ratha yatra papadam jaelbi

ব্যুরো নিউজ ২৭ জুন: রথযাত্রা মানেই উৎসবের এক ভিন্ন মেজাজ। জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে রথে চাপিয়ে এই দিনটি উদযাপন করা হয়। শুধু পুরী নয়, ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে, বিশেষ করে বাংলার ঘরে ঘরে ও পথে-ঘাটে রথযাত্রা ঘিরে এক বিশেষ উন্মাদনা চোখে পড়ার মতো। পাড়ায় পাড়ায় ছোট রথ টানার ছবি যেমন পরিচিত, তেমনই অনেক এলাকায় রথ উপলক্ষে বসে বর্ণাঢ্য মেলা। এই মেলাগুলির অন্যতম আকর্ষণ হলো জিলিপি আর পাঁপড়, যা সকাল থেকেই মিষ্টির দোকানে ও মেলার স্টলগুলিতে রমরম করে বিক্রি হয়। কিন্তু এই দুই খাদ্যবস্তুর সঙ্গে রথযাত্রার সংযোগ কোথায়, তা জানলে অনেকে চমকে উঠবেন।

জিলিপি ও পাঁপড়ের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

জিলিপি: শোনা যায়, জিলিপির আদি রূপ ছিল মিশরের ইহুদিদের তৈরি ‘জালাবিয়া’ নামে এক মিষ্টি। পরবর্তীতে ১৪০০-১৫০০ খ্রিস্টাব্দে এটি ‘কুণ্ডলিকা’ বা ‘জলবল্লিকা’ নামে ভারতে পরিচিতি লাভ করে। ধারণা করা হয়, জিলিপি পশ্চিম এশিয়া থেকে ভারতে এসেছে, এবং অনেকের মতে, মুঘল সম্রাটদের হাত ধরেই ভারতে জিলিপি খাওয়ার চল শুরু হয়।

পাঁপড়: পাঁপড় মূলত উত্তর ভারতের খাবার হিসেবে পরিচিত, যা পঞ্জাব থেকে এসেছে বলে মনে করা হয়। রামায়ণেও এর উল্লেখ পাওয়া যায়, যা এর প্রাচীনত্বের ইঙ্গিত দেয়।

বঙ্গের প্রাচীনতম রথ যাত্রা ; মহেশের রথ ! এক বঙ্গীয় ইতিহাস

রথের দিনে জিলিপি-পাঁপড় খাওয়ার রহস্য

রথের দিনে জিলিপি ও পাঁপড় খাওয়ার পেছনে এক প্রচলিত কিংবদন্তি রয়েছে। কথিত আছে, রথযাত্রার আগে স্নানযাত্রায় ১০৮ ঘড়া জলে স্নান করার পর প্রভু জগন্নাথদেবের জ্বর আসে। এই সময় তিনি টানা সাত দিন নিভৃতবাসে (অনসর ঘর) থাকেন এবং পাচন খাইয়ে তাঁকে সুস্থ করা হয়। এরপর বলরাম ও সুভদ্রার সঙ্গে রথে চড়ে গুন্ডিচা মন্দিরে মাসির বাড়ি যান জগন্নাথদেব। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, এই সময় জ্বরের পর মুখের স্বাদ বদলের জন্য প্রভুর নোনতা কিছু খাওয়ার ইচ্ছা হয়, আর তখনই নাকি তিনি পাঁপড় ভাজা খান। মিষ্টি হিসেবে তিনি জিলিপি গ্রহণ করেন। সেই থেকেই রথের দিন জিলিপি ও পাঁপড় খাওয়ার চল শুরু হয়েছে। যদিও জগন্নাথদেবের ৫৬ ভোগের তালিকায় জিলিপি ও পাঁপড়ের ঠাঁই হয়নি, তবে গ্রামবাংলায় রথের মেলায় জিলিপি ও পাঁপড় সেই আদিকাল থেকেই ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। আজও রথ মানেই জিলিপি ও পাঁপড় খাওয়ার এক বিশেষ দিন। এবং সেই মর্মে দেওয়া হল পাঁপড় ভাজার একটি স্বাস্থ্য সম্মত পদ্ধতি –

তেলবিহীন সুস্বাদু পাঁপড় ভাজার সহজ উপায় 

রথের দিনে যদি তেল ছাড়া সুস্বাদু পাড় ভাজতে চান, তবে এই পদ্ধতিটি অনুসরণ করতে পারেন:

উপকরণ:
পাঁপড় (আপনার পছন্দ মতো)
৫০০ গ্রাম লবণ (ভাজার জন্য, যা বারবার ব্যবহার করা যায়)

গৃহে রথযাত্রা উদযাপনের বিধি ও রথ টানার মাহাত্ম্য

প্রস্তুত প্রণালী
 ১. প্রথমে একটি কড়াই বা প্যানে প্রায় ৫০০ গ্রাম লবণ নিন।
২. মধ্যম আঁচে (medium flame) লবণ গরম করুন। লবণটি ঝরঝরে না হওয়া পর্যন্ত ৫-৭ মিনিট নাড়াচাড়া করুন। লবণ গরম হয়ে গেলে পাঁপড় ভাজার জন্য প্রস্তুত।
৩. এবার এই ঝরঝরে গরম লবণের ভেতরে একটি করে পাঁপড় দিন।
৪. পাঁপড়টি লবণের মধ্যে দিয়ে ১-২ মিনিটের জন্য ঢাকা দিন
৫. তবে, পাঁপড়টি সম্পূর্ণ ভাজার জন্য প্রতি ১৬ সেকেন্ড অন্তর এপিঠ-ওপিঠ উল্টে দিন। এতে পাঁপড় সবদিক থেকে মুচমুচে ভাজা হবে।
৬. সম্পূর্ণ ভাজা হয়ে গেলে পাঁপড়টি লবণ থেকে তুলে নিন এবং বাড়তি লবণ ঝেড়ে ফেলুন।

এইভাবে ভাজা পাঁপড় গরম গরম পরিবেশন করুন অথবা এয়ার টাইট পাত্রে রেখে দিন যখন খুশি উপভোগ করার জন্য। এই ভাজা লবণ বারবার ব্যবহার করা যায়। এছাড়াও, তেল ছাড়া লবণ দিয়ে পাঁপড় ভাজলে রক্তচাপ বৃদ্ধির ঝুঁকি কমে বলে মনে করা হয়, কারণ এতে তেলের ব্যবহার হয় না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর