ব্যুরো নিউজ ১১ নভেম্বর ২০২৫ : পশ্চিমবঙ্গ সহ বিভিন্ন রাজ্যে নির্বাচন কমিশন (ECI)-এর নির্দেশে চলিতেছে স্পেশাল ইন্টেন্সিভ রিভিশন (SIR) বা বিশেষ নিবিড় ভোটার তালিকা সংশোধনী প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার সাংবিধানিক বৈধতা লইয়া দায়ের করা একাধিক আবেদনের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্ট আজ নির্বাচন কমিশনকে নোটিস জারি করেছে।
বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী-কে লইয়া গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ ECI-কে এই বিষয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে তাঁদের জবাব দাখিল করতে বলেছে। পাশাপাশি, আদালত Petitioners-দের এই SIR প্রক্রিয়া লইয়া তাঁদের সুনির্দিষ্ট আশঙ্কাগুলির বিস্তারিত বিবরণ জানাইয়া হলফনামা জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে।
‘কেন এত ভয়?’ – আদালতের প্রশ্ন
আদালত এই সংশোধন প্রক্রিয়া লইয়া আবেদনকারীদের উদ্বেগের কারণ জানতে চায় এবং মন্তব্য করে, “আপনারা এত ভয় পাচ্ছেন কেন?”।
তবে, আবেদনকারীদের পক্ষ হইতে আইনজীবীরাও নির্বাচন কমিশনের কাছে জানতে চেয়েছেন যে, কেন এত কম সময়ের মধ্যে এই বিশাল কাজ শেষ করতে নির্বাচন কমিশন এত তাড়াহুড়ো করছে।
আদালত এই বিষয়ে ECI-কে যুক্তি ও তথ্য-প্রমাণ সহকারে তাঁদের অবস্থান জানাইবার জন্য দুই সপ্তাহ সময় দিয়েছে। আগামী ২৬ নভেম্বর, ২০২৫ তারিখে এই মামলার পরবর্তী শুনানি ধার্য করা হয়েছে।
Bihar : বিহার নির্বাচন এক্সিট পোল: বিহারে এনডিএ-র বড় জয়ের আভাস, মহাজোটের প্রত্যাখ্যানে বিতর্ক।
হাইকোর্টের শুনানি মুলতুবি রাখার নির্দেশ
সুপ্রিম কোর্ট বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু সহ যেসব রাজ্যে SIR প্রক্রিয়া চলছে, সেই সমস্ত রাজ্যের হাইকোর্টগুলিকে এই সংশোধন প্রক্রিয়া সম্পর্কিত যে কোনো আবেদন বা মামলার শুনানি আপাতত মুলতুবি (keep in abeyance) রাখার নির্দেশ দিয়েছে। আদালত তাঁদের আদেশে উল্লেখ করেছে, যেহেতু এই আদালত SIR-এর বৈধতা লইয়া মামলাগুলির বিচার করছে, সেই কারণে হাইকোর্টগুলি যেন এই বিষয়ে অগ্রসর না হয়।
সাংবিধানিক বৈধতা লইয়া প্রশ্ন
বিভিন্ন রাজ্যের মামলাকারীদের, বিশেষত তামিলনাড়ু এবং পশ্চিমবঙ্গের আবেদনকারীরা, নির্বাচন কমিশনের গত ২৭ অক্টোবরের নোটিফিকেশনের সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন। তাঁদের দাবি, এই দ্রুত ও নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়া সংবিধানের ১৪, ১৯, ২১, ৩২৫ এবং ৩২৬ নম্বর অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করছে।
মামলাকারীদের যুক্তি, এই SIR প্রক্রিয়া উৎসবের মরশুম, প্রবল বর্ষণ, চাষের সময় এবং বচ্ছর শেষের ছুটি (যেমন বড়দিন ও নুতন বছরের ছুটি) উপেক্ষা করে চলছে, যেই কারণে সাধারণ মানুষজন ভোটকর্মসূচিতে ঠিকমতো অংশগ্রহণ করতে পারছে না। তামিলনাড়ুর পক্ষ হইতে বরিষ্ঠ আইনজীবী কপিল সিব্বাল জানান, সেখানে নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে প্রচণ্ড বৃষ্টি হয় এবং BLO-রা বন্যা ত্রাণের কাজেও ব্যস্ত থাকবে।
কিন্তু বিচারপতি সূর্য কান্ত মন্তব্য করেন যে, এই ধরনের পরিস্থিতিতে ভারতে SIR হওয়া এই প্রথম নয়। তিনি ECI-কে কেবল মনে করাইয়া দেন যে, তাঁরা যেন “প্রত্যেক রাজ্যের স্থানীয় পরিস্থিতি”-র কথা মনে রেখে কাজ করে।
বাংলার পরিকাঠামো লইয়া বিতর্ক
পশ্চিমবঙ্গের মামলাকারীদের অভিযোগ করছেন যে, রাজ্যে ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগের অবস্থা ভালো নয়, যেই কারণে এই ডিজিটাল সংশোধন প্রক্রিয়া কার্যকর করা কঠিন হচ্ছে। এই অভিযোগের মাধ্যমে রাজ্যের পরিকাঠামো এবং একবিংশ শতকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রশাসন চালাবার ক্ষমতা লইয়া প্রশ্ন উঠছে।
ADR-এর আর্জি এবং আদালতের মন্তব্য
অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস (ADR)-এর পক্ষ হইতেও একটি আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে, যেখানে ভোটার তালিকা তৈরির সময় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবার এবং ECI-কে তাঁদের নিজস্ব নিয়মগুলি মানিয়া চলবার জন্য নির্দেশ দিবার দাবি জানানো হয়েছে। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি কান্ত মন্তব্য করেন যে, “আপনারা তো তাঁদের (EC-র) নিজস্ব নির্দেশাবলী মানবার দাবি করছেন।”
আদালত ECI-কে প্রথমে তাঁদের SIR প্রক্রিয়ার বৈধতা প্রমাণ করতে বলবে এবং তার পর আবেদনকারীদের বক্তব্য শোনা হবে। বিচারপতি কান্ত আশ্বস্ত করেছেন, “যদি আমরা সন্তুষ্ট না হই, তবে এই প্রক্রিয়া বাতিল করে দেব।” তবে সুপ্রিম কোর্টের এও পর্যবেক্ষণ যে নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন সাংবিধানিক সংস্থা এবং আদালতের রায়ের আওতা নিয়েও সাংবিধানিক সঙ্কট দেখা যেতে পারে । কারণ SIR পরবর্তী আবহেই বিহারে ইতিমধ্যে একটি সুস্থ সফল নির্বাচন ঘটে গেছে যেখানে ঐতিহাসিক মাত্রায় জনমত গ্রহণ করা হয়েছে, তাই নির্বাচন কমিশনের কাছে SIR প্রক্রিয়া এবং পদ্ধতি নিয়ে কোনও নেতিবাচক দিক উপস্থিত নয় যা মহামান্য আদালতেও তারা পুনরায় প্রমাণ করবে ।



















