ব্যুরো নিউজ ১৬ অক্টোবর ২০২৫ : বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (SIR) সম্ভবত কয়েক সপ্তাহ আগেই, ভারতের নির্বাচন কমিশন (ECI) পশ্চিমবঙ্গের জেলা নির্বাচনী আধিকারিকদের (DEOs), যাঁরা জেলা শাসকও বটে, নির্দেশ দিয়েছে যেন তাঁরা বৃহস্পতিবারের মধ্যে ভোটার তালিকার ‘ম্যাপিং এবং ম্যাচিং’ প্রক্রিয়া শেষ করেন। কমিশন DEO-দের আরও নির্দেশ দিয়েছে, এই সপ্তাহের মধ্যেই ২০০২ এবং ২০২৫ সালের ভোটার তালিকার ম্যাপিং সংক্রান্ত তথ্য কমিশনের সরকারি ওয়েবসাইটে আপলোড করতে হবে। রাজ্যে শেষ SIR হয়েছিল ২০০২ সালে।
ম্যাপিং প্রক্রিয়া কী?
২০০২ সালের ভোটার তালিকার ভিত্তিতেই এবারের বিশেষ সংশোধন প্রক্রিয়াটি হবে, কারণ সেই বছরেই শেষবার বিশেষ সংশোধন করা হয়েছিল। এই প্রক্রিয়ায়:
১. নথি যাচাই: যে সমস্ত ব্যক্তিরা ২০০২ সালের তালিকায় ছিলেন না কিন্তু বর্তমানে তালিকাভুক্ত হয়েছেন, তাঁদের ভারতীয় নাগরিকত্ব এবং ভোটাধিকার নথি সাপেক্ষে যাচাই করা হবে।
২. বাদ যাওয়া: যারা ২০০২ সালের তালিকায় ছিলেন এবং বর্তমানে মৃত অথবা বাসস্থান পরিবর্তন করে অন্য রাজ্যে চলে গেছেন, তাঁদের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়বে।
৩. অনুমান: এই ম্যাপিং প্রক্রিয়ায় ২০০২ সালের তালিকার সঙ্গে এখনকার তালিকার কতটা মিল বা পার্থক্য রয়েছে, তার একটি আনুমানিক ধারণা পাওয়া যাবে, যার পরই শুরু হবে SIR প্রক্রিয়া।
নির্বাচন কমিশনের CEO-এর কার্যালয় আজ ম্যাপিং-এর অগ্রগতি নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক করে এবং দেখে যে বেশ কয়েকটি জেলা এখনও প্রক্রিয়াটি শেষ করতে পারেনি। সূত্র মারফত খবর, ম্যাপিং সংক্রান্ত তথ্য ওয়েবসাইটে আপলোড হওয়ার পরেই কমিশন আগামী সপ্তাহে SIR-এর তারিখ ঘোষণা করতে পারে।
ডেড ভোটারের সংখ্যা বিপুল
নির্বাচন কমিশন আসন্ন ২০২৬ সালের এপ্রিল-মে মাসে নির্ধারিত বিধানসভা নির্বাচনের আগে SIR-এর মাধ্যমে বিদ্যমান ভোটার তালিকায় মৃত ভোটারদের চিহ্নিত করার উপর অতিরিক্ত জোর দেবে।
- তথ্য উদ্ঘাটন: ২০০২ এবং ২০২৫ সালের ভোটার তালিকার ম্যাপিং করার সময় নির্বাচন কমিশন দেখেছে যে, ২০০২ সালের তালিকায় থাকা ভোটারদের প্রায় ৩৫ শতাংশই মৃত।
- বিশাল সংখ্যা: সূত্রের খবর অনুযায়ী, ২০০২ সালের SIR-পরবর্তী তালিকার ৪.৫৮ কোটি ভোটারের মধ্যে প্রায় ১.৫ কোটি ভোটার মৃত বলে জানা গেছে।
- বর্তমান তালিকা: নির্বাচন প্যানেলের সূত্র জানিয়েছে, মৃত ভোটারদের কতজনের নাম এখনও বর্তমান ভোটার তালিকায় রয়েছে, তা এখনও নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।
উল্লেখ্য, ২০০২ সালে বাংলায় ভোটারের সংখ্যা ছিল ৪.৫৮ কোটি। যা ২০২৫ সালে বেড়ে হয়েছে ৭.৬২ কোটি। চলতি বছরের এপ্রিলে নদিয়ার কালীগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে বিশেষ সংক্ষিপ্ত সংশোধনের পর ভোটার তালিকা থেকে ৮,০০০ নাম মুছে ফেলার পরেই কমিশন এই ম্যাপিং প্রক্রিয়া জোরদার করতে উদ্যোগী হয়। মুছে ফেলা বেশিরভাগ ভোটারই ছিলেন মৃত।
Bihar Elections : ভোট ঘোষণা বিহারে , দুই দফায় হবে ২৪৩ আসনে নির্বাচন , গণনা দ্বিতীয় দফার ৩ দিনের মধ্যেই !
রাজনৈতিক বিতর্ক তুঙ্গে
এই SIR প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই তা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে চরম বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
বিজেপির দাবি : বিরোধী বিজেপি নেতারা দাবি করেছেন যে SIR শেষ হওয়ার পর ভোটার তালিকা থেকে প্রায় এক কোটি ভোটারের নাম বাদ যাবে।
তৃণমূলের তীব্র বিরোধিতা : অন্যদিকে, শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস এই SIR-এর তীব্র বিরোধিতা করছে। তারা এটিকে “পেছন দরজা দিয়ে NRC” করার চেষ্টা বলে অভিহিত করেছে এবং অভিযোগ করেছে যে এটি আসলে “আপোসরত” নির্বাচন কমিশনের একটি কৌশল, যাতে বিজেপির ভোট না দেওয়া ভোটারদের বাদ দেওয়া যায়।
সূত্র মারফত জানা যায়, মৃত ভোটার এবং বিদেশী নাগরিকদের ভোটার তালিকায় রেখে দেওয়ার তৃণমূল কংগ্রেসের প্রচেষ্টা তাদের এই সংশোধন পদ্ধতির বিরোধিতা করতে বাধ্য করছে, যা সম্পূর্ণরূপে অসাংবিধানিক। একটি রাজ্যের শাসক দল হয়েও এই ধরনের আচরণ আবারও এই দলের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।