ব্যুরো নিউজ ১৬ অক্টোবর ২০২৫ : ২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার (Nobel Peace Prize 2025) ঘোষিত হলো। এবার এই মর্যাদাপূর্ণ সম্মান পেলেন ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদো। নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি কর্তৃক তাঁকে এই পুরস্কার দেওয়া হলো “ভেনেজুয়েলার জনগণের জন্য গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রচারে তাঁর অক্লান্ত কাজ এবং একনায়কত্ব থেকে গণতন্ত্রে ন্যায়সঙ্গত ও শান্তিপূর্ণ উত্তরণের জন্য তাঁর সংগ্রামের” স্বীকৃতি হিসেবে।
ট্রাম্পের স্বপ্নভঙ্গ
মারিয়া কোরিনা মাচাদো পুরস্কার পাওয়ায় ২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের দৌড় থেকে ছিটকে গেলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
নোবেল কমিটির ঘোষণা ও প্রশংসা
নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির পক্ষ থেকে জর্গেন ওয়াটনার ফ্রাইডনেস এই ঘোষণা করেন। তিনি মাচাদোর প্রশংসা করে বলেন, তিনি অন্ধকারের মধ্যেও “গণতন্ত্রের শিখা” জ্বালিয়ে রেখেছেন এবং তিনি “শান্তির এক সাহসী ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ চ্যাম্পিয়ন”। কমিটি আরও জানায়, মাচাদো ভেনেজুয়েলার বিরোধী দলের মধ্যে একটি “ঐক্যবদ্ধকারী ব্যক্তিত্ব” এবং তিনি ২২ বছর আগে গণতান্ত্রিক উন্নয়নের জন্য নিবেদিত সংস্থা Súmate-এর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন।
নোবেলের আড়ালে ভেনেজুয়েলার ক্ষমতা পরিবর্তনের ইঙ্গিত?
মাচাদোর নোবেল প্রাপ্তির এই ঘটনাটি এমন এক সময়ে ঘটল, যখন ভেনেজুয়েলার ক্ষমতা পরিবর্তনের রাজনীতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে জল্পনা তীব্র হচ্ছে। এই নোবেল পুরস্কারকে ভবিষ্যতের ভেনেজুয়েলার শাসনভার বহন করার জন্য একজন পশ্চিমা সমর্থিত উত্তরাধিকারী তৈরি করার একটি ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
মার্কিন নৌবাহিনীর কামান দাগা ও অর্থনৈতিক প্রভাব
সাম্প্রতিককালে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবহর ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি বিভিন্ন চোরাচালানকারী গোষ্ঠীর উপর আক্রমণ (কামান দাগা) চালাচ্ছে। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে এই অভিযান চোরাচালান বন্ধ করার জন্য, তবে এর প্রভাব ভেনেজুয়েলার অপ্রকাশিত অর্থনীতিতে তীব্রভাবে অনুভূত হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রপতি নিকোলাস মাদুরো এই নিয়ে গভীর সংশয়ে রয়েছেন এবং তাঁর সরকারের পতন ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভেনেজুয়েলার এই বর্তমান সংকটপূর্ণ পরিস্থিতি এবং সরকার পরিবর্তনের মার্কিন চোখ–এর নিরিখে, এই নোবেল পুরস্কারের ঘোষণা এক তাৎপর্যপূর্ণ রাজনৈতিক বার্তা বহন করছে।
পুরস্কার উৎসর্গ করলেন ট্রাম্পকে
নোবেল শান্তি পুরস্কার জেতার পর মারিয়া কোরিনা মাচাদো তাঁর প্রতিক্রিয়ায় এই পুরস্কারটি ভেনেজুয়েলার “দুর্ভোগ” পোহানো মানুষদের এবং ভেনেজুয়েলার স্বাধীনতার সংগ্রামে সমর্থন করার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উৎসর্গ করেছেন।
‘এক্স’-এ (সাবেক টুইটার) করা একটি পোস্টে মাচাদো বলেন, “…আমরা বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে এবং আজ, অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র অর্জনের জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ, লাতিন আমেরিকার জনগণ এবং বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলিকে আমাদের প্রধান মিত্র হিসাবে গণনা করি। আমি এই পুরস্কারটি ভেনেজুয়েলার দুর্ভোগ পোহানো মানুষদের এবং আমাদের উদ্দেশ্যকে তাঁর দৃঢ় সমর্থনের জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে উৎসর্গ করছি!”
হোয়াইট হাউসের সমালোচনা
হোয়াইট হাউস এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেছে, নোবেল কমিটি “শান্তির চেয়ে রাজনীতিকে স্থান দেয়।” হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র স্টিভেন চেউং বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শান্তি চুক্তি করা, যুদ্ধের অবসান ঘটানো, এবং জীবন বাঁচানো অব্যাহত রাখবেন।”