non veg temples hinduism animal sacrificial

ব্যুরো নিউজ ২৬ জুলাই ২০২৫ : সাধারণত হিন্দু ধর্মে নিরামিষ খাবার পবিত্র  হয়, এবং তাই অধিকাংশ মন্দিরে মিষ্টি, ফল বা নিরামিষ খাবারই ভোগ হিসেবে নিবেদন করা হয়। কিন্তু ভারতের বৈচিত্র্যময় ধর্মীয় ঐতিহ্যে এমন কিছু মন্দিরও আছে যেখানে দেবতাকে আমিষ খাবার, এমনকি মদও ভোগে দেওয়া হয়। শুনতে অবাক লাগলেও, এই প্রথাগুলি স্থানীয় বিশ্বাস ও রীতিনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আসুন জেনে নেওয়া যাক ভারতের এমন কিছু বিশেষ মন্দিরের কথা।

১. কামাখ্যা মন্দির, আসাম

ভারতের ৫১টি পবিত্র শক্তিপীঠের অন্যতম কামাখ্যা মন্দির আসামের মনোরম নীলাচল পাহাড়ে অবস্থিত। তন্ত্র সাধনার এক প্রধান কেন্দ্র হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিত এই মন্দিরে এক বিশেষ ঐতিহ্য প্রচলিত আছে। এখানে দেবীকে ভোগে মাংস ও মাছ নিবেদন করা হয়, যা পরে ভক্তদের মধ্যে পসাদ হিসেবে বিতরণ করা হয়। বিশ্বাস করা হয় যে এই জিনিসগুলি নিবেদন করলে দেবী প্রসন্ন হন।

২. তারাপীঠ মন্দির, পশ্চিমবঙ্গ

পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলায় অবস্থিত তারাপীঠ মন্দির মা তারার ভক্তদের কাছে সুপরিচিত। এই মন্দিরে মাছ এবং মাংসের ভোগ দেওয়া হয় এবং মদ সহ এটি ভোগ হিসেবে নিবেদন করা হয়। পরে এই ভোগ ভক্তদের মধ্যে প্রসাদ হিসেবে বিতরণ করা হয়।

Shaktipeeth : সতী ও ৫১ শক্তিপীঠ: এক শাশ্বত গাথা

৩. কাল ভৈরব মন্দির, উজ্জয়িনী

মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনীতে অবস্থিত কাল ভৈরব মন্দিরে দেবতাকে মদ ভোগ হিসেবে নিবেদন করা হয়, যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলে আসছে। ভক্তরা বিশ্বাস করেন যে ভগবান কাল ভৈরব, যিনি ভগবান শিবের এক উগ্র রূপ, সত্যিই নিবেদন করা মদ পান করেন। অবশিষ্ট মদ পরে ভক্তদের মধ্যে পবিত্র প্রসাদ হিসেবে বিতরণ করা হয়।

৪. কালীঘাট মন্দির, কলকাতা

পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় অবস্থিত কালীঘাট মন্দির ৫১টি পবিত্র শক্তিপীঠের অন্যতম এবং এর বয়স প্রায় ২০০ বছর। এখানে অনেক ভক্ত দেবী কালীকে তুষ্ট করার জন্য ছাগ বলি দেন। বলির মাংস পরে ভক্তদের মধ্যে প্রসাদ হিসেবে বিতরণ করা হয়।

৫. মুনিয়ান্দি স্বামী মন্দির, তামিলনাড়ু

তামিলনাড়ুর মাদুরাইয়ের কাছে ভাদাক্কামপট্টি গ্রামে অবস্থিত মুনিয়ান্দি স্বামী মন্দির চিকেন এবং মাটন বিরিয়ানির ভোগ নিবেদনের জন্য পরিচিত। এখানে ভগবান মুনিয়ান্দি, যাকে ভগবান শিবের একটি রূপ বলে মনে করা হয়, তাঁর পূজা করা হয়। প্রতি বছর একটি বিশেষ তিন দিনের উৎসব অনুষ্ঠিত হয় যেখানে বিরিয়ানি প্রসাদ হিসেবে পরিবেশন করা হয় এবং দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এটি উপভোগ করতে আসে।

৬. তারকুলহা দেবী মন্দির, উত্তরপ্রদেশ

উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরে অবস্থিত তারকুলহা দেবী মন্দির তার বার্ষিক খিচুড়ি মেলা এবং ভক্তদের ইচ্ছা পূরণের জন্য বিখ্যাত। চৈত্র নবরাত্রির সময় ভারত জুড়ে মানুষ এই মন্দিরে আসে। যখন তাদের ইচ্ছা পূরণ হয়, তখন তারা দেবীকে একটি ছাগল উৎসর্গ করে। সেই প্রাণীর মাংস তারপর মাটির পাত্রে রান্না করা হয় এবং ভক্তদের প্রসাদ হিসেবে দেওয়া হয়।

বেদে মাংস ভক্ষণের সমর্থন নেই – প্রমাণসহ তথ্য !

৭. পারাসিনিকাদাভু মন্দির, কেরালা

কেরালার পারাসিনিকাদাভু মন্দির ভগবান মুথাপ্পানের উদ্দেশ্যে নিবেদিত, যিনি কলিযুগে ভগবান বিষ্ণু এবং ভগবান শিব উভয়ের রূপ বলে মনে করা হয়। দক্ষিণ ভারতে মানুষ তাঁকে অত্যন্ত ভক্তি সহকারে পূজা করে। এই মন্দিরে দেবতাকে রান্না করা মাছ এবং তাড়ি (একটি স্থানীয় অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়) নিবেদন করা হয়। বিশ্বাস করা হয় যে এই নিবেদন করলে ইচ্ছা পূরণ হয়। এই প্রসাদ পরে ভক্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।

স্থান এবং জাতি নির্বিশেষে এই ভোগ প্রথা এই দেবালয়গুলিতে সুপ্রাচীন। তবে অনন্তকালের বেদে সাত্ত্বিক আহার সনাতন ধর্মী ঈশ্বরের সর্বপ্রিয়। তা সত্ত্বেও মনুষ্য জাতির নিবেদন তার উপাস্যের প্রতি – কামনা এবং বাসনার পূর্তিতে উৎসর্গ করা। প্রকৃতি এবং পশু দুই যেই ধর্মে পূজিত, কখনো ভগবান পশুপতিনাথ , কখনো মৎস্য অবতারে আবার কখনও কামধেনু রুপি গোমাতায় , সেই ধর্মের উপাসনালয়ে এইরূপ বৈচিত্র্য আঞ্চলিক রীতি রেওয়াজের সাথে সামঞ্জস্যের প্রতীক।

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর