ratha yatra at home

ব্যুরো নিউজ ২৭ জুন: আজ পবিত্র রথযাত্রা, গোটা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যা পালিত হচ্ছে অপার ভক্তি ও উদ্দীপনার সঙ্গে। শিশু থেকে বৃদ্ধ—সব বয়সের মানুষই এই উৎসবে অংশ নেন। বড় রথযাত্রার পাশাপাশি, ছোট রথ এবং বাড়িতে রথ সাজিয়ে পূজা করার এক বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। রথ সাজানো এবং দেব-দেবীদের সঠিক স্থানে স্থাপনের কিছু চিরাচরিত নিয়ম রয়েছে, যা অনেকেই জানেন না।

রথের তিন তলার বিন্যাস: দেব-দেবীর সঠিক স্থাপন

রথের মূল কাঠামো তিনটি তলা নিয়ে গঠিত, এবং প্রতিটি তলায় নির্দিষ্ট দেবতাকে স্থাপন করার নিয়ম রয়েছে:

  • সবচেয়ে ওপরের তলায়: এখানে বসেন ভগবান জগন্নাথ, যাকে কেন্দ্র করেই রথযাত্রা পালিত হয়।
  • মাঝের তলায়: এখানে বসানো হয় দেবী সুভদ্রাকে, যিনি জগন্নাথের বোন। রথের মাঝখানে তাঁর স্থান হওয়াই নিয়ম।
  • নিচের তলায়: এই তলায় স্থাপন করা হয় বলরাম দেবকে, যিনি জগন্নাথের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা।

যদি দু’তলা রথ হয়, সেক্ষেত্রে ওপরের তলায় জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে একসঙ্গে স্থাপন করতে হবে।

দেশ জুড়ে রথযাত্রার উৎসবে , জনগণকে শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর , রাষ্ট্রপতির এবং রাজনেতাদের !


রথ সাজানো ও প্রসাদের নিয়মাবলী

রথ সাজানোও রথযাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিছু বিশেষ নিয়ম মেনে রথ সাজালে তা আরও সুন্দর ও পবিত্র হয়ে ওঠে:

  • ফুল ব্যবহার: রথ সাজানোর সময় সাধারণত লাল, হলুদ ও সাদা রঙের ফুল বেশি ব্যবহার করা হয়। গেরুয়া ও হলুদ গাঁদার মালা দিয়ে সাজালে সুন্দর দেখায়। অপরাজিতা ফুলের মালাও ব্যবহার করা যেতে পারে। ছোট রথ অনেকেই বাগানের রঙ্গন ফুল, পাতাবাহারি গাছের ডাল দিয়ে সাজান, যা দেখতে সুন্দর লাগে। তবে মনে রাখতে হবে, এই ফুলগুলো যেন শুদ্ধ বসনে এবং খালি পায়ে তোলা হয়।
  • প্রসাদ: রথযাত্রায় আপনার সাধ্য মতো প্রসাদই রাখতে পারেন। চিরাচরিত প্রসাদের মধ্যে রয়েছে খিচুড়ি, পায়েস, খেজুর-নারকেলের মোদক, দই এবং বিভিন্ন ফল (বিশেষ করে কলা ও আপেল)। অনেকে সাত পদও নিবেদন করেন।
  • তুলসী পাতা: প্রসাদে তুলসী পাতা দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি পাত্রের উপরে তুলসী পাতা নিবেদন করা আবশ্যক।


রথযাত্রা ২০২৫: তারিখ, শুভ মুহূর্ত ও প্রধান আচার-অনুষ্ঠান

এই বছর রথযাত্রা পালিত হচ্ছে শুক্রবার, ২৭শে জুন, ২০২৫। প্রতি বছর আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে এই উৎসব উদযাপিত হয়।

  • দ্বিতীয়া তিথি শুরু: ২৬শে জুন, দুপুর ১:২৪ থেকে
  • দ্বিতীয়া তিথি শেষ: ২৭শে জুন, সকাল ১১:১৯ মিনিটে

পুরীর শ্রী জগন্নাথ মন্দির থেকে শুরু হওয়া এই যাত্রা ভগবান জগন্নাথ, তাঁর বড় ভাই বলভদ্র এবং বোন সুভদ্রাকে গুন্ডিচা মন্দিরে নিয়ে যায়। এটি চেরোয়াত উৎসব বা শ্রী গুন্ডিচা যাত্রা নামেও পরিচিত।

২০২৫ সালের পুরী রথযাত্রার প্রধান আচার-অনুষ্ঠানগুলি হলো:

  • রথযাত্রা: ২৭শে জুন, শুক্রবার
  • হেরা পঞ্চমী: ১লা জুলাই
  • বাহুড়া যাত্রা: ৪ঠা জুলাই
  • সুনাবেশা: ৫ই জুলাই
  • নীলাদ্রি বিজয়: ৫ই জুলাই
  • উল্টো রথযাত্রা (পুনর্যাত্রা): ৫ই জুলাই (২০ আষাঢ়), শনিবার

