ব্যুরো নিউজ,১৩ ফেব্রুয়ারি: প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারি সারা বিশ্ব জুড়ে পালিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। কিন্তু বাংলাদেশে এই দিবসটিকে পালন করা হয় জাতীয় দিবস হিসেবে। ওইদিন বাংলাদেশে সরকারি ছুটি থাকে। তবে, শুধুমাত্র বাংলাদেশেই নয়। পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরাতেও ‘বাংলা ভাষা দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে ২১ ফেব্রুয়ারি।
সুকান্ত বাহিনীকে ‘রুখতে’ বসিরহাট জেলা পুলিশের অফিস চত্বরে ১৪৪ ধারা
কিন্তু কেন ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে জানেন কী? কারণ হিসেবে রইলো কিছু অজানা তথ্য। প্রায় ২০০০ কিলোমিটারের ব্যাবধান ও দুটি ভিন্ন ভাষা সত্তাকে নিয়ে ১৯৪৭ সালে জন্ম নিয়েছিলো নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তান। তবে, পাকিস্তানের জন্মের সময় থেকেই মাতৃভাষাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ও পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে আন্দোলন শুরু হয়। এই ভাষা আন্দোলনকে বাংলাদেশ সৃষ্টির প্রথম পদক্ষেপ বলে মনে করা হয়। স্বাধীনতার পর উর্দু ভাষাকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে মান্যতা দেওয়ার জন্য জোর করা হলে এর প্রতিবাদ শুরু হয় পূর্ব পাকিস্তানে। এরপর পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা হিসেবে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে ঘোষণার দাবি ওঠে। এই বিষয়কে কেন্দ্র করে ১৯৫২ সালে শুরু হয় আন্দোলন।
১৯৫২ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্গত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও সমাজকর্মীরা পাকিস্তান সরকারের ভাষা নীতির বিরোধিতা শুরু করেন। বাংলা ভাষাকে ওই দেশের অন্যতম রাষ্ট্রীয় ভাষার স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে তাঁরা পথে নামেন। তাঁদের এই আন্দোলন ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত রূপ নেয়। পুলিশের গুলিও তাঁদের সেইদিনের ওই আন্দোলন থামাতে পারেনি। শেষমেশ পাকিস্তান সরকার তাঁদের দাবি মানতে বাধ্য হয়। এরপর ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় মুসলিম লীগের প্রধানমন্ত্রী নুরুল আমীন ১৪৪ ধারা জারি করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাজপথে বেরিয়ে আসলে তাঁদের উপর পুলিশের অকথ্য অত্যাচার চলতে থাকে। ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর বেপরোয়া কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয় ও তাঁদেরকে লাঠিপেটা করা হয়। শেষে বর্তমানের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের স্থান থেকে মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের দিকে গুলি ছোড়ে। ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের সময় পুলিশের ছোড়া সেই গুলিতে নিহত হন রফিক, সালাম, বরকত ও আব্দুল জব্বার নামের ৪ যুবক। তাই ১৯৫৩ সাল থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা শহিদদের স্মরণে ‘শহিদ দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
ওই বর্বর হত্যাকাণ্ডের খবর দাবানলের মতো চারিদিকে ছড়িয়ে পরতেই বিক্ষোভে ফেটে পরে পূর্ব পাকিস্তান সহ সমগ্র ঢাকা নগরী। তার পরের দিন অর্থাৎ ২২ শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বত্র কালো পতাকা উত্তোলন করে বিশাল শোকযাত্রা বের করা হয়। কালো পতাকা, প্রভাতফেরি, খালি পায়ে শোভাযাত্রা, শহিদদের কবর ও নিশ্চিহ্ন শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া ১৯৫৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকেই শুরু হয়। ১৯৫৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকেই শুরু হয় প্রভাতফেরি, কালো পতাকা উত্তোলন, খালি পায়ে শোভাযাত্রা সহ শহিদদের কবর ও শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া। বাঙালির স্থান যেখানে, সেখানেই ২১ শে ফেব্রুয়ারি দিনটিকে বাঙালির আত্মত্যাগ ও জাগরণের গৌরবময় দিন হিসেবে পালন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ভাষাশহিদদের রক্তস্মৃতি বিজড়িত স্থানে পরে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার নির্মাণ করা হয়।
‘মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধ সম’ এই সত্যতাকে মান্যতা দিয়েই সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও বহু ভাষাবিশিষ্ট বিশ্বের সকল ভাষাকে সম্মান দিতে ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়। প্যারিসে ইউনেস্কোর ৩০তম অধিবেশনে ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাব পাস হয়। সেই সময় থেকেই পৃথিবীর সব ভাষার মানুষের কাছে একটি উল্লেখযোগ্য দিন হিসেবে ২১ শে ফেব্রুয়ারি স্থান পায়। ঠিক তার পরের বছর অর্থাৎ ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে পৃথিবীর ১৮৮টি দেশে এই দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। ইভিএম নিউজ