ব্যুরো নিউজ ,৩মে: ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ফের পুরোপুরি থমকে গেল। পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপরে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর ভারত কড়া পদক্ষেপের পথে হেঁটেছে। সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত, পাক নাগরিকদের ভিসা বাতিলের পর এবার সরাসরি পাকিস্তানের সঙ্গে সমস্ত রকম বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করল নয়াদিল্লি। পাল্টা জবাবে ইসলামাবাদও ঘোষণা করেছে, ভারতের সঙ্গে সব ধরনের আমদানি-রফতানি বন্ধ। দুই দেশের মধ্যে এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে বাণিজ্যের এই ধস দুই পক্ষের জন্যই বড় ধাক্কা হয়ে উঠেছে।
ভারত-পাকিস্তান বাণিজ্যের প্রথম বড় আঘাত এসেছিল ২০১৯ সালে, পুলওয়ামার ঘটনার পর। তখনই পাকিস্তান ভারতীয় পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে দেয় এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বন্ধ ঘোষণা করে। সেই ধাক্কা সামলে কিছুটা বাণিজ্য ধীরে ধীরে শুরু হলেও আগের স্তরে পৌঁছোয়নি। এবার পহেলগাঁওয়ের ঘটনার পর পরিস্থিতি আবারও তলানিতে ঠেকেছে।
পাকিস্তান থেকে ভারত কী আমদানি করত?
পাকিস্তান থেকে ভারতে ঢুকত মূলত কাঁচামাল এবং কৃষিজ পণ্য। ফল, বাদাম, তামা, খনিজ তেল, নুন, সালফার, তুলো, চামড়া, এবং প্লাস্টিকের সামগ্রী ভারতের আমদানি তালিকায় নিয়মিত ছিল। ২০২৪ সালের পরিসংখ্যান বলছে, ওই বছরে পাকিস্তান থেকে ২.৮৯ লক্ষ টাকার প্লাস্টিক পণ্য আমদানি করেছে ভারত। তুলো এসেছে ১৫.১৬ লক্ষ টাকার, খেলনা ও ক্রীড়াসামগ্রী ১১.৩৩ লক্ষ টাকার। বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ এবং ধাতব আকরিকও ঢুকেছে ভারতীয় বাজারে। আগের বছর, ২০২৩-এ, পাকিস্তান থেকে ভারতে ৮৪.১০ লক্ষ টাকার নুন, সালফার, সিমেন্টের মতো খনিজ পণ্য আমদানি হয়েছে, পাশাপাশি খাদ্যপণ্যের আমদানি ছিল প্রায় ৩ কোটি টাকার কাছাকাছি।
ভারত থেকে পাকিস্তান কী কিনত?
উল্টো দিক থেকে পাকিস্তানের আমদানি তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ওষুধ এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম। পাশাপাশি ভারতে তৈরি জৈব এবং অজৈব রাসায়নিক, দুগ্ধজাত পণ্য, চিনি, প্লাস্টিক ও জ্বালানি তেলও ঢুকত পাকিস্তানে। ২০২৪ সালে ইসলামাবাদ ভারত থেকে ১৩৮৮ কোটি টাকার জৈব রাসায়নিক, ১০২২ কোটি টাকার ওষুধপত্র, ৪১ কোটি টাকার প্লাস্টিক ও ৩৯ কোটি টাকার ধাতু আমদানি করেছে। এর সঙ্গে ছিল ময়দা, সাবান, সুগন্ধী, সবজি, দুধ-মোমের সামগ্রী, এমনকি যন্ত্রপাতিও।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তানের ওষুধ এবং কৃষি খাত ভারতীয় আমদানি ছাড়া বড়সড় সমস্যায় পড়বে। কারণ সস্তায় ও নিরবিচারে এই পণ্য তারা এতদিন ভারত থেকেই সংগ্রহ করত। ভারতেরও কিছু খনিজ পণ্যের জন্য পাকিস্তান নির্ভরতা ছিল, তবে বিকল্প বাজার ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করেছে দিল্লি।
ভারসাম্য কোথায় দাঁড়ায়?
পাকিস্তান থেকে ভারতের আমদানি সব সময়েই কম। কিন্তু পাকিস্তান ভারতীয় পণ্যের বড় বাজার ছিল। ফলে এবার বাণিজ্য বন্ধের ফলে ধাক্কাটা ইসলামাবাদের দিকেই বেশি জোরালো বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। বিশেষ করে, পাকিস্তানকে এখন ঘুরপথে (তৃতীয় দেশের মাধ্যমে) ভারতীয় পণ্য কিনতে হবে, যা তাদের জন্য খরচ সাপেক্ষ হবে।
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রক জানিয়ে দিয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তা এবং নীতির স্বার্থে পাকিস্তানের সঙ্গে সব রকম বাণিজ্যিক আদানপ্রদান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে। কোনও ব্যতিক্রম ঘটলে তা অবশ্যই সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষ হবে।
দুই দেশের সম্পর্ক কোন দিকে?
২০১৯-এর পুলওয়ামার পর যেমন হয়েছিল, এবারও সম্পর্কের স্তর আরও নীচে নামল। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাণিজ্য বন্ধ মানে শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতি নয়, কূটনৈতিক দূরত্বও বাড়ানো। আর এই পরিস্থিতি বিশ্ব শক্তিগুলির উদ্বেগও বাড়াচ্ছে।