ব্যুরো নিউজ ১৩ জুলাই ২০২৫ : বার্ধক্য যে কেবল একটি সংখ্যা মাত্র, তা আবারও প্রমাণ করলেন ৮০ বছর বয়সী ডঃ শ্রদ্ধা চৌহান। নিজের ৮০তম জন্মদিনে ছেলে ব্রিগেডিয়ার সৌরভ সিং শেখাওয়াতের সঙ্গে ১০,০০০ ফুট উচ্চতা থেকে সফলভাবে স্কাইডাইভ করে তিনি ভারতের সবচেয়ে প্রবীণ মহিলা স্কাইডাইভার হিসেবে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। হরিয়ানার নারনৌল এয়ারস্ট্রিপে অবস্থিত স্কাইহাই ইন্ডিয়ার প্রত্যয়িত ড্রপ জোন থেকে এই ঐতিহাসিক লাফ দেন তিনি, যা দেশজুড়ে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে।
অদম্য ইচ্ছাশক্তির জয়
ডঃ চৌহান বেশ কিছু স্বাস্থ্যগত সমস্যা, যেমন ভার্টিগো, সারভাইকাল স্পন্ডাইলোসিস এবং মেরুদণ্ডের ডিস্কের সমস্যা নিয়ে জীবনযাপন করা সত্ত্বেও তাঁর অদম্য সংকল্প এবং সাহসিকতা তাঁকে এই কঠিন কাজটি সম্পন্ন করতে সাহায্য করেছে। তাঁর এই অর্জন কেবল একটি ব্যক্তিগত বিজয় নয়, বরং মাতৃস্নেহ, প্রজন্মের গর্ব এবং নির্ভীকতার এক প্রতীকী মুহূর্ত হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। স্কাইহাই ইন্ডিয়া তাদের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে এই ঐতিহাসিক ভিডিওটি শেয়ার করার পর তা দ্রুত ভাইরাল হয় এবং দেশজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে ওঠে।
মায়ের স্বপ্ন পূরণে পুত্রের অবদান
আকাশ অভিযানের আগে যখন ডঃ চৌহানকে তাঁর এই পদক্ষেপ নিয়ে কেমন লাগছে জিজ্ঞাসা করা হয়, তখন তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, “খুব ভালো লাগছে। ছোটবেলার যে স্বপ্ন ছিল প্লেনের মতো আকাশ দিয়ে উড়ে চলার, সেটা আজ পূরণ হবে। আমার পুত্র আমাকে আজ তৈরি করছে এই অভিযানের জন্য, যেভাবে আমি তাকে ছোটবেলায় তৈরি করে দিতাম। আজ আমার জন্য একটি গর্বের দিন!”
এরপর দেখা যায়, ব্রিগেডিয়ার সৌরভ সিং শেখাওয়াত পরম যত্নে তার মাতাকে স্কাইডাইভিংয়ের পোশাক পরিয়ে দিচ্ছেন এবং উপযুক্ত সরঞ্জাম (যেমন প্যারাসুট ও হারনেস) সঠিকভাবে সাজিয়ে দিচ্ছেন। মা-ছেলের এই জুটি এরপর উচ্চতায় উড়ে চলা একটি বিমান থেকে ঝাঁপ দেন এবং সফলভাবে আকাশের মধ্যে ভেসে ভূমির দিকে ধেয়ে এসে, প্যারাসুটের মাধ্যমে স্থল স্পর্শ করেন।
Rocky : বিপর্যস্ত হিমাচলের এক ‘নীরব নায়ক’-এর গল্প
বার্ধক্যে এক নতুন দিগন্ত
ডঃ শ্রদ্ধা চৌহান তাঁর অদম্য সাহস এবং ইচ্ছাশক্তির দ্বারা প্রমাণ করেছেন যে, জীবনকে সম্পূর্ণভাবে উপভোগ করার জন্য বয়স কোনো বাধা নয়। তাঁর এই অনুপ্রেরণামূলক যাত্রা বহু মানুষকে তাদের স্বপ্ন পূরণের জন্য উৎসাহিত করবে, তবে স্কাইডাইভিংয়ের মতো ঝুঁকিপূর্ণ ক্রিয়াকলাপের ক্ষেত্রে প্রত্যেকেরই নিজের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করে এবং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা প্রোটোকল মেনে চলা উচিত।
সন্তান ও জননীর ভালোবাসার অনন্য দৃষ্টান্ত
এক সন্তানের তার মাতাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতির এই পূরণ সত্যিই হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। সন্তানকে গড়ে তোলার মধ্যে মা-বাবার যে অবদান থাকে, সেই ঋণ হয়তো সন্তান কোনো দিন শোধ করতে পারে না — কিন্তু বার্ধক্যে সেই সন্তান তাদের প্রতিশ্রুতির পূরণ, স্বপ্ন পূরণ এবং সাহারা হয়ে দাঁড়ায়। এই ঘটনা মা-ছেলের গভীর ভালোবাসা, স্নেহ এবং যত্নের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।