ব্যুরো নিউজ, ২৩শে ডিসেম্বর ২০২৫ : হিন্দু ধর্মে শ্রী হনুমানজি বীরত্ব, শক্তি এবং অটুট ভক্তির এক অনন্য প্রতীক। যারা বজরংবলীর পরম ভক্ত, তারা জানেন যে হনুমানজি সেই সমস্ত মানুষদের সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন যারা মনের দিক থেকে সরল এবং আচরণে স্পষ্ট। তাঁর কাছে চাতুর্য বা কৃত্রিমতার চেয়ে হৃদয়ের সারল্য অনেক বেশি দামী। রামায়ণের প্রতিটি পাতায় হনুমানজির এই সরল প্রকৃতিই তাঁকে শ্রীরামের শ্রেষ্ঠ ভক্ত, দূত এবং সখায় পরিণত করেছে।
আসুন কিছু পৌরাণিক প্রসঙ্গের মাধ্যমে এই সত্যটি অনুধাবন করি:
নম্রতা ও অহংকারহীনতা
হনুমানজির বীরত্বের কাহিনী আকাশছোঁয়া, কিন্তু তাঁর মধ্যে কোনোদিন কোনো অহংকার বা স্বীকৃতির আকাঙ্ক্ষা ছিল না। লঙ্কা দহন করে সীতা মায়ের খোঁজ নিয়ে আসার মতো দুঃসাহসিক কাজ করার পরেও তিনি কখনও শ্রীরামের কাছে কোনো পুরস্কার বা যশের প্রত্যাশা করেননি। তাঁর এই অসামান্য বিনয় ও ‘শূন্য অহংকার’ তাঁকে অনন্য করে তুলেছে। তিনি আমাদের শেখান যে, কর্ম যতই মহান হোক না কেন, যশের আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করাই হলো প্রকৃত সারল্য।
Hanumanji : যন্ত্রণাই আমন্ত্রণ: হনুমানের অপ্রকাশিত উপস্থিতির গোপন রহস্য
ভক্তির সহজ পথ
শ্রীরামের প্রতি হনুমানজির ভক্তি ছিল প্রশ্নাতীত। প্রভু রাম যখনই তাঁকে কোনো কাজের নির্দেশ দিয়েছেন, তিনি কখনও কোনো তর্কে জড়াননি বা শর্ত আরোপ করেননি। তাঁর লক্ষ্য ছিল স্থির এবং পরিষ্কার—”প্রভুর আদেশ পালনই পরম ধর্ম”। এই একাগ্রতা এবং একনিষ্ঠ ভক্তিই হলো একটি সরল হৃদয়ের বহিঃপ্রকাশ। যেখানে কোনো জটিলতা নেই, সেখানেই হনুমানজির বাস।
দক্ষতা ও বুদ্ধিমত্তার সংমিশ্রণ
সরলতা মানেই কিন্তু অক্ষমতা নয়। হনুমানজি যেমন সরল ছিলেন, তেমনই ছিলেন অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও কৌশলী। বিশাল সমুদ্র পাড়ি দেওয়া থেকে শুরু করে রাবণের রাজসভায় বলিষ্ঠ ভাষণ—প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি জটিল সমস্যার সমাধান করেছেন অতি সহজ উপায়ে। তাঁর জীবনের দর্শন ছিল “সিম্পল বাট স্মার্ট” বা সরল অথচ বুদ্ধিদীপ্ত।
নৈতিক স্বচ্ছতা ও চারিত্রিক দৃঢ়তা
হনুমানজির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে অন্যতম হলো তাঁর নৈতিক স্পষ্টতা। তাঁর কাছে ন্যায় এবং অন্যায়ের মাঝে কোনো ধূসর এলাকা ছিল না। যা সত্য, তা চিরকালই সত্য—এই মানসিকতার কারণেই তিনি দ্বিধাহীনভাবে অধর্মের বিনাশ করতে পেরেছিলেন। আজকের যুগে যেখানে মানুষ নীতি নিয়ে আপস করে, সেখানে হনুমানজির এই চারিত্রিক দৃঢ়তা আমাদের পথ দেখায়।
Hanumanji : হনুমান চালিশা: ৪০ দিনের অভ্যাসে মন ও আত্মার রূপান্তর
পরম সন্তোষ ও ত্যাগের আদর্শ
বিশাল ক্ষমতার অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও হনুমানজি চিরকাল শ্রীরামের শ্রীচরণেই নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। তিনি কখনও নিজের জন্য ক্ষমতা, সম্পত্তি বা অনুগামী দল গড়ে তোলার চেষ্টা করেননি। সেবার মাধ্যমেই যে জীবনের প্রকৃত সাফল্য অর্জন করা যায়, তিনি তাঁর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। জাগতিক মোহের বদলে সেবার মধ্যেই তিনি পরম তৃপ্তি খুঁজে পেয়েছিলেন।
উপসংহার
বজরংবলীর আশীর্বাদ পেতে হলে বিশাল কোনো আড়ম্বরের প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন শুধু অহংকার ত্যাগ করে নিজের মনকে দর্পণ বা আয়নার মতো পরিষ্কার রাখা। তিনি আমাদের শেখান যে, ক্ষমতা থাকলেই উদ্ধত হতে হয় না; বরং মহান ক্ষমতা বজায় রাখার দায়িত্ব লুকিয়ে থাকে এক অতি সাধারণ ও সরল হৃদয়ের গভীরে।


















