ব্যুরো নিউজ,১৭ এপ্রিল: দিল্লির এক স্কুলে অষ্টম শ্রেণির ইতিহাস ক্লাসে শিক্ষিকার ঘোষণা—এবার সুলতানি যুগ পড়তে হবে না, পরীক্ষাতেও থাকবে না প্রশ্ন। ছাত্রছাত্রীদের উল্লাস। একই সময় পশ্চিমবঙ্গের এক জেলায় প্রশাসনিক বৈঠকে ট্যাব বিতরণ, স্কলারশিপ ও সরকারি প্রকল্প নিয়ে ব্যস্ত আলোচনা। নির্দেশ—সব প্রকল্পে যেন কারও নাম বাদ না পড়ে। লক্ষ্য একটাই—ভোটারদের মন জয় করা। এই দুই চিত্র কোনও কল্পনা নয়। বাস্তবে শিক্ষা আজ রাজনীতির অন্যতম বড় অস্ত্র। কেন্দ্র হোক বা রাজ্য, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে স্কুল শিক্ষাদানের কেন্দ্র নয়, বরং ভোট ব্যাঙ্ক গঠনের মাধ্যম।
শান্তির মুখোশে লুকানো উত্তেজনার আগুন: কী বললেন মুখ্যমন্ত্রী?
শিক্ষার নামে রাজনৈতিক খেলা
কেন্দ্রে বিজেপি শিক্ষাব্যবস্থার গৈরিকীকরণ করে হিন্দু ভোট একত্রিত করতে চায়। অন্যদিকে, রাজ্যে তৃণমূল সরকার শিক্ষার খাতে প্রকল্পের নামে খয়রাতি চালিয়ে ভোট টানতে ব্যস্ত। কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, সবুজ সাথীর মতো প্রকল্পগুলো একসময় শিক্ষায় আগ্রহ বাড়ালেও এখন অনেকক্ষেত্রে তা অনিয়মের আখড়া হয়ে উঠেছে। `শিক্ষা ব্যবস্থায় দুর্নীতি এতটাই ছড়িয়েছে যে সুপ্রিম কোর্ট প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ বাতিল করে দিয়েছে। আদালতের মন্তব্যে স্পষ্ট—যোগ্য ও অযোগ্যদের মধ্যে ফারাক না করে, পুরো ব্যবস্থাকে দুর্নীতির স্রোতে ভাসানো হয়েছে।
শিক্ষা দুর্নীতি না রাজনৈতিক চিত্রনাট্য? রবিবারের পথে জবাব খুঁজছে রাজনীতি
এত বড় ইস্যু পেয়ে বিজেপির যেমন উচিত ছিল ব্যাপক আন্দোলনে নামা, বাস্তবে তারা বেশি ব্যস্ত ধর্মীয় রাজনীতিতে। কোথাও হিন্দু শহিদ দিবস, কোথাও ধর্মীয় পতাকা লাগানোর উৎসাহ। যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনের পাশে থাকলেও ধর্ম রক্ষা যেন আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানেন, শিক্ষাক্ষেত্রের দুর্নীতির প্রশ্নে প্রচার বাড়লে শিক্ষিত ভোটব্যাঙ্কে ভাঙন ধরতে পারে। তাই সংখ্যালঘু ভোট এককাট্টা রাখতে ওয়াকফ আইন কার্যকর না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিজেপির উগ্র হিন্দুত্বের রাজনীতির পাল্টা চাল দিলেন।
ছাতার নিচে পয়লা বৈশাখ! কি জানালেন আবহাওয়া দফতর?
কিন্তু সমস্যার গভীরে অন্য সত্য লুকিয়ে। যদি ছাত্রছাত্রীরা জানে, তাদের শিক্ষক ঘুষ দিয়ে চাকরি পেয়েছেন, তাহলে তারা কাকে অনুসরণ করবে? যদি শিক্ষক নিজের চাকরি নিয়ে অনিশ্চিত থাকেন, তাহলে মন দিয়ে পড়াবেন কীভাবে? তৃণমূল হোক বা বিজেপি, শিক্ষাকে কেউই প্রকৃত অর্থে উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে দেখে না। বরং একে ব্যবহার করছে শুধুই রাজনৈতিক লাভের অঙ্কে। এর ফল ভোগ করছে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। শিক্ষার এই চূড়ান্ত সঙ্কটের সময়ে, রাজ্যের মানুষ সামনে তৃতীয় কোনও বিকল্পও দেখতে পাচ্ছেন না। সিপিএম ও কংগ্রেস এখনও শূন্যের ঘর থেকে মুক্তির পথ খুঁজতেই ব্যস্ত। ফলে প্রশ্ন থেকেই যায়—এই অন্ধকার গলিপথ থেকে শিক্ষার মুক্তি কবে?