ব্যুরো নিউজ, ১২ জুলাই: ভ্রমণ প্রিয় বাঙালির পায়ের তলায় সর্ষে। কাজের ব্যস্ততার ফাঁকে এক দু দিনের ছুটি পেলেই মনটা আনচান করতে থাকে। কোথাও থেকে একটু বেড়িয়ে আসি। মূলত বেড়াতে যাওয়ার কথা মাথায় এলেই সকলেই শীতকালে ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করতে থাকেন। তবে বর্ষাকালে যদি বেড়াতে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা করার কথা বলা হয়, তাহলে প্রথমেই চিন্তা ভাবনা করতে থাকেন, কোথায় বেড়াতে যাবেন? রোদ বৃষ্টির খেলার মাঝে এমন কোন জায়গায় ঘুরতে যাবেন, যেখানে গেলে জীবনের চরম ব্যস্ততাকে দূরে সরিয়ে দু’দণ্ড প্রকৃতির কোলে নির্জন নিরিবিলিতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। একটু খুঁজে দেখুন, খুব বেশি দূরে যাওয়ার দরকার হবে না। বাংলার মধ্যেই বহু দর্শনীয় পর্যটনস্থল রয়েছে। যেখানে অন্যান্য রাজ্য শুধু নয়, বিদেশ থেকেও বহু মানুষ সেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে উপভোগ করতে আসেন।সেই জায়গাটি পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি। নামটি শুনেই হয়তো ভাববেন, সেখানে দেখার কি আছে? অবশ্যই যাওয়ার আগে পরিকল্পনা করে নিন। বর্ষায় এই বেলপাহাড়ি, কাঁকড়াঝোড় সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকায় বহু জলপ্রপাত এবং পাহাড় জঙ্গলে ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছড়িয়ে রয়েছে। সোজা কথায় বলতে গেলে, বেলপাহাড়ি কাঁকড়াঝোড় বছরের যে কোনো সময় চলে আসা যায়। তবে বর্ষায় তার রূপ অনন্য। কারণ যে সমস্ত ঝর্ণাগুলো রয়েছে, সেগুলো বর্ষার জলে একেবারে মোহময়ী হয়ে ওঠে।
এবার জেনে নেওয়া যাক বেলপাহাড়ি কিভাবে যাবেন?
হাওড়া থেকে একাধিক ট্রেনে করে আপনি ঝাড়গ্রাম পৌঁছতে পারেন। আবার ঘাটশিলায় স্টেশনে নেমেও কাঁকড়াঝোড় যেতে পারেন। সেখান থেকে বেলপাহাড়ি। সড়কপথে কলকাতা থেকে বেলপাহাড়ির দূরত্ব ২০০ কিলোমিটার প্রায়। কলকাতা থেকে সরাসরি বেলপাহাড়ির বাস পাওয়া যায়। ঝাড়্গ্রাম স্টেশন থেকে গাড়ি ভাড়া করে বেলপাহাড়ি পৌঁছে যাবেন। আর কাঁকড়াঝোড় এবং বেলপাহাড়িতে এই মুহূর্তে বহু হোম স্টে এবং হোটেল রয়েছে। নিজের পছন্দমত যেকোনো হোটেল বা হোমস্টে বুক করে নিন।
পাহাড় ডাকছে! কোথায় যাবেন বুঝে উঠতে পারছেন না? রইল একগুচ্ছ জায়গার সন্ধান
কি কি দেখবেন?
ঘাঘরা জলপ্রপাত– বর্ষার জলে ঘাঘরার সৌন্দর্য দেখার মত। পাথুরে জমির উপরে একটি গিরিখাত তৈরি হয়েছে। জলের তোড়ে পাথরের মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট গর্ত তৈরি হয়েছে। আর ঘাঘরা জলপ্রপাতের আসল সৌন্দর্য দেখতে হলে যেতে হবে বর্ষার সময়। এর আকর্ষণ একেবারে অন্যরকম।
ঢাঙ্গিকুসুম– যারাই কাঁকড়াঝোড়- বেলপাহাড়ি ঘুরতে যান, তারা কখনোই ঢাঙ্গিকুসুম মিস করেন না। এখানে পাথরের উপর দিয়ে কলকল শব্দে জল বয়ে যাচ্ছে। আর বর্ষার সময় ঢাঙ্গিকুসুমের রূপ অনন্য হয়ে ওঠে।
খাদারানী লেক– নির্জন নিরিবিলিতে প্রিয় মানুষটির হাত ধরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা এই লেকের ধারে দু দন্ড সময় কাটান। জীবনের সমস্ত ব্যস্ততা দূরে চলে যাবে। ফের এনার্জি চলে আসবে। শাল জঙ্গলে ঘেরা রয়েছে এই খাদারানী লেক। কংক্রিটের সেতু রয়েছে। জঙ্গলের মধ্যে এই হ্রদ আর অন্যদিকে ঢেউ খেলানো সবুজ প্রকৃতি। পাহাড়ের কোলে এই লেক সংলগ্ন এলাকা আপনার মন ভরিয়ে দেবে। বর্ষায় অবশ্যই খাদারানী লেকের আসল রূপ দেখতে মিস করবেন না। তবে নামটি কেন এরকম হয়েছে, সেই বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কিছু জানা যায়নি।
তারাফেনী ড্যাম– শুনেই বুঝতে পারছেন এটি একটি ড্যাম অর্থাৎ বাঁধ। সবুজ ঘেরা জঙ্গল সংলগ্ন এলাকার মধ্যেই একদম পরিষ্কার কাচের মতো স্বচ্ছ জলাধার দেখতে পাবেন। ঘাঘরা জলপ্রপাত এর কাছাকাছি পড়বে এই তারাফেনী জলাধার। শুধু মাত্র এই কটি জায়গা নয়, বেলপাহাড়ি কাঁকড়াঝোড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বর্ষায় দেখলে স্মৃতিতে রয়ে যাবে বহুদিন। তাই এক্ষুনি বাংলার এই সুন্দর জায়গায় ঘোরার জন্য পরিকল্পনা সেরে ফেলুন।