধারস্থলে একটি মহিলার সাদা শার্ট, ওষুধের একটি স্ট্রিপ, একটি মোবাইল ফোন স্ক্রিনের ভাঙা অংশ এবং একটি স্মার্টওয়াচও পাওয়া গেছে। যদিও রাজার স্মার্টওয়াচটি তার হাতেই ছিল, তার সোনার আংটি, সোনার চেন এবং মানিব্যাগ সহ চারটি মোবাইল ফোন নিখোঁজ রয়েছে, যা ডাকাতির উদ্দেশ্যকেও ইঙ্গিত করছে।
বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত: ছাড়াল জাপানকে
সোনমের শেষ বার্তা ও রহস্যের জাল
সোনমের একটি অডিও রেকর্ডিং প্রকাশ্যে এসেছে, যা তার নিখোঁজ হওয়ার আগে তার শাশুড়ির সাথে শেষ কথোপকথন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ক্লিপটিতে সোনমকে হাঁফাতে শোনা যায় এবং তিনি জানান যে তারা একটি ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে আরোহণ করছেন এবং রাস্তা খুবই দুর্গম। তিনি আরও উল্লেখ করেন, “আমরা এখন উঠছি… পরে কথা বলবো।” তার শাশুড়ি জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, “হ্যাঁ, উপোস। কিন্তু এই ঘুরতে গিয়ে আমি উপোস ভাঙবো না।” সোনম আরও অভিযোগ করেন যে, “এখানে কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না। চড়াই খুব খাড়া। আমি তাকে (রাজাকে) যেতে বারণ করেছিলাম, কিন্তু সে কথা শোনে না। আমি ক্লান্ত। এখানকার খাবারও ভালো নয়। হাঁটতে গেলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।” কথোপকথনটি হঠাৎ করেই শেষ হয়ে যায় এবং এরপর সোনমের আর কোনো খোঁজ মেলেনি। একটি কালো রঙের রেইনকোটও উদ্ধার করা হয়েছে, যেখানে কিছু দাগ রয়েছে। পুলিশ ফরেনসিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছে যে এটি সোনমের পোশাক ছিল কিনা এবং তাতে রক্তের দাগ আছে কিনা।
অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান
গত ২৩শে মে নিখোঁজ হওয়ার পর, ২৪শে মে থেকে রাজা ও সোনমের অনুসন্ধান শুরু হয়। তাদের ভাড়া করা স্কুটারটি শিলং-সোহরা সড়কের পাশে একটি ক্যাফের কাছে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। এনডিআরএফ (National Disaster Response Force) এর ১৭ সদস্যের একটি দলও সোনমের সন্ধানে যোগ দিয়েছে। ড্রোন, পর্বতারোহী এবং বিশেষ পুলিশ বাহিনীও তল্লাশি চালাচ্ছে। তবে, গত কয়েকদিন ধরে প্রবল বৃষ্টিপাত (প্রায় ৫০০ মিমি) এবং খারাপ দৃশ্যমানতার কারণে অভিযান ব্যাহত হচ্ছে।
পরিবারের দাবি ও মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস
রাজার পরিবার, বিশেষ করে তার ভাই বিপিন রঘুবংশী, এই ঘটনার সিবিআই (Central Bureau of Investigation) তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। তারা অভিযোগ করেছেন যে, কিছু ‘সন্দেহভাজন’ ব্যক্তি তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে এবং স্থানীয়দের জড়িত থাকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না। মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড কে সাংমা এই হত্যাকাণ্ডকে ‘খুব দুর্ভাগ্যজনক’ এবং ‘অভূতপূর্ব’ ঘটনা বলে অভিহিত করেছেন। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন যে, দোষীদের খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। সিবিআই তদন্তের বিষয়ে তিনি জানান যে, সব তথ্য যাচাই করার পর উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রী মেঘালয়কে একটি পর্যটন-বান্ধব রাজ্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং জানিয়েছেন যে এই ধরনের ঘটনা রাজ্যে সচরাচর ঘটে না।
প্রবীণ নাগরিকদের জন্য কেন্দ্রের ঐতিহাসিক ঘোষণা: ১৫ জুন থেকে সারাদেশে বিনামূল্যে ভ্রমণের সুবিধা
পর্যটক নিরাপত্তার ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ
এই ঘটনাটি ভারতের সীমান্ত রাজ্যগুলিতে পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। অতীতেও জম্মু ও কাশ্মীর (পাহালগাম হত্যাকাণ্ড), সিকিম (ভূমিধস) এবং মেঘালয়ের মতো সংবেদনশীল অঞ্চলগুলিতে পর্যটকদের উপর হামলা বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি, এই বছরই মেঘালয়ে হাঙ্গেরির এক পর্যটক নিখোঁজ হওয়ার ১২ দিন পর মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছিল, যদিও পুলিশ সেই ঘটনাকে দুর্ঘটনা বলে অভিহিত করে। এই ধরনের পুনরাবৃত্ত ঘটনাগুলি পর্যটন শিল্পে নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে গুরুতর প্রশ্নচিহ্ন সৃষ্টি করছে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই পর্যটকদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে আরও জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।