এই পুরো অনুষ্ঠান মোট ৯ দিন ধরে চলে এবং নীলাদ্রি বিজয়ার মাধ্যমে শেষ হয়।

শ্রীক্ষেত্র পুরীর রথযাত্রা: ভক্তি, আধ্যাত্মিকতা ও মানবতার এক মহাযাত্রা

রথযাত্রার তাৎপর্য ও রথের রশির মাহাত্ম্য 

স্কন্দ পুরাণ অনুসারে, বিশ্বাস করা হয় যে জগতের ত্রাণকর্তা ভগবান জগন্নাথ প্রতি বছর তাঁর রথযাত্রার মাধ্যমে ভক্তদের দর্শন দিতে এবং গুন্ডিচা মন্দিরে বিশ্রাম নিতে বেরিয়ে আসেন। এই যাত্রা শুরু হয় চার ধামের মধ্যে একটি পুরীতে। এই যাত্রার একটি তাৎপর্য হলো, সব ধর্ম ও বিশ্বাসের মানুষ দেবতার দর্শন করতে পারেন এবং শোভাযাত্রাতেও অংশগ্রহণ করতে পারেন।
অনেক ভক্তের কাছে রথের রশি স্পর্শ করা জীবনের পরম প্রাপ্তি। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, শ্রীজগন্নাথদেবের রথের রশি স্পর্শ করলে পুনর্জন্মের বিড়ম্বনা থেকে অব্যাহতি পাওয়া যায়, অর্থাৎ জীবনের জাগতিক কষ্ট এবং পুনর্জন্ম আর সহ্য করতে হয় না। ইন্দ্রনীলময় পুরাণ বলছে, রথের রশি স্পর্শ করা মানেই জন্মমৃত্যুর বন্ধন ছিন্ন হওয়া। শ্রীজগন্নাথ নিজে এই রথে বামন অবতারে বিরাজ করেন। সেই রথ টানার সৌভাগ্য যাঁদের হয়, তাঁদের জীবন পুণ্যসিক্ত হয়।
সূতসংহিতা বলে— ‘রথে তু বামনাং দৃষ্টা, পুনর্জন্ম ন বিদ্যতে’। অর্থাৎ যিনি বামন অবতারের রথ দর্শন করেন, তাঁর আর পুনর্জন্ম হয় না।
শুধুই রশি টানা নয়, অনেকেই রথের রশির সুতো বাড়িতে নিয়ে যান। সেই সুতো মাদুলি করে গলায় বা হাতে পরেন, সন্তানদেরও পরিয়ে দেন। এটি নাকি সমস্ত অশুভ শক্তি থেকে রক্ষা করে। কারও দুঃস্বপ্ন হলে, তাঁর বালিশের নিচে রথের রশির সুতো রাখারও রেওয়াজ আছে।
কপিল সংহিতায় এই রশির মাহাত্ম্য নিয়ে বলা হয়েছে— ‘গুণ্ডিচাখ্যং মহাযাত্রা যে পশ্যন্তি মুদনিতাঃ/ সর্বপাপ বিনির্মুক্তা তে যান্তি ভুবন মম।’ অর্থাৎ, গুণ্ডিচা যাত্রার দিনে যিনি রথ দর্শন করেন, তিনি সব পাপ থেকে মুক্ত হয়ে কৃষ্ণলোকে চলে যান।
শ্রীচৈতন্যদেবের অনুগামী সনাতন গোস্বামী একবার চলন্ত রথের চাকার তলায় প্রাণ দিতে চেয়েছিলেন এই বিশ্বাসে যে এতে কৃষ্ণপ্রাপ্তি হবে। কিন্তু মহাপ্রভু নিজেই তাঁকে বুঝিয়েছিলেন যে, দেহত্যাগ নয়, ভক্তি ও ভজনেই কৃষ্ণকে পাওয়া যায়। রথের রশি ছুঁয়ে যে অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল লাভ হয়, সেকথাও স্কন্দপুরাণ ও বামদেব সংহিতাতে উল্লেখ আছে।

গুরুত্বপূর্ণ শুভ মুহূর্ত

রথযাত্রা: ১২ আষাঢ় (২৭শে জুন) শুক্রবার
উল্টো রথযাত্রা: ২০ আষাঢ় (৫ই জুলাই) শনিবার

মহেন্দ্রযোগ:

  • সকাল ৫টা ৫১ মিনিট থেকে ৬টা ৪৪ মিনিটের মধ্যে
  • সকাল ৯টা ২৫ মিনিট থেকে সকাল ১০টা ১৮ মিনিটের মধ্যে

এই রথযাত্রা বাংলা তথা দেশের আবেগ, সংস্কৃতি ও বিশ্বাসের প্রতীক। তাই রথ সাজানোর সঠিক রীতি জানা এবং রশির মাহাত্ম্য অনুধাবন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর