ব্যুরো নিউজ ২৩ জুলাই ২০২৫ : নদীয়ার নাকাশিপাড়ায় স্ত্রীর রহস্যজনক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ স্বামীকে গ্রেফতার করেছে। অভিযুক্ত স্বামী প্রথমে দুষ্কৃতীদের হামলার গল্প ফেঁদে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করলেও, জিজ্ঞাসাবাদের মুখে তার সাজানো গল্প ভেঙে পড়ে। সোমবার রাতে নাকাশিপাড়া থানার কালীবাড়ি এলাকায় এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটেছে, যা এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।
অভিযুক্তের পরিচয় ও অপরাধের ইতিহাস:
গ্রেফতারকৃত অভিযুক্তের নাম হায়দার দফাদার (৩৫)। পুলিশের রেকর্ড অনুযায়ী, হায়দারের বিরুদ্ধে এর আগেও অন্তত ছয়টি খুন ও ধর্ষণের মামলা রয়েছে। নিহত মহিলা, মহিলা দফাদার (৩৮), ছিলেন তার স্ত্রী। অভিযোগ, কয়েক বছর আগে বয়সের ব্যবধান থাকা সত্ত্বেও হায়দার তাকে জোর করে বিয়ে করেছিলেন।
Congress : ওড়িশায় ধর্ষণের অভিযোগে কংগ্রেস ছাত্রনেতা উদিত প্রধান গ্রেফতার, অস্বস্তিতে দল ।
হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে সম্পর্কের অবনতি:
তদন্তে জানা গেছে, হায়দারের সঙ্গে তার স্ত্রীর সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। বিশেষ করে, হায়দার তার প্রাক্তন স্ত্রীর সাথে পুনরায় যোগাযোগ স্থাপন করার পর এই সম্পর্ক আরও খারাপ হতে শুরু করে। বর্তমান স্ত্রীর বয়স বেশি হওয়া এবং প্রাক্তন স্ত্রীর সাথে নতুন করে ঘনিষ্ঠতার কারণে বাড়িতে উত্তেজনা বাড়ছিল বলে মনে করা হচ্ছে।
নাটক সাজিয়েও শেষরক্ষা হলো না:
পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার রাতে হায়দার তার স্ত্রীকে তাদের রুম থেকে জোর করে বের করে পাশের একটি ঘরে নিয়ে যান, যা স্থানীয়ভাবে “শালার ঘর” নামে পরিচিত। সেখানেই তিনি খুব কাছ থেকে তাকে গুলি করেন। এরপর সন্দেহ এড়াতে, হায়দার সাহায্যের জন্য চিৎকার করে বলতে থাকেন যে, একদল অজ্ঞাতপরিচয় হামলাকারী বাড়িতে ঢুকে তার স্ত্রীকে গুলি করেছে।
প্রতিবেশীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন এবং দেখেন মহিলা গুরুতর আহত অবস্থায় রক্তপাত হচ্ছে। তাকে বেথুয়াডহরি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে, হায়দারের ঘটনার বর্ণনা দ্রুতই সন্দেহের মুখে পড়ে। পুলিশ নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, হায়দার যখন কাঁদছিলেন এবং অন্যদের সতর্ক করছিলেন, তখনও তার হাতে আগ্নেয়াস্ত্র দেখা গিয়েছিল।
Conversion Mafia : উত্তর ভারতে আবার ধরা পড়ল ধর্মান্তরকরণ চক্রের জাল !
স্বীকারোক্তি ও পুলিশের বক্তব্য:
প্রমাণের মুখোমুখি হয়ে হায়দার হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ), উত্তম ঘোষ, দ্য স্টেটসম্যানকে জানান, “আমাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য ছিল যে ঘটনার সময় হায়দারের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। পুঙ্খানুপুঙ্খ জিজ্ঞাসাবাদের পর তিনি স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। দুষ্কৃতীদের হামলার তার বর্ণনা ছিল মিথ্যা।”
এই ঘটনাটি এলাকার নিরাপত্তা এবং স্থানীয় অপরাধীদের কার্যকলাপ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। পুলিশ এই মামলার আরও বিস্তারিত তদন্ত করছে।