ব্যুরো নিউজ ২৫শে আগস্ট ২০২৫ : গণেশ চতুর্থী আসন্ন। ভারতের নানা প্রান্তে ভক্তদের মধ্যে উৎসবের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। ঘরে ঘরে, মণ্ডপে মণ্ডপে শ্রী গনেশ-এর মূর্তি স্থাপন করা হবে। কিন্তু প্রতি বছরই ভক্তদের মনে একটি প্রশ্ন ঘুরেফিরে আসে: শ্রী গনেশ-এর শুঁড় কোন দিকে থাকবে? বাম, ডান নাকি সোজা? এর কি কোনো বিশেষ তাৎপর্য আছে? বিশিষ্ট বৈদিক পণ্ডিতদের মতে, শ্রী গনেশ-এর শুঁড়ের দিক কেবল একটি প্রতীকী অর্থ বহন করে, কোনো অশুভ বার্তা নয়। ভক্তিভরে পূজা করলেই তিনি সকলের প্রতি সমানভাবে আশীর্বাদ বর্ষণ করেন।
শুঁড়ের দিক কেন গুরুত্বপূর্ণ?
শ্রী গনেশ-এর শুঁড় কেবল একটি শারীরিক অঙ্গ নয়, এর গভীর আধ্যাত্মিক গুরুত্ব রয়েছে। এটি পবিত্র “ওঁ” ধ্বনির একটি অংশকে প্রতিনিধিত্ব করে। শুঁড়ের নমনীয়তা জীবনের প্রতিকূলতার মোকাবিলায় প্রজ্ঞা ও অভিযোজনশীলতার প্রতীক। আধ্যাত্মিক দিক থেকে, এটি প্রাচুর্য ও সমৃদ্ধিরও ইঙ্গিত দেয়।
সাধারণত শ্রী গনেশ-এর মূর্তিতে শুঁড় তিনটি দিকে বাঁকানো দেখা যায়: বামে, ডানে অথবা সোজাসুজি। প্রতিটি দিকের রয়েছে নিজস্ব আধ্যাত্মিক অর্থ ও প্রভাব।
Ganesh Chaturthi : শ্রী গনেশের গজমস্তক প্রাপ্তির পৌরাণিক গাথা ।
১. বাম দিকে বাঁকানো শুঁড়: ‘বামামুখী’ বা ‘মোদক হস্ত’ শ্রী গনেশ
যখন শ্রী গনেশ-এর শুঁড় তাঁর বাম দিকে বাঁকানো থাকে (পূজারীর ডান দিকে), তখন তাঁকে বামামুখী শ্রী গনেশ বলা হয়। এটি শ্রী গনেশ-এর সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সহজে তুষ্ট হওয়ার রূপ। বিশেষত দক্ষিণ ভারতের অনেক ঘরে এই রূপের পূজা প্রচলিত।
- প্রতীকী অর্থ: বাম দিককে চন্দ্র শক্তি (Chandra Shakti) এবং ইডা নাড়ি-র সঙ্গে যুক্ত করা হয়, যা শান্ত, শীতল ও সৃজনশীল শক্তির প্রতীক। এই রূপটি ঘরে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি এবং সৌভাগ্য বয়ে আনে।
- পূজার নিয়ম: এই শ্রী গনেশ-কে পূজা করা অপেক্ষাকৃত সহজ। এতে খুব কঠোর আচার-অনুষ্ঠানের প্রয়োজন হয় না। তাই দৈনন্দিন গৃহস্থালির পূজার জন্য এই রূপটি অত্যন্ত শুভ বলে বিবেচিত। সামান্য ত্রুটিও তিনি ক্ষমা করে দেন।
- আশীর্বাদ: এই রূপটি মনের ইচ্ছা পূরণ করে এবং পরিবারে সম্প্রীতি ও প্রাচুর্য নিশ্চিত করে। বিশেষ করে মোদক হাতে বা মোদকের দিকে শুঁড় বাঁকানো মূর্তি ঘরে স্থাপন করা অত্যন্ত শুভ।
২. ডান দিকে বাঁকানো শুঁড়: ‘দক্ষিণামুখী’ বা ‘যোগ গণপতি’
শ্রী গনেশ-এর শুঁড় যখন তাঁর ডান দিকে (পূজারীর বাম দিকে) বাঁকানো থাকে, তখন তাঁকে দক্ষিণামুখী শ্রী গনেশ বলা হয়। এই রূপটি অত্যন্ত শক্তিশালী ও কঠোর।
- প্রতীকী অর্থ: ডান দিককে সূর্য শক্তি (Surya Shakti) এবং পিঙ্গলা নাড়ি-র সঙ্গে যুক্ত করা হয়, যা শৃঙ্খলা, তপস্যা এবং কঠোরতার প্রতীক। এই রূপটি যোগী ও আধ্যাত্মিক সাধকদের জন্য বেশি উপযুক্ত, যারা আত্ম-উপলব্ধি এবং মোক্ষলাভের পথে অগ্রসর হতে চান।
- পূজার নিয়ম: এই শ্রী গনেশ-কে পূজা করার জন্য কঠোর নিয়ম, শুদ্ধতা এবং গভীর ভক্তি অপরিহার্য। পূজায় সামান্য ভুলভ্রান্তি হলে এর বিপরীত ফল হতে পারে। তাই এই ধরনের মূর্তি সাধারণত মন্দিরে রাখা হয়।
- আশীর্বাদ: কঠোর সাধনার বিনিময়ে এই রূপটি ভক্তদের আধ্যাত্মিক উন্নতি এবং মোক্ষলাভের দিকে পরিচালিত করে। তিনি ‘সিদ্ধি বিনায়ক’ নামেও পরিচিত, কারণ তিনি দ্রুত এবং শক্তিশালী ফল প্রদান করেন।
৩. সোজাসুজি শুঁড়: ‘সিদ্ধি বিনায়ক’
কিছু বিরল মূর্তিতে শ্রী গনেশ-এর শুঁড় সোজাসুজি উপরের দিকে থাকে। এই রূপটিকে সিদ্ধি বিনায়ক বা শক্তিমান শ্রী গনেশ বলা হয়।
- প্রতীকী অর্থ: সোজাসুজি শুঁড় সুষুম্না নাড়ি-কে নির্দেশ করে, যা শরীরের কেন্দ্রীয় শক্তি চ্যানেল এবং এটি মনের ভারসাম্য ও আধ্যাত্মিক জাগরণের প্রতীক।
- পূজার নিয়ম: এই রূপটিও গভীর আধ্যাত্মিক অনুশীলনের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি সাধারণত ধ্যানকক্ষ বা মন্দিরে স্থাপন করা হয়, কারণ এটি বস্তুগত লাভের পরিবর্তে আত্মিক উন্নতির দিকে মনোনিবেশ করতে সাহায্য করে।
- আশীর্বাদ: এই শ্রী গনেশ সিদ্ধি, সাফল্য এবং ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে দৃঢ়তা প্রদান করেন।
Ganesh Chaturthi : পার্থিব জগতে শ্রী গনেশের গজমস্তক রহস্য !
আপনার বাড়ির জন্য কোনটি সেরা?
অধিকাংশ পণ্ডিতের মতে, সাধারণ গৃহস্থালির পূজার জন্য বাম দিকে শুঁড় বাঁকানো বামামুখী শ্রী গনেশ সবচেয়ে শুভ এবং নিরাপদ পছন্দ। এই রূপটি পরিবারে শান্তি, সমৃদ্ধি ও মানসিক প্রফুল্লতা নিশ্চিত করে। যদি কেউ গভীর আধ্যাত্মিক সাধনা এবং কঠোর নিয়ম পালনে ইচ্ছুক হন, তবেই ডান দিকে শুঁড় বাঁকানো শ্রী গনেশ স্থাপন করতে পারেন। তবে উভয় ক্ষেত্রেই, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নির্মল ভক্তি ও শ্রদ্ধার সঙ্গে পূজা করা।
গণেশ চতুর্থীর এই শুভক্ষণে, ভক্তরা নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন যে, শুঁড়ের দিক কোনো অশুভ ইঙ্গিত বহন করে না। যা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ তা হলো বিশ্বাস, ভক্তি এবং উৎসবের পবিত্র সংকল্প ।