কাশ্মীর রাজনাথ সিংয়ের

ব্যুরো নিউজ ১১ জুন : ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং মঙ্গলবার দেরাদুনে এক অনুষ্ঠানে দৃঢ়তার সাথে বলেছেন যে, কাশ্মীরকে অচিরেই বিশ্বের সামনে একটি অভিন্ন সত্তা হিসেবে দেখা যাবে। একইসঙ্গে তিনি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদের আঁতুড়ঘর হিসেবে অভিহিত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকারের সন্ত্রাস-বিরোধী পদক্ষেপ এবং দেশের প্রতিরক্ষা সক্ষমতার উন্নতি নিয়েও তিনি বিস্তারিত আলোচনা করেন।

  অভিন্ন কাশ্মীর এবং উন্নয়নের বার্তা
 প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং জম্মু ও কাশ্মীর-এর চলমান রেলওয়ে প্রকল্প এবং অন্যান্য অবকাঠামোগত উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি সেখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ রেল প্রকল্প উদ্বোধন করেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে, অদূর ভবিষ্যতে সমগ্র কাশ্মীরকে একীভূত অবস্থায় দেখা যাবে। সন্ত্রাসবাদী ও তাদের পাকিস্তানি মদতদাতাদের শত চেষ্টা সত্ত্বেও কাশ্মীরে ধারাবাহিক উন্নয়ন বন্ধ করা যায়নি বলে তিনি উল্লেখ করেন। তাঁর মতে, এই উন্নয়ন প্রকল্পগুলি ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের তৈরি করা বিভেদ দূর করতে সেতু হিসেবে কাজ করছে।

বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত: ছাড়াল জাপানকে

 ‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং তথ্য যুদ্ধ
রাজনাথ সিং জানান যে, ‘অপারেশন সিঁদুর’ শেষ হয়নি, বরং সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, সামরিক অভিযান থামলেও তথ্য যুদ্ধ চলছে। এই প্রসঙ্গে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ও মিথ্যা ছড়ানোর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি সাংবাদিকদের প্রতি তথ্য দ্রুত শেয়ার করার চেয়ে নির্ভুল এবং দায়িত্বশীল হওয়ার উপর জোর দেন।

 সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা এবং পাকিস্তানের সমালোচনা
রাজনাথ সিং সন্ত্রাসবাদকে ‘একটি মহামারী’ হিসেবে অভিহিত করেন এবং এর স্থায়ী ও সমন্বিত বৈশ্বিক সমাধানের উপর জোর দেন। তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, সন্ত্রাসবাদীরা কোনোভাবেই স্বাধীনতা সংগ্রামী নয় এবং কোনো ধর্মীয়, আদর্শগত বা রাজনৈতিক যুক্তি দ্বারা সন্ত্রাসবাদকে বৈধতা দেওয়া যায় না। তিনি ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীনতার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, যেখানে ভারত গণতন্ত্রের জননী হিসেবে পরিচিত, সেখানে পাকিস্তান ‘বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের জনক’ হয়ে উঠেছে।

তিনি পাকিস্তানকে তাদের মাটিতে সন্ত্রাসীদের আশ্রয়, প্রশিক্ষণ এবং সমর্থন দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেন। রাজনাথ সিং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে পাকিস্তানে বিদেশি সাহায্য বন্ধ করার আহ্বান জানান, কারণ তার মতে, এই সাহায্যের একটি বড় অংশ সন্ত্রাসবাদে ব্যবহৃত হয়। তিনি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কাউন্টার-টেররিজম কমিটির সহ-সভাপতি হিসেবে পাকিস্তানকে নিয়োগের সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করেন, কারণ পাকিস্তান ৯/১১ হামলার মূল হোতাকে আশ্রয় দিয়েছে এবং হাফিজ সাঈদ ও মাসুদ আজহারের মতো সন্ত্রাসীরা সেখানে অবাধে চলাফেরা করে।

 ভারতের পরিবর্তিত জাতীয় নিরাপত্তা চিত্র
 প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হাইলাইট করেন যে, গত ১১ বছরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা ভঙ্গিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। তিনি ‘অপারেশন সিঁদুর’-কে ভারতীয় ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সন্ত্রাস-বিরোধী অভিযান হিসেবে উল্লেখ করেন, যা জম্মু ও কাশ্মীরের পাহালগামে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়ায় চালু হয়েছিল। এই অভিযানে ৯টি সন্ত্রাসী শিবির সফলভাবে ধ্বংস করা হয়, যার মধ্যে পাকিস্তানের ৪টি এবং পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের (PoJK) ৫টি শিবির অন্তর্ভুক্ত ছিল। তিনি আরও যোগ করেন যে, ৩৭০ ধারা বাতিল কাশ্মীরে শান্তি ও অগ্রগতির একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে।

 প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতা ও অগ্রগতি
রাজনাথ সিং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারতের ক্রমবর্ধমান আত্মনির্ভরতার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ ব্যবহৃত সমস্ত প্ল্যাটফর্ম এবং অস্ত্র ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ ছিল। তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষে প্রতিরক্ষা বাজেট ছিল ২.৫৩ লক্ষ কোটি টাকা, যা ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ৬.২২ লক্ষ কোটি টাকায় বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার অভ্যন্তরীণ সংস্থাগুলির জন্য ৭৫% মূলধন সংগ্রহ বাজেট সংরক্ষণ করেছে এবং ৫৫০০টিরও বেশি আইটেম সমন্বিত ১০টি পজিটিভ ইন্ডিজেনাইজেশন লিস্ট জারি করেছে।

তিনি জানান, বার্ষিক প্রতিরক্ষা উৎপাদন ২০১৪ সালের ৪০,০০০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে এখন ১.৩ লক্ষ কোটি টাকার বেশি হয়েছে। প্রতিরক্ষা রপ্তানি ২০১৪ সালের ৬৮৬ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ২৩,৬২২ কোটি টাকায় পৌঁছেছে এবং ভারতীয় তৈরি প্রতিরক্ষা পণ্য এখন প্রায় ১০০টি দেশে পৌঁছেছে। তিনি এই বছর ১.৭৫ লক্ষ কোটি টাকা এবং ২০২৯ সালের মধ্যে ৩ লক্ষ কোটি টাকা প্রতিরক্ষা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন। একই সময়ে, প্রতিরক্ষা রপ্তানি এই বছর ৩০,০০০ কোটি টাকা এবং ২০২৯ সালের মধ্যে ৫০,০০০ কোটি টাকা করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

‘দক্ষিণায় পাক অধিকৃত কাশ্মির চাই’: সেনাপ্রধানকে জগদ্গুরু রামভদ্রাচার্য্যের স্পষ্ট বার্তা

উপসংহার
 রাজনাথ সিং-এর বক্তব্য ভারতের প্রতিরক্ষা নীতিতে এক নতুন দিকের ইঙ্গিত দেয়। কাশ্মীরকে একত্রিত করার স্বপ্ন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান, এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতার ওপর জোর দেওয়া — এগুলি সবই ভারতের ভবিষ্যতের প্রতিরক্ষা এবং জাতীয় নিরাপত্তার রোডম্যাপ তুলে ধরে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